বৃষ্টি থামলেও দুর্ভোগ থামছে না
ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও আবাসিক এলাকাগুলো যেন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে রাজধানীর অনেক এলাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান, কোথাও রিকশা-সিএনজিও বন্ধ। নগরবাসী বলছেন, “এ যেন ঢাকার ‘ওয়াটারলু’—নগর ব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত পরাজয়।”
জলাবদ্ধ এলাকা: ঢাকার অর্ধেকই জলের নিচে
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বাড্ডা, রামপুরা, শ্যামলী, বাসাবো, খিলগাঁও, এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। আজিমপুরের বাসিন্দা রুমানা সুলতানা বলেন, “স্কুলে বাচ্চাকে পৌঁছাতে গিয়ে দুইবার পড়ে গেছি। এই পানি নোংরা, দুর্গন্ধময়। আমরা কি ঢাকায় বাস করি, না জলমগ্ন কোনো পুরাতন শহরে?”
অফিস ও স্কুলে পৌঁছাতে যুদ্ধ
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই যানবাহনের গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই হাঁটতে বাধ্য হন। স্কুলগামী শিশুদের কোমরপানি ভেঙে যেতে দেখা গেছে। হঠাৎ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাস বন্ধের ঘোষণা দিলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন—“আগেই জানালে তো কষ্টটা হতো না।”
ম্যানহোল উন্মুক্ত, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ঢাকার কিছু এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে রাখা হয়েছে পানি নামাতে, কিন্তু কোন সতর্কতা চিহ্ন না থাকায় এতে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দা জানান, “গত রাতে এক রিকশা উল্টে পড়েছে খোলা ম্যানহোলে। ভাগ্য ভালো—যাত্রীরা বেঁচে গেছেন।”
সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতা ও ব্যাখ্যা
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি চলমান থাকলে পানি নামানো কিছুটা সময়সাপেক্ষ। ডিএনসিসি কর্মকর্তা বলেন, “বৃষ্টির পর পানি নামতে কিছুটা সময় লাগবে, তবে পাম্প বসানো হয়েছে এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন।”
তবে নাগরিকরা বলছেন, এই ধরনের দুর্যোগে তাৎক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিবারই একই দুর্যোগ, কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দেখা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রাজধানীতে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
উপসংহার
ঢাকাবাসীর কাছে বর্ষা মানেই দুর্ভোগ, ভোগান্তি আর স্থবিরতা। শহরের জলাবদ্ধতা যেন একটি বার্ষিক পুনরাবৃত্ত নাটক—পরিবর্তন শুধু অভিনয়কারীদের মুখে। নাগরিক প্রশ্ন করছেন, “কত বছর লাগবে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে? আর কতজন ডুবে মরলে নগরপিতারা জাগবেন?”
এই বৃষ্টিতে ঢাকার বাস্তবতাই যেন ‘ওয়াটারলু’—এক নিরস্ত্র নগরের বৃষ্টির কাছে আত্মসমর্পণ।