০১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামে মানববন্ধন: চালের দাম কমাতে জরুরি পদক্ষেপ দাবি

অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে জনউদ্বেগ

চালের দাম টানা বাড়তে থাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি-সংকট আরো তীব্র হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২-৫ টাকা করে বাড়তে বাড়তে বোরো মৌসুমেও কেজি-প্রতি ৮-১০ টাকা উঠে গেছে। ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের পাতে ভাতই এখন অনিশ্চিত।

মানববন্ধনের আয়োজন ও অংশগ্রহণ

৩ জুলাই ২০২৫, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে “ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও” স্লোগানে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবাদী মানববন্ধন হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান। সংহতিতে বক্তৃতা দেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাংবাদিক এম নাসিরুল হকসহ ভোক্তা, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

চালের দাম বাড়ার মূল কারণগুলো

  • বাজার নজরদারির ঘাটতি: সরকারি মনিটরিং দুর্বল, সিন্ডিকেটরা সুযোগ নিচ্ছে।
  • মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি ও করপোরেট মজুতদারি: মিলার ও বড় করপোরেট গ্রুপের অবৈধ মজুত চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
  • ধানের দামে অস্থিরতা: কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও ভোক্তাকে চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পরিসংখ্যান

  • পরিকল্পনা কমিশনের (জুন ২০২৫) তথ্যে, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের দরবৃদ্ধির অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ।
  • জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, দেশের ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন; প্রতি ১০ জনের ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগাতে পারছেন না।
  • বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাবে, ন্যূনতম পুষ্টিকর আহার নিশ্চিত করতে এখন প্রতি মাসে মাথাপিছু খরচ ৩ ০৫ ১ টাকা, যা খাদ্য-দারিদ্র্যসীমার চেয়ে ৬৯.৫ শতাংশ বেশি।

পুষ্টিনাশ ও মানসিক চাপে বিপর্যস্ত জনজীবন

খানি-র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ জানান, আয় না বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা মাছ-মাংস-সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাতের ওপর নির্ভর করছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা, শিশু-বয়স্কদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ও মানসিক চাপ বেড়েছে।

বক্তাদের প্রধান দাবিসমূহ

১. কৃষকের কাছ থেকে সরকারকে সরাসরি আরও বেশি চাল কিনতে হবে।
২. দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং চালু করতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন-বাজার-মূল্য নির্ধারণে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. টিসিবি ও ওএমএস-এর আওতা বাড়িয়ে লক্ষ্যভিত্তিক খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. মিল ও করপোরেট গ্রুপের মজুত মনিটরিং করে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, যাতে চালের দাম দ্রুত সাধ্যের মধ্যে আসে।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন—চালের দাম এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যে আরও বড় সংকট তৈরি হবে। জরুরি ও সমন্বিত সরকারি হস্তক্ষেপই সাধারণ মানুষের পাতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।

চট্টগ্রামে মানববন্ধন: চালের দাম কমাতে জরুরি পদক্ষেপ দাবি

০৬:১৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫

অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে জনউদ্বেগ

চালের দাম টানা বাড়তে থাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতির চাপ ও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি-সংকট আরো তীব্র হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২-৫ টাকা করে বাড়তে বাড়তে বোরো মৌসুমেও কেজি-প্রতি ৮-১০ টাকা উঠে গেছে। ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের পাতে ভাতই এখন অনিশ্চিত।

মানববন্ধনের আয়োজন ও অংশগ্রহণ

৩ জুলাই ২০২৫, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে “ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও” স্লোগানে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), প্রাণ ও আইএসডিই বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবাদী মানববন্ধন হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান। সংহতিতে বক্তৃতা দেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাংবাদিক এম নাসিরুল হকসহ ভোক্তা, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

চালের দাম বাড়ার মূল কারণগুলো

  • বাজার নজরদারির ঘাটতি: সরকারি মনিটরিং দুর্বল, সিন্ডিকেটরা সুযোগ নিচ্ছে।
  • মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি ও করপোরেট মজুতদারি: মিলার ও বড় করপোরেট গ্রুপের অবৈধ মজুত চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে।
  • ধানের দামে অস্থিরতা: কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও ভোক্তাকে চড়া দামে চাল কিনতে হচ্ছে।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার পরিসংখ্যান

  • পরিকল্পনা কমিশনের (জুন ২০২৫) তথ্যে, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের দরবৃদ্ধির অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ।
  • জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, দেশের ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন; প্রতি ১০ জনের ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগাতে পারছেন না।
  • বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাবে, ন্যূনতম পুষ্টিকর আহার নিশ্চিত করতে এখন প্রতি মাসে মাথাপিছু খরচ ৩ ০৫ ১ টাকা, যা খাদ্য-দারিদ্র্যসীমার চেয়ে ৬৯.৫ শতাংশ বেশি।

পুষ্টিনাশ ও মানসিক চাপে বিপর্যস্ত জনজীবন

খানি-র সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ জানান, আয় না বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা মাছ-মাংস-সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাতের ওপর নির্ভর করছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা, শিশু-বয়স্কদের স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ও মানসিক চাপ বেড়েছে।

বক্তাদের প্রধান দাবিসমূহ

১. কৃষকের কাছ থেকে সরকারকে সরাসরি আরও বেশি চাল কিনতে হবে।
২. দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং চালু করতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন-বাজার-মূল্য নির্ধারণে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. টিসিবি ও ওএমএস-এর আওতা বাড়িয়ে লক্ষ্যভিত্তিক খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. মিল ও করপোরেট গ্রুপের মজুত মনিটরিং করে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, যাতে চালের দাম দ্রুত সাধ্যের মধ্যে আসে।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন—চালের দাম এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যে আরও বড় সংকট তৈরি হবে। জরুরি ও সমন্বিত সরকারি হস্তক্ষেপই সাধারণ মানুষের পাতে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।