০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮২)

অষ্টম পরিচ্ছেদ

বৃদ্ধ এবার একটা তার দিয়ে বোটুকা-গন্ধ-ছড়ানো পাইপের মুখটা খোঁচাতে লাগল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

‘সে তো বটেই, ভালো থাকবেন না-ই বা কেন?’ তারপর একটু থেমে, যেন আমাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে এইভাবে, ফের বলল: ‘আমার শরীরটে কিন্তু ভালো যাচ্ছে না। অনিদ্রা রোগ, এই আর কি। মনের সেই আগেকার ধীরস্থির ভাবটা আর নেই কিনা। রাত্তিরে কখনও-কখনও বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরগুলোয় ঘুরপাক খাই- চারিদিক এত নিঝুম হয়ে গেছে, খালি ইঁদুরের খুটখাট ছাড়া আর কিছু শোনাই যায় না।’

খুদে-খুদে হাতের লেখায় ভরুতি একতাড়া ছোট-ছোট কাগজ দেখে আমি প্রশ্ন করলুম, ‘কী লিখছেন কাগজে?’

‘ওই আর কি, আজকালের সব ঘটনা সম্বন্ধে আমার মতামত,’ লোকটি জবাব দিল। ‘বিশ্বের পুনর্গঠন নিয়ে একটা পরিকল্পনার ছক তৈরি করছি। আমি একজন দার্শনিক কিনা, জীবনে নানা ঘটনার আনাগোনা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতশূন্য। কোনো কিছুর জন্যে অভিযোগ নেই আমার।’

বৃদ্ধ একবার উঠে চুপিচুপি জানলার দিকে তাকাল। তারপর ফের নিজের জায়গায় এসে বসল।

‘জীবনে অনেক সময় অনেক রকম হট্টগোল ওঠে, কিন্তু সত্য চিরকাল থেকে যায়। হ্যাঁ, সত্য টিকে থাকবেই চিরকাল,’ নিজের পরিকল্পনা সম্বন্ধে বোধ হয় কিছুটা উৎসাহী হয়ে উঠে বৃদ্ধ আবার বলতে শুরু করল, ‘এর আগেও দাঙ্গাহাঙ্গামা অনেক হয়েছে। পুগাচেভের বিদ্রোহ ছিল, উনিশ শো পাঁচও ছিল। এই একই ভাবে জমিদারবাড়িগুলো ভেঙেচুরে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যা ধ্বংস হয়েছিল সময়ে আবার ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো তা মাথা চাড়া দে’ উঠল, আর যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল তা ফের জোড়া লেগে গেল।’

‘কী বলতে চান আপনে? আপনে লিচ্চয় সবকিছ, সেই পুরনো ধাঁচে ফিরিয়ে লেয়ার কথা ভাবচেন না, না কি? চুবুক কিছুটা রুক্ষভাবে কথাগুলো বললেন।

সরাসরি এভাবে প্রশন করায় বৃদ্ধ কেমন যেন চুপসে গেল। মনরাখা হাসি হেসে তাড়াতাড়ি বলে উঠল:

‘না-না, সে কী কথা! কে বললে আমি তা চাই? মোটেই চাই নে। আরে, আমি না, ক্যাপটেন ভাৎস তা-ই চান। চাষীগুলো আমার কাছ থেকে যা ধার করে নিয়ে গেছে, উনি এমন কি সে সবকিছু আমাকে ফেরত দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজী হই নি। আমি চাই চাষীরা বরং একটু-আধটু খুদকংড়ো খেতে দিয়ে আমায় সাহায্য করুক আর আমার সম্পত্তি ওরা সুখেস্বচ্ছন্দে ভোগ করুক।’

এই পর্যন্ত বলে বৃদ্ধ ফের উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়াল। তারপর তাড়াতাড়ি টেবিলের কাছে ফিরে এল।

‘আরে, আরে… জল তো ফুটে গেছে দেখছি। এস, তোমরা টেবিলে এসে বস।’

দ্বিতীয়বার আর ডাকতে হল না আমাদের। রুটির টুকরোগুলো মুচমুচ করে আমাদের দাঁতের চাপে ভাঙতে লাগল, রসুনের গন্ধওয়ালা সসেজের সুঘ্রাণে আমাদের নাক হয়ে উঠল ভরপুর।

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮২)

০৮:০০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

অষ্টম পরিচ্ছেদ

বৃদ্ধ এবার একটা তার দিয়ে বোটুকা-গন্ধ-ছড়ানো পাইপের মুখটা খোঁচাতে লাগল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

‘সে তো বটেই, ভালো থাকবেন না-ই বা কেন?’ তারপর একটু থেমে, যেন আমাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে এইভাবে, ফের বলল: ‘আমার শরীরটে কিন্তু ভালো যাচ্ছে না। অনিদ্রা রোগ, এই আর কি। মনের সেই আগেকার ধীরস্থির ভাবটা আর নেই কিনা। রাত্তিরে কখনও-কখনও বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরগুলোয় ঘুরপাক খাই- চারিদিক এত নিঝুম হয়ে গেছে, খালি ইঁদুরের খুটখাট ছাড়া আর কিছু শোনাই যায় না।’

খুদে-খুদে হাতের লেখায় ভরুতি একতাড়া ছোট-ছোট কাগজ দেখে আমি প্রশ্ন করলুম, ‘কী লিখছেন কাগজে?’

‘ওই আর কি, আজকালের সব ঘটনা সম্বন্ধে আমার মতামত,’ লোকটি জবাব দিল। ‘বিশ্বের পুনর্গঠন নিয়ে একটা পরিকল্পনার ছক তৈরি করছি। আমি একজন দার্শনিক কিনা, জীবনে নানা ঘটনার আনাগোনা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পক্ষপাতশূন্য। কোনো কিছুর জন্যে অভিযোগ নেই আমার।’

বৃদ্ধ একবার উঠে চুপিচুপি জানলার দিকে তাকাল। তারপর ফের নিজের জায়গায় এসে বসল।

‘জীবনে অনেক সময় অনেক রকম হট্টগোল ওঠে, কিন্তু সত্য চিরকাল থেকে যায়। হ্যাঁ, সত্য টিকে থাকবেই চিরকাল,’ নিজের পরিকল্পনা সম্বন্ধে বোধ হয় কিছুটা উৎসাহী হয়ে উঠে বৃদ্ধ আবার বলতে শুরু করল, ‘এর আগেও দাঙ্গাহাঙ্গামা অনেক হয়েছে। পুগাচেভের বিদ্রোহ ছিল, উনিশ শো পাঁচও ছিল। এই একই ভাবে জমিদারবাড়িগুলো ভেঙেচুরে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যা ধ্বংস হয়েছিল সময়ে আবার ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো তা মাথা চাড়া দে’ উঠল, আর যা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল তা ফের জোড়া লেগে গেল।’

‘কী বলতে চান আপনে? আপনে লিচ্চয় সবকিছ, সেই পুরনো ধাঁচে ফিরিয়ে লেয়ার কথা ভাবচেন না, না কি? চুবুক কিছুটা রুক্ষভাবে কথাগুলো বললেন।

সরাসরি এভাবে প্রশন করায় বৃদ্ধ কেমন যেন চুপসে গেল। মনরাখা হাসি হেসে তাড়াতাড়ি বলে উঠল:

‘না-না, সে কী কথা! কে বললে আমি তা চাই? মোটেই চাই নে। আরে, আমি না, ক্যাপটেন ভাৎস তা-ই চান। চাষীগুলো আমার কাছ থেকে যা ধার করে নিয়ে গেছে, উনি এমন কি সে সবকিছু আমাকে ফেরত দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু আমি রাজী হই নি। আমি চাই চাষীরা বরং একটু-আধটু খুদকংড়ো খেতে দিয়ে আমায় সাহায্য করুক আর আমার সম্পত্তি ওরা সুখেস্বচ্ছন্দে ভোগ করুক।’

এই পর্যন্ত বলে বৃদ্ধ ফের উঠে গিয়ে জানলার কাছে দাঁড়াল। তারপর তাড়াতাড়ি টেবিলের কাছে ফিরে এল।

‘আরে, আরে… জল তো ফুটে গেছে দেখছি। এস, তোমরা টেবিলে এসে বস।’

দ্বিতীয়বার আর ডাকতে হল না আমাদের। রুটির টুকরোগুলো মুচমুচ করে আমাদের দাঁতের চাপে ভাঙতে লাগল, রসুনের গন্ধওয়ালা সসেজের সুঘ্রাণে আমাদের নাক হয়ে উঠল ভরপুর।