০৯:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া উনসানে সমুদ্র সৈকতের রিসোর্ট উদ্বোধন: পর্যটনে বাজি ধরছে উত্তর কোরিয়া ওএমএস ও টিসিবি ডিলার নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব রাসেল ভাইপারের হুমকি: শহরেও ঢুকছে বিপজ্জনক সাপ! মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি: মহাকাশে পাঠানো হলো গাঁজা গাছের বীজ ২০২৫ সালের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ আইসল্যান্ড, শীর্ষ দশে সিঙ্গাপুর নৌকার বাংলাদেশ: জেলা-জেলা ঘিরে এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট বা পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কী? কীভাবে এটি করা হয়? নেতানিয়াহুর বিচার বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের

ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে ধানমণ্ডি ক্লাবের উত্থান, ঐতিহ্য ও অবদান

ধানমণ্ডি ক্লাবের সূচনা: একটি নাগরিক ক্রীড়াচর্চার পরিসর

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধানমণ্ডি এলাকা শুধু আবাসিক বা সাংস্কৃতিক নয়, ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠনের দিক থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই এলাকাতেই গড়ে ওঠে ‘ধানমণ্ডি ক্লাব’—একটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত সামাজিক বন্ধন ও তরুণ প্রজন্মকে মাঠমুখী করার উদ্দেশ্যে।

সত্তরের দশকের শেষভাগে ধানমণ্ডি এলাকার কয়েকজন ক্রীড়ামোদী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও তরুণ উদ্যোক্তা মিলে গড়ে তোলেন একটি সেবামূলক ও ক্রীড়া-কেন্দ্রিক ক্লাব, যার নামকরণ হয় ‘ধানমণ্ডি ক্লাব’। শুরুতে এটি ছিল একটি ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফুটবল, ক্রিকেট ও টেনিস চর্চা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবটির কাঠামোগত ও ক্রীড়াগত পরিসর বাড়তে থাকে।

সংগঠনের কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা

ধানমণ্ডি ক্লাব একটি বেসরকারি, অ-রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যেখানে ক্লাব সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। ক্লাবের নিজস্ব নিয়মনীতি, সদস্যপদ ব্যবস্থাপনা, বার্ষিক সম্মেলন ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডের রুটিন একটি সংগঠিত কাঠামোর ভেতরেই চলে।

প্রাথমিক পর্যায়ে সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক ডজন। বর্তমানে ক্লাবটির সদস্য সংখ্যা কয়েক শতাধিক, যার মধ্যে রয়েছে সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

খেলাধুলার পরিসর ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ

ধানমণ্ডি ক্লাবের সবচেয়ে বড় অবদান দেশের ক্রীড়াঙ্গনে দক্ষ খেলোয়াড় গড়ে তোলায়। বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট বিভাগে ক্লাবটির অবদান উজ্জ্বলভাবে আলোচিত। নব্বইয়ের দশকে ধানমণ্ডি ক্লাব নিয়মিতভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগে অংশগ্রহণ করে। তাদের ফুটবল দল একসময় ঢাকা মহানগর প্রথম বিভাগ লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

তাদের ক্রিকেট দলও ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট লিগে (ডিসিএল) অংশ নেয় এবং একাধিকবার সেমিফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায়। এখানে থেকে উঠে এসেছেন এমন কয়েকজন ক্রিকেটার, যারা পরে বিসিএলে খেলার সুযোগ পান। বর্তমানে অনেক তরুণ খেলোয়াড় ধানমণ্ডি ক্লাবকে এক প্রস্তুতির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

ধানমণ্ডি ক্লাব শুরু থেকেই যুব উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে আয়োজন করে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক ফুটবল ও ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয় তরুণদের। এসব কার্যক্রমে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রাক্তন খেলোয়াড় ও জাতীয় পর্যায়ের কোচরা।

একসময় এই ক্লাব থেকেই উঠে এসেছিলেন তরুণ ফুটবলার আশরাফ হোসেন, যিনি পরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ পান। তেমনই ক্রিকেটে নজর কাড়েন মেহেদী হাসান নামের এক স্পিনার, যিনি পরবর্তীতে বিসিএলের হয়ে খেলেন।

Sheikh Jamal Dhanmondi Club, Dhaka - Dhaka

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

ধানমণ্ডি ক্লাব শুধু ক্রীড়া নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক থেকেও একটি সক্রিয় সংগঠন। তারা প্রতি বছর আয়োজন করে ‘ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসব’, যেখানে নাটক, সংগীত, কবিতা পাঠ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়। ঈদ-পূজা পার্বণে ক্লাব প্রাঙ্গণে হয় পারিবারিক পিকনিক ও মেলা।

বিশেষ করে মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ক্লাবের নিজস্ব আয়োজনে থাকে কুচকাওয়াজ, শহীদদের স্মরণে আলোচনাসভা, এবং স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

ক্লাব ভবন, মাঠ ও অবকাঠামো

প্রথমদিকে ক্লাবের নিজস্ব ভবন বা মাঠ ছিল না। ধানমণ্ডি লেকসংলগ্ন উন্মুক্ত মাঠে সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চলত। পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ও সদস্যদের চাঁদায় ক্লাবের নিজস্ব ভবন গড়ে ওঠে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর রোড এলাকায়। তিনতলা ভবনটিতে রয়েছে অফিস, লাইব্রেরি, ইনডোর গেমস রুম, ছোট মিটিং রুম ও সদস্যদের বিশ্রামাগার।

পাশেই একটি প্রশস্ত খেলার মাঠ রয়েছে, যা স্থানীয় ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্লাবের নিজস্ব ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্টও চালু হয়েছে সম্প্রতি।

ক্লাবের সাফল্য ও পুরস্কার

ধানমণ্ডি ক্লাবের অর্জনের তালিকায় রয়েছে–

  • ২০০৩ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন
  • ২০০৬ ও ২০১০ সালে স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন
  • ২০১৫ সালে ‘ঢাকা সিটি ক্রীড়া সম্মাননা’ লাভ
  • ২০২১ সালে জাতীয় যুব উন্নয়ন পরিদপ্তরের স্বীকৃতি

এছাড়া ক্লাবটির অঙ্গসংগঠন ‘ধানমণ্ডি সংস্কৃতি পরিষদ’ ২০১৮ সালে ঢাকাস্থ নাট্য উৎসবে শ্রেষ্ঠ নাট্যদলের পুরস্কার পায়।

ক্লাবের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সব অর্জনের মাঝেও ক্লাবটি কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মাঠসংকট, অর্থাভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সামগ্রীর অভাব ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যাগুলো বিদ্যমান। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে–

  • আধুনিক ক্রীড়া প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন
  • নারী খেলোয়াড়দের জন্য পৃথক দল ও প্রশিক্ষণ ইউনিট
  • জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ
  • আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সফর আয়োজন

ক্লাবকে ঘিরে স্মৃতি ও আবেগ

ধানমণ্ডি ক্লাব শুধু একটি সংগঠন নয়, এক জীবন্ত স্মৃতির ভাণ্ডার। বহু তরুণ-তরুণীর কৈশোর কেটেছে এই ক্লাবের মাঠে। ক্লাবের পুরনো সদস্য শাহেদ আহমেদ বলেন, “১৯৯৫ সালে আমি এই ক্লাবে ক্রিকেট খেলতাম। সেসময়ের মাঠ, প্রশিক্ষক, আর বন্ধুদের কথা আজও মনে পড়ে। এই ক্লাব আমাকে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা শিখিয়েছে।”

অনেক প্রবাসী সদস্যও আজও ক্লাবের সদস্যপদ নবায়ন করে যান, শুধু স্মৃতির টানে।

ধানমণ্ডি ক্লাব ঢাকার নাগরিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য নিদর্শন। খেলাধুলা, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক চর্চার সমন্বয়ে একটি সংগঠন কীভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারে—তা দেখিয়েছে এই ক্লাব। প্রয়োজন শুধু অবকাঠামোগত সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা।

ধানমণ্ডি ক্লাবের ইতিহাস কেবল পুরনো গৌরব নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনারও নাম। এখন সময় এসেছে—এই সম্ভাবনাকে আরও বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার।

৫৪০ কোটি টাকার ‘মাদক অর্থ’ পাচারে অভিযুক্ত বিক্রম সিং মজিঠিয়া

ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে ধানমণ্ডি ক্লাবের উত্থান, ঐতিহ্য ও অবদান

১০:০০:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

ধানমণ্ডি ক্লাবের সূচনা: একটি নাগরিক ক্রীড়াচর্চার পরিসর

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধানমণ্ডি এলাকা শুধু আবাসিক বা সাংস্কৃতিক নয়, ক্রীড়া ও সামাজিক সংগঠনের দিক থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই এলাকাতেই গড়ে ওঠে ‘ধানমণ্ডি ক্লাব’—একটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন, যার যাত্রা শুরু হয়েছিল মূলত সামাজিক বন্ধন ও তরুণ প্রজন্মকে মাঠমুখী করার উদ্দেশ্যে।

সত্তরের দশকের শেষভাগে ধানমণ্ডি এলাকার কয়েকজন ক্রীড়ামোদী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও তরুণ উদ্যোক্তা মিলে গড়ে তোলেন একটি সেবামূলক ও ক্রীড়া-কেন্দ্রিক ক্লাব, যার নামকরণ হয় ‘ধানমণ্ডি ক্লাব’। শুরুতে এটি ছিল একটি ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ফুটবল, ক্রিকেট ও টেনিস চর্চা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবটির কাঠামোগত ও ক্রীড়াগত পরিসর বাড়তে থাকে।

সংগঠনের কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা

ধানমণ্ডি ক্লাব একটি বেসরকারি, অ-রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এর কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়, যেখানে ক্লাব সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। ক্লাবের নিজস্ব নিয়মনীতি, সদস্যপদ ব্যবস্থাপনা, বার্ষিক সম্মেলন ও ক্রীড়া কর্মকাণ্ডের রুটিন একটি সংগঠিত কাঠামোর ভেতরেই চলে।

প্রাথমিক পর্যায়ে সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক ডজন। বর্তমানে ক্লাবটির সদস্য সংখ্যা কয়েক শতাধিক, যার মধ্যে রয়েছে সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

খেলাধুলার পরিসর ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ

ধানমণ্ডি ক্লাবের সবচেয়ে বড় অবদান দেশের ক্রীড়াঙ্গনে দক্ষ খেলোয়াড় গড়ে তোলায়। বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট বিভাগে ক্লাবটির অবদান উজ্জ্বলভাবে আলোচিত। নব্বইয়ের দশকে ধানমণ্ডি ক্লাব নিয়মিতভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগে অংশগ্রহণ করে। তাদের ফুটবল দল একসময় ঢাকা মহানগর প্রথম বিভাগ লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

তাদের ক্রিকেট দলও ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রিকেট লিগে (ডিসিএল) অংশ নেয় এবং একাধিকবার সেমিফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছায়। এখানে থেকে উঠে এসেছেন এমন কয়েকজন ক্রিকেটার, যারা পরে বিসিএলে খেলার সুযোগ পান। বর্তমানে অনেক তরুণ খেলোয়াড় ধানমণ্ডি ক্লাবকে এক প্রস্তুতির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

ধানমণ্ডি ক্লাব শুরু থেকেই যুব উন্নয়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে আয়োজন করে অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সভিত্তিক ফুটবল ও ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয় তরুণদের। এসব কার্যক্রমে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রাক্তন খেলোয়াড় ও জাতীয় পর্যায়ের কোচরা।

একসময় এই ক্লাব থেকেই উঠে এসেছিলেন তরুণ ফুটবলার আশরাফ হোসেন, যিনি পরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ পান। তেমনই ক্রিকেটে নজর কাড়েন মেহেদী হাসান নামের এক স্পিনার, যিনি পরবর্তীতে বিসিএলের হয়ে খেলেন।

Sheikh Jamal Dhanmondi Club, Dhaka - Dhaka

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড

ধানমণ্ডি ক্লাব শুধু ক্রীড়া নয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক থেকেও একটি সক্রিয় সংগঠন। তারা প্রতি বছর আয়োজন করে ‘ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উৎসব’, যেখানে নাটক, সংগীত, কবিতা পাঠ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়। ঈদ-পূজা পার্বণে ক্লাব প্রাঙ্গণে হয় পারিবারিক পিকনিক ও মেলা।

বিশেষ করে মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ক্লাবের নিজস্ব আয়োজনে থাকে কুচকাওয়াজ, শহীদদের স্মরণে আলোচনাসভা, এবং স্থানীয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

ক্লাব ভবন, মাঠ ও অবকাঠামো

প্রথমদিকে ক্লাবের নিজস্ব ভবন বা মাঠ ছিল না। ধানমণ্ডি লেকসংলগ্ন উন্মুক্ত মাঠে সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড চলত। পরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সহায়তায় ও সদস্যদের চাঁদায় ক্লাবের নিজস্ব ভবন গড়ে ওঠে ধানমণ্ডি ৮ নম্বর রোড এলাকায়। তিনতলা ভবনটিতে রয়েছে অফিস, লাইব্রেরি, ইনডোর গেমস রুম, ছোট মিটিং রুম ও সদস্যদের বিশ্রামাগার।

পাশেই একটি প্রশস্ত খেলার মাঠ রয়েছে, যা স্থানীয় ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্লাবের নিজস্ব ইনডোর ব্যাডমিন্টন কোর্টও চালু হয়েছে সম্প্রতি।

ক্লাবের সাফল্য ও পুরস্কার

ধানমণ্ডি ক্লাবের অর্জনের তালিকায় রয়েছে–

  • ২০০৩ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন
  • ২০০৬ ও ২০১০ সালে স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন
  • ২০১৫ সালে ‘ঢাকা সিটি ক্রীড়া সম্মাননা’ লাভ
  • ২০২১ সালে জাতীয় যুব উন্নয়ন পরিদপ্তরের স্বীকৃতি

এছাড়া ক্লাবটির অঙ্গসংগঠন ‘ধানমণ্ডি সংস্কৃতি পরিষদ’ ২০১৮ সালে ঢাকাস্থ নাট্য উৎসবে শ্রেষ্ঠ নাট্যদলের পুরস্কার পায়।

ক্লাবের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সব অর্জনের মাঝেও ক্লাবটি কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মাঠসংকট, অর্থাভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সামগ্রীর অভাব ও প্রতিভাবান খেলোয়াড় ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যাগুলো বিদ্যমান। তবে ক্লাব কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে–

  • আধুনিক ক্রীড়া প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন
  • নারী খেলোয়াড়দের জন্য পৃথক দল ও প্রশিক্ষণ ইউনিট
  • জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ
  • আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সফর আয়োজন

ক্লাবকে ঘিরে স্মৃতি ও আবেগ

ধানমণ্ডি ক্লাব শুধু একটি সংগঠন নয়, এক জীবন্ত স্মৃতির ভাণ্ডার। বহু তরুণ-তরুণীর কৈশোর কেটেছে এই ক্লাবের মাঠে। ক্লাবের পুরনো সদস্য শাহেদ আহমেদ বলেন, “১৯৯৫ সালে আমি এই ক্লাবে ক্রিকেট খেলতাম। সেসময়ের মাঠ, প্রশিক্ষক, আর বন্ধুদের কথা আজও মনে পড়ে। এই ক্লাব আমাকে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা শিখিয়েছে।”

অনেক প্রবাসী সদস্যও আজও ক্লাবের সদস্যপদ নবায়ন করে যান, শুধু স্মৃতির টানে।

ধানমণ্ডি ক্লাব ঢাকার নাগরিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য নিদর্শন। খেলাধুলা, সমাজকল্যাণ ও সাংস্কৃতিক চর্চার সমন্বয়ে একটি সংগঠন কীভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারে—তা দেখিয়েছে এই ক্লাব। প্রয়োজন শুধু অবকাঠামোগত সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা।

ধানমণ্ডি ক্লাবের ইতিহাস কেবল পুরনো গৌরব নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনারও নাম। এখন সময় এসেছে—এই সম্ভাবনাকে আরও বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার।