জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল আদিবাসীদের তিনফসলী কৃষিজমিতে ইপিজেড (EPZ) স্থাপনের বিরোধিতা করে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচদফা দাবি উত্থাপন করেছে ১৪টি ভূমি ও মানবাধিকার সংগঠন। আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এই সম্মেলনে এএলআরডি (অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)-এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
দাবিগুলোর সারসংক্ষেপ
সাঁওতালদের জমির মালিকানা স্বীকৃতি
২০১৬ সালের দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পূর্বপুরুষদের জমির দাবিদার সাঁওতাল পরিবারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত মালিকানা বুঝিয়ে দিতে হবে।
আইনি ও পরিবেশগত মূল্যায়ন ছাড়া কোনো প্রকল্প নয়
ইপিজেড বা যেকোনো শিল্প প্রকল্পের জন্য সরকার কর্তৃক বাধ্যতামূলক পরিবেশগত (EIA) ও সামাজিক-অর্থনৈতিক (SIA) প্রভাব মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে করতে হবে।
প্রভাব পড়বে বিস্তীর্ণ কৃষি অঞ্চলে
শুধু বাগদা ফার্ম নয়, বরং গোটা অঞ্চলের মাটি, পানি ও কৃষির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিরূপণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
২০১৬ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিপূরণ
সাঁওতালদের ওপর চালানো আগুন ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন—শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু—তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদসহ দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনিক মিথ্যাচার ও ভয় ছড়ানো বন্ধ করতে হবে
স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ইপিজেড প্রকল্প অনুমোদনের আগেই ঘোষণা দিচ্ছেন, যা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এসব মিথ্যাচার ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টার অবসান ঘটাতে হবে।
জমির ইতিহাস ও সরকারের প্রতিশ্রুতি
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালে সাঁওতালদের ১৮৪২.৩০ একর জমি চিনিকল ও আখচাষের জন্য হুকুম দখল করা হয় এবং তা রংপুর সুগার মিলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শর্ত ছিল, কাজে না লাগলে জমি ফেরত দিতে হবে। কিন্তু ২০০৪ সালে চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও জমি ফেরত দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে আমলে সেখানে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার নতুন করে একই জমিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
২০১৬ সালের দমন-পীড়নের ভয়াবহ চিত্র
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বসতভিটায় ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। পুলিশ, চিনিকলের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারী, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে দাঙ্গাবাজদের সমন্বয়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ বাড়িঘরে আগুন দেয় ও লুটপাট চালায়। ছবি ও ভিডিও প্রমাণে পুলিশের আগুন দেওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে। গুলিতে শহীদ হন তিন সাঁওতাল, আহত হন অনেকে। পুরো ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক সরকারদলীয় এমপি আবুল কালাম আজাদ ও স্থানীয় চেয়ারম্যান শাকিল।
উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ মেনে নেওয়া যায় না
বক্তারা বলেন, উন্নয়নের নামে কৃষিজমি ধ্বংস এবং আদিবাসীদের উচ্ছেদ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের উচিত সাঁওতালদের জমির দাবি আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা।
উপস্থিত বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণ
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসসহ বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, গবেষক ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা অংশ নেন।