‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টার এবং ‘হোলি আর্টিজান বর্ষপূর্তি’র আনুষ্ঠানিকতা
২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার সময় জিম্মি করা মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান৷ তাদের স্মরণে গুলশান থানায় একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অধিকাংশ থানায় হামলা, ভাংচুর ও আগুন দেওয়ার খবর আসতে থাকে। তখন গুলশান থানার ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পোস্টার লাগানো হয়।
গত ৭ মার্চ আগাম ঘোষণা দিয়ে ঢাকার পল্টন মোড়ে হিজবুত তাহ্রীর মিছিল বের করে৷ এক পর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে৷ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়৷
হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছর নিহত পুলিশের সহকারি কমিশনার রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’-এ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাতেন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তারা। এবার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের যে বাড়িটিতে বেকারিটি ছিল, সেই ৫ নম্বর বাড়িতে প্রতি বছরের ১ জুলাই ইতালি, জাপান ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা জানানোর রেওয়াজ চালু হয়েছিল। তবে এবার এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান।
হোলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড : যার দায় স্বীকার করেছিল আইএস
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২-এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় বাংলাদেশেরই পাঁচ তরুণ। গুলি চালিয়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয়, দুজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি-অ্যামেরিকান নাগরিক ছিলেন। এর বাইরে হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। সেই রাতেই এর দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। হামলায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের ছবিও প্রকাশ করে তারা৷ তবে তখনকার সরকার আইএসের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি হামলার জন্য দায়ী।

হোলি আর্টিজানে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস সংকটের অবসান ঘটে।
এখন যেমন…
২০২৪ সালের ১ জুলাই পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-র তৎকালীন প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, “হোলি আর্টিজানের ঘটনার পর জঙ্গি দমনে সফলতা এলেও এর বীজ রয়ে গেছে।”
এক বছর বাদে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, জঙ্গি দমনে এখন কোনো উদ্যোগ তাদের আছে কিনা৷ জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “জঙ্গি নাই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাববো?”
কমিশনার ‘জঙ্গি নাই’ বললেও পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) বর্তমান প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাসুদ করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “দেশে বর্তমানে জঙ্গি হামলার বড় কোনো ঝুঁকি নেই। তবে স্থিতিশীল অবস্থা ধরে রাখতে নজরদারি চলছে। অনলাইনে তৎপরতা নিয়ে নজরদারি আছে।”