০৮:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া উনসানে সমুদ্র সৈকতের রিসোর্ট উদ্বোধন: পর্যটনে বাজি ধরছে উত্তর কোরিয়া ওএমএস ও টিসিবি ডিলার নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব রাসেল ভাইপারের হুমকি: শহরেও ঢুকছে বিপজ্জনক সাপ! মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ ২০২৫ সালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ আইসল্যান্ড, শীর্ষ দশে সিঙ্গাপুর নৌকার বাংলাদেশ: জেলা-জেলা ঘিরে এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট বা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়? নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

ব্যাডমিন্টন: ইন্দোনেশিয়ার সোনালি ইতিহাস ও তার নায়করা

ইন্দোনেশিয়ার নাম উচ্চারিত হলেই যে ক্রীড়াটির কথা প্রথম মনে পড়ে, সেটি হলো ব্যাডমিন্টন। “ইস্তোরা সেনায়ান”-এর গর্জন, রাষ্ট্রীয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার, আর প্রত্যন্ত দ্বীপে খড়ের কোর্টে শিশুদের অনুশীলন—সব মিলিয়ে ব্যাডমিন্টন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অভিজাত্য ও লোকজ আবেগ, দুটোই। ১৯৫০-এর দশকের প্রথম বিজয় থেকে শুরু করে তৌফিক হিদায়াত-পরবর্তী আধুনিক যুগ পর্যন্ত এই দেশের “সোনালি ইতিহাস”-এর প্রধান অধ্যায় ও কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের পরিচয় গড়ে উঠেছে।

পিবিএসআই-এর জন্ম ও শিকড় (১৯৪০৫৯)

দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের বান্দুং-সুরাবায়া অঞ্চলে ব্যাডমিন্টনের বীজ রোপিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে গঠিত হয় “পারসাতুয়ান বুলুতাংকিস সেলুরুহ ইন্দোনেসিয়া” (পিবিএসআই)—যার লক্ষ্য ছিল দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে প্রতিভা খুঁজে আনা ও জাতীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা। প্রশিক্ষণ শিবির, আন্তঃপ্রদেশীয় প্রতিযোগিতা ও দাতব্য ক্লাব সংস্কৃতি—এই তিন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দ্রুতই গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মানের দল।

Thomas Cup - Wikiwand

অভিষেকেই বিশ্বজয়ের ঝলক: ১৯৫৮ সালের থমাস কাপ

পিবিএসআই-এর সংগঠিত মেধা প্রথম বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল হয় ১৯৫৮ সালে, যখন “দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন”—ফেরি সোন্নেভিলে, টান জো হক প্রমুখ—মালয়াকে ৬–৩ গেমে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম থমাস কাপ জয় করেন। অভিষেকেই বিশ্ব শিরোপা উড়িয়ে আনার এই ঘটনা গোটা জাতিকে উন্মাদনায় ভাসিয়ে তোলে।

ষাটের দশকের সাফল্য ও ইস্তোরা সেনায়ানের উন্মাদনা

জাকার্তার সদ্য নির্মিত ইস্তোরা সেনায়ান স্টেডিয়ামে ১৯৬১ সালের ফাইনালে থাইল্যান্ডকে ৬–৩ ব্যবধানে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়া শিরোপা ধরে রাখে। ইস্তোরার গ্যালারি তখনই “ইয়া-ইয়া, ইয়া-ইয়া” মন্ত্রে পরিণত হয়, যা পরবর্তী অর্ধশতাব্দী জুড়ে ইন্দোনেশীয় সমর্থনের সিগনেচার ধ্বনি। ১৯৬৪ ও ১৯৬৭-তেও শিরোপা ধরে রেখে দলটি জানিয়ে দেয়—এখন থেকে দলগত ব্যাডমিন্টনের মানদণ্ড জাকার্তাই নির্ধারণ করবে।

রেকর্ডধারী ১৪টি থমাস কাপ ও দলগত জয়যাত্রা

এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া পুরুষ দলগত থমাস কাপে রেকর্ড ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন; ফাইনাল খেলেছে ২২ বার—মাত্র একবার, ২০১২ সালে, সেমিফাইনালের বাইরে থেকে ফিরেছে। ২০২০-এর শিরোপা (কোভিড-জনিত কারণে ২০২১-এ অনুষ্ঠিত) “গরুড়া”রা তুলে ধরে প্রমাণ করে, পুরোনো দম্ভ আজও অটুট।

We Welcome The First All England Champion From Indonesia ...

প্রথম তারকা” টান জো হক ও অল-ইংল্যান্ড ১৯৫৯

এই জয়ের স্থপতিদের অন্যতম টান জো হক—ইন্দোনেশিয়ার প্রথম অল-ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৯) এবং স্বাধীন পরবর্তী ক্রীড়া-আইকন। ২০২৫-এর জুনে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

রুডি হার্তোনো: অল-ইংল্যান্ডে আটবারটানা সাতবার

রুডি হার্তোনো ১৮ বছর বয়সে অল-ইংল্যান্ড জিতে ইতিহাসের পাতা পাল্টান। ১৯৬৮-৭৪ সাল পর্যন্ত টানা সাতবার ও সব মিলিয়ে আটবার পুরুষ এককে রাজত্ব করে তিনি “ব্যাডমিন্টনের ব্রাজিলিয়ান পেলে”কে ছাপিয়ে নিজেকে গ্রহের সেরা প্রমাণ করেন। তাঁর ঝুঁকে পড়া লিপ-স্ম্যাশ এবং ঠাণ্ডা মাথার কোর্ট-কৌশল আজও কোচিং ভিডিওর পাঠ্যবস্তু।

দ্বৈত সাম্রাজ্যের সূচনা: ক্রিশ্চিয়ান হাদিনাতা থেকে ড্যাডিজ়

সত্তরের দশকে টুন-টুন/ক্রিশ্চিয়ান হাদিনাতা জুটি নিখুঁত কভারেজ ও রোলিং সার্ভ দিয়ে ‘ডাবলস-দর্শন’ পাল্টে দেন। নব্বইয়ের মাঝামাঝি মার্কিস কিডো/হেন্দ্র সেতিয়াওয়ান-এর আগ্রাসী স্টাইল ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন-সোনায় সেই দর্শনের আধুনিক রূপ ফুটে ওঠে। ২০১৩-এর পর হেন্দ্র জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ আহসানের সঙ্গে—“ড্যাডিজ়” খ্যাত এ জুটি তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমাণ করেছে, দ্বৈতে ইন্দোনেশিয়ার ধারাবাহিক উন্নতি থামেনি।

ALAN BUDIKUSUMA E SUSI SUSANTI, I “FIDANZATI D'ORO” INDONESIANI NEL BADMINTON A BARCELLONA 1992 – SportHistoria

অলিম্পিকে প্রথম সোনা: সুসি সাসান্তি ও অ্যালান বুদিকুসুমা (বার্সেলোনা ১৯৯২)

ব্যক্তিগত সাফল্যের মুকুটে সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্ন বার্সেলোনা ১৯৯২। সুসি সাসান্তি নারী এককে ও অ্যালান বুদিকুসুমা পুরুষ এককে স্বর্ণ এনে দিয়ে ইন্দোনেশিয়াকে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক উপহার দেন। সেদিন ভোরে জাতীয় সংগীত বাজতেই পুরো দেশে কেঁদে কেঁদে “মেরাহ-পুতিহ” উড়েছিল—যা পরবর্তী প্রজন্ম ‘ব্যাডমিন্টনের স্বাধীনতা দিবস’ বলে আখ্যা দেয়।

মিস্টার ব্যাকহ্যান্ড” তৌফিক হিদায়াত: অ্যাথেন্স ২০০৪

সিডনি ২০০০-এর রৌপ্য হাতছাড়া হলেও অ্যাথেন্স ২০০৪-এ তৌফিক হিদায়াত তাঁর বিখ্যাত ৩০৫ কিমি/ঘণ্টা ব্যাকহ্যান্ড-স্ম্যাশ দিয়ে স্বর্ণপদক জেতেন। তাঁর শৈল্পিক ফ্লিক-সার্ভ ও আচমকা ড্রপ-ফিনিশ আজও নানা প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ।

নারী দ্বৈতে অলিম্পিক রূপকথা: গ্রেশিয়া পোলি/আপ্রিয়ানি রাহায়ু

টোকিও ২০২০ (আয়োজিত ২০২১)-এ গ্রেশিয়া পোলি ও মাত্র ২৩ বছর বয়সী আপ্রিয়ানি রাহায়ু চীনের শক্ত জুটিকে সরাসরি সেটে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম মহিলা দ্বৈত সোনা নিশ্চিত করেন। এই জয় দলীয় পুরুষদের মনে জাগিয়ে তোলে বিশ্বাস—নতুন প্রজন্মও ইতিহাস লিখতে পারে।

File:Kevin Sanjaya Sukamuljo - Marcus Fernaldi Gideon Defending All England Open Title.jpg - Wikimedia Commons

মিনিয়ন্স” যুগ: কেভিন সাঞ্জায়া ও মার্কাস গিডিয়ন

২০১৭-২১ সালজুড়ে কেভিন সাঞ্জায়া সুকামুলজো ও মার্কাস ফের্নালদি গিডিয়ন—ডাবলস কোর্টে ‘মিনিয়ন্স’—বিশ্ব নম্বর-১ র‌্যাঙ্কিং দখলে রাখেন দ্রুততম স্টাইল, পরিষ্কার নেট-কিল ও সর্বাঙ্গে লাফানো মুভমেন্ট দিয়ে। তাঁদের সাতটি সুপার সিরিজ (২০১৭) ও আটটি ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০১৮) শিরোপা আধুনিক যুগে ইন্দোনেশিয়ার ব্র্যান্ড ভ্যালু বহুগুণ বাড়িয়েছে।

প্রশিক্ষণ ক্লাব সংস্কৃতি ও ব্যাডমিন্টন ইন্ডাস্ট্রি

কুডুসের পি.বি. দজারুম, জাকার্তার ক্লাব জায়েনতি, সুপার ব্যাংকা—এই সব বেসরকারি ক্লাবই প্রতিভা খুঁজে এনে আবাসিক প্রশিক্ষণ ও পূর্ণ স্কলারশিপ দিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করে। স্পনসরশিপ-নির্ভর এ কোচিং মডেল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার কেস স্টাডি হয়ে উঠেছে।

Gregoria Mariska Claims Bronze in Badminton at Paris Olympics, Expresses Mixed Emotions - Sport En.tempo.co

সাম্প্রতিক নক্ষত্র ও পরের ধাপ

২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে গ্রেগোরিয়া মারিস্কা তুনজুং নারী এককে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন, যা সিঙ্গলসে মারিয়া ক্রিস্টিন (২০০৮)-এর পর প্রথম পদক। পুরুষ এককে অ্যান্থনি সিনিসুকা গিনটিং ও যোনাতন ক্রিস্টি কিছুটা হতাশ করলেও টপ-১০ বিশ্বর‌্যাঙ্কিং ধরে রেখেছেন। দ্বৈতে “ড্যাডিজ়”-এর অভিজ্ঞতা ও “মিনিয়ন্স”-এর গতি—দুটি ধারা মিলিয়ে ২০২৬ অল-ইংল্যান্ড ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ইন্দোনেশিয়া আবার সোনার স্বপ্ন দেখছে।

একটা খেলাই কীভাবে একটি জাতির কৌলিক পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে, ইন্দোনেশিয়ার ব্যাডমিন্টন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। থমাস কাপ জয়, অল-ইংল্যান্ডের আধিপত্য, অলিম্পিক সোনা—এসব কেবল ট্রফি নয়; এগুলো দ্বীপপুঞ্জের কোটি মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে “লাল-সাদা” পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার গর্ব। অতীতের রুডি হার্তোনো বা সুসি সাসান্তি যেমন পথ দেখিয়েছেন, বর্তমানের গিনটিং-রাহায়ু-মিনিয়ন্সও ঠিক তেমনই স্বপ্ন জাগিয়ে রাখছেন—ইন্দোনেশিয়ার ব্যাডমিন্টন মানেই শেষ নয়, সর্বদা নতুন শুরুর গল্প।

৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া

ব্যাডমিন্টন: ইন্দোনেশিয়ার সোনালি ইতিহাস ও তার নায়করা

০৪:০০:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

ইন্দোনেশিয়ার নাম উচ্চারিত হলেই যে ক্রীড়াটির কথা প্রথম মনে পড়ে, সেটি হলো ব্যাডমিন্টন। “ইস্তোরা সেনায়ান”-এর গর্জন, রাষ্ট্রীয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার, আর প্রত্যন্ত দ্বীপে খড়ের কোর্টে শিশুদের অনুশীলন—সব মিলিয়ে ব্যাডমিন্টন ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অভিজাত্য ও লোকজ আবেগ, দুটোই। ১৯৫০-এর দশকের প্রথম বিজয় থেকে শুরু করে তৌফিক হিদায়াত-পরবর্তী আধুনিক যুগ পর্যন্ত এই দেশের “সোনালি ইতিহাস”-এর প্রধান অধ্যায় ও কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের পরিচয় গড়ে উঠেছে।

পিবিএসআই-এর জন্ম ও শিকড় (১৯৪০৫৯)

দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের বান্দুং-সুরাবায়া অঞ্চলে ব্যাডমিন্টনের বীজ রোপিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সালে গঠিত হয় “পারসাতুয়ান বুলুতাংকিস সেলুরুহ ইন্দোনেসিয়া” (পিবিএসআই)—যার লক্ষ্য ছিল দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে প্রতিভা খুঁজে আনা ও জাতীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা। প্রশিক্ষণ শিবির, আন্তঃপ্রদেশীয় প্রতিযোগিতা ও দাতব্য ক্লাব সংস্কৃতি—এই তিন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দ্রুতই গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক মানের দল।

Thomas Cup - Wikiwand

অভিষেকেই বিশ্বজয়ের ঝলক: ১৯৫৮ সালের থমাস কাপ

পিবিএসআই-এর সংগঠিত মেধা প্রথম বিশ্বমঞ্চে উজ্জ্বল হয় ১৯৫৮ সালে, যখন “দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন”—ফেরি সোন্নেভিলে, টান জো হক প্রমুখ—মালয়াকে ৬–৩ গেমে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম থমাস কাপ জয় করেন। অভিষেকেই বিশ্ব শিরোপা উড়িয়ে আনার এই ঘটনা গোটা জাতিকে উন্মাদনায় ভাসিয়ে তোলে।

ষাটের দশকের সাফল্য ও ইস্তোরা সেনায়ানের উন্মাদনা

জাকার্তার সদ্য নির্মিত ইস্তোরা সেনায়ান স্টেডিয়ামে ১৯৬১ সালের ফাইনালে থাইল্যান্ডকে ৬–৩ ব্যবধানে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়া শিরোপা ধরে রাখে। ইস্তোরার গ্যালারি তখনই “ইয়া-ইয়া, ইয়া-ইয়া” মন্ত্রে পরিণত হয়, যা পরবর্তী অর্ধশতাব্দী জুড়ে ইন্দোনেশীয় সমর্থনের সিগনেচার ধ্বনি। ১৯৬৪ ও ১৯৬৭-তেও শিরোপা ধরে রেখে দলটি জানিয়ে দেয়—এখন থেকে দলগত ব্যাডমিন্টনের মানদণ্ড জাকার্তাই নির্ধারণ করবে।

রেকর্ডধারী ১৪টি থমাস কাপ ও দলগত জয়যাত্রা

এ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া পুরুষ দলগত থমাস কাপে রেকর্ড ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন; ফাইনাল খেলেছে ২২ বার—মাত্র একবার, ২০১২ সালে, সেমিফাইনালের বাইরে থেকে ফিরেছে। ২০২০-এর শিরোপা (কোভিড-জনিত কারণে ২০২১-এ অনুষ্ঠিত) “গরুড়া”রা তুলে ধরে প্রমাণ করে, পুরোনো দম্ভ আজও অটুট।

We Welcome The First All England Champion From Indonesia ...

প্রথম তারকা” টান জো হক ও অল-ইংল্যান্ড ১৯৫৯

এই জয়ের স্থপতিদের অন্যতম টান জো হক—ইন্দোনেশিয়ার প্রথম অল-ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন (১৯৫৯) এবং স্বাধীন পরবর্তী ক্রীড়া-আইকন। ২০২৫-এর জুনে তাঁর প্রয়াণে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হয়।

রুডি হার্তোনো: অল-ইংল্যান্ডে আটবারটানা সাতবার

রুডি হার্তোনো ১৮ বছর বয়সে অল-ইংল্যান্ড জিতে ইতিহাসের পাতা পাল্টান। ১৯৬৮-৭৪ সাল পর্যন্ত টানা সাতবার ও সব মিলিয়ে আটবার পুরুষ এককে রাজত্ব করে তিনি “ব্যাডমিন্টনের ব্রাজিলিয়ান পেলে”কে ছাপিয়ে নিজেকে গ্রহের সেরা প্রমাণ করেন। তাঁর ঝুঁকে পড়া লিপ-স্ম্যাশ এবং ঠাণ্ডা মাথার কোর্ট-কৌশল আজও কোচিং ভিডিওর পাঠ্যবস্তু।

দ্বৈত সাম্রাজ্যের সূচনা: ক্রিশ্চিয়ান হাদিনাতা থেকে ড্যাডিজ়

সত্তরের দশকে টুন-টুন/ক্রিশ্চিয়ান হাদিনাতা জুটি নিখুঁত কভারেজ ও রোলিং সার্ভ দিয়ে ‘ডাবলস-দর্শন’ পাল্টে দেন। নব্বইয়ের মাঝামাঝি মার্কিস কিডো/হেন্দ্র সেতিয়াওয়ান-এর আগ্রাসী স্টাইল ও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন-সোনায় সেই দর্শনের আধুনিক রূপ ফুটে ওঠে। ২০১৩-এর পর হেন্দ্র জুটি বাঁধেন মোহাম্মদ আহসানের সঙ্গে—“ড্যাডিজ়” খ্যাত এ জুটি তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমাণ করেছে, দ্বৈতে ইন্দোনেশিয়ার ধারাবাহিক উন্নতি থামেনি।

ALAN BUDIKUSUMA E SUSI SUSANTI, I “FIDANZATI D'ORO” INDONESIANI NEL BADMINTON A BARCELLONA 1992 – SportHistoria

অলিম্পিকে প্রথম সোনা: সুসি সাসান্তি ও অ্যালান বুদিকুসুমা (বার্সেলোনা ১৯৯২)

ব্যক্তিগত সাফল্যের মুকুটে সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্ন বার্সেলোনা ১৯৯২। সুসি সাসান্তি নারী এককে ও অ্যালান বুদিকুসুমা পুরুষ এককে স্বর্ণ এনে দিয়ে ইন্দোনেশিয়াকে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণপদক উপহার দেন। সেদিন ভোরে জাতীয় সংগীত বাজতেই পুরো দেশে কেঁদে কেঁদে “মেরাহ-পুতিহ” উড়েছিল—যা পরবর্তী প্রজন্ম ‘ব্যাডমিন্টনের স্বাধীনতা দিবস’ বলে আখ্যা দেয়।

মিস্টার ব্যাকহ্যান্ড” তৌফিক হিদায়াত: অ্যাথেন্স ২০০৪

সিডনি ২০০০-এর রৌপ্য হাতছাড়া হলেও অ্যাথেন্স ২০০৪-এ তৌফিক হিদায়াত তাঁর বিখ্যাত ৩০৫ কিমি/ঘণ্টা ব্যাকহ্যান্ড-স্ম্যাশ দিয়ে স্বর্ণপদক জেতেন। তাঁর শৈল্পিক ফ্লিক-সার্ভ ও আচমকা ড্রপ-ফিনিশ আজও নানা প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শ।

নারী দ্বৈতে অলিম্পিক রূপকথা: গ্রেশিয়া পোলি/আপ্রিয়ানি রাহায়ু

টোকিও ২০২০ (আয়োজিত ২০২১)-এ গ্রেশিয়া পোলি ও মাত্র ২৩ বছর বয়সী আপ্রিয়ানি রাহায়ু চীনের শক্ত জুটিকে সরাসরি সেটে হারিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রথম মহিলা দ্বৈত সোনা নিশ্চিত করেন। এই জয় দলীয় পুরুষদের মনে জাগিয়ে তোলে বিশ্বাস—নতুন প্রজন্মও ইতিহাস লিখতে পারে।

File:Kevin Sanjaya Sukamuljo - Marcus Fernaldi Gideon Defending All England Open Title.jpg - Wikimedia Commons

মিনিয়ন্স” যুগ: কেভিন সাঞ্জায়া ও মার্কাস গিডিয়ন

২০১৭-২১ সালজুড়ে কেভিন সাঞ্জায়া সুকামুলজো ও মার্কাস ফের্নালদি গিডিয়ন—ডাবলস কোর্টে ‘মিনিয়ন্স’—বিশ্ব নম্বর-১ র‌্যাঙ্কিং দখলে রাখেন দ্রুততম স্টাইল, পরিষ্কার নেট-কিল ও সর্বাঙ্গে লাফানো মুভমেন্ট দিয়ে। তাঁদের সাতটি সুপার সিরিজ (২০১৭) ও আটটি ওয়ার্ল্ড ট্যুর (২০১৮) শিরোপা আধুনিক যুগে ইন্দোনেশিয়ার ব্র্যান্ড ভ্যালু বহুগুণ বাড়িয়েছে।

প্রশিক্ষণ ক্লাব সংস্কৃতি ও ব্যাডমিন্টন ইন্ডাস্ট্রি

কুডুসের পি.বি. দজারুম, জাকার্তার ক্লাব জায়েনতি, সুপার ব্যাংকা—এই সব বেসরকারি ক্লাবই প্রতিভা খুঁজে এনে আবাসিক প্রশিক্ষণ ও পূর্ণ স্কলারশিপ দিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করে। স্পনসরশিপ-নির্ভর এ কোচিং মডেল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার কেস স্টাডি হয়ে উঠেছে।

Gregoria Mariska Claims Bronze in Badminton at Paris Olympics, Expresses Mixed Emotions - Sport En.tempo.co

সাম্প্রতিক নক্ষত্র ও পরের ধাপ

২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে গ্রেগোরিয়া মারিস্কা তুনজুং নারী এককে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন, যা সিঙ্গলসে মারিয়া ক্রিস্টিন (২০০৮)-এর পর প্রথম পদক। পুরুষ এককে অ্যান্থনি সিনিসুকা গিনটিং ও যোনাতন ক্রিস্টি কিছুটা হতাশ করলেও টপ-১০ বিশ্বর‌্যাঙ্কিং ধরে রেখেছেন। দ্বৈতে “ড্যাডিজ়”-এর অভিজ্ঞতা ও “মিনিয়ন্স”-এর গতি—দুটি ধারা মিলিয়ে ২০২৬ অল-ইংল্যান্ড ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ইন্দোনেশিয়া আবার সোনার স্বপ্ন দেখছে।

একটা খেলাই কীভাবে একটি জাতির কৌলিক পরিচয়ের অংশ হয়ে ওঠে, ইন্দোনেশিয়ার ব্যাডমিন্টন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। থমাস কাপ জয়, অল-ইংল্যান্ডের আধিপত্য, অলিম্পিক সোনা—এসব কেবল ট্রফি নয়; এগুলো দ্বীপপুঞ্জের কোটি মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে “লাল-সাদা” পতাকা উড়িয়ে দেওয়ার গর্ব। অতীতের রুডি হার্তোনো বা সুসি সাসান্তি যেমন পথ দেখিয়েছেন, বর্তমানের গিনটিং-রাহায়ু-মিনিয়ন্সও ঠিক তেমনই স্বপ্ন জাগিয়ে রাখছেন—ইন্দোনেশিয়ার ব্যাডমিন্টন মানেই শেষ নয়, সর্বদা নতুন শুরুর গল্প।