০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব

সিরিজের প্রেক্ষাপট

গলে প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ায় পাঁচ দিনের লড়াইয়ের ট্রফি নির্ভর করছে কলম্বোর সিংহলী স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের এই দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচের ফলের ওপর। প্রথম দুই দিনেই ব্যাটে-বলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা স্পষ্ট দাপট দেখিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত করেছে।

প্রথম দিন (২৫ জুন): ডিনুশা-ঝড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়

মেঘলা সকালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭১ ওভারের খেলা শেষে বাংলাদেশ থেমেছে ২২০/৮-এ। অভিষিক্ত বাঁ-হাতি স্পিনার সোনাল ডিনুশা মাত্র ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন; দুই পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডো ও অসিথা ফার্নান্ডো মিলে নেন আরও ৪ উইকেট। শাদমান ইসলামের ৪৬ ও মুশফিকুর রহিমের ৩৫ ছাড়া কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা যদিও পাঁচটি ক্যাচ ফেলে দিয়েছিল, তবু আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং আর টাইট লাইন-লেংথের কাছে ধসে পড়ে টাইগারদের ব্যাটিং।

দ্বিতীয় দিন (২৬ জুন): নিসাঙ্কা-চণ্ডিমালের নিখুঁত নির্মাণ

সকালে বাকি দুই উইকেট হারিয়ে ২৪৭-এ গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপরই শ্রীলঙ্কার ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও লাহিরু উদারার ৮৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। উদারা ৬৫ বলে ৪০ রানে ফেরার পর অধিনায়ক দীনেশ চণ্ডিমালকে সঙ্গে নিয়ে নিসাঙ্কা গড়েন ১৯৪ রানের অপরাজিত জুটি। দিন শেষে স্কোর ২৯০/২—অপরাজিত নিসাঙ্কা ১৪৬* (২৩৮ বল, ১৮ চার) আর চণ্ডিমাল ৯৩ (১৫৩ বল)। এতে ৪৩ রানের লিড নিয়ে স্বাগতিকরা ম্যাচের লাগাম শক্তভাবেই ধরেছে।

ব্যক্তিগত নায়করা

  • পাথুম নিসাঙ্কা:নির্ভার ডিফেন্স আর সঠিক শট-বাছাইয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি; অফ-সাইডে কাভার-ড্রাইভ ও স্কয়ার-কাটে অনায়াসে ১৮টি চার।
    • দীনেশ চণ্ডিমাল: অভিজ্ঞতার ছাপ—স্বাভাবিক স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে ৯৩ রানে অপরাজিত; স্পিনের বিরুদ্ধে ডাউন-দ্য-ট্র্যাকে আক্রমণে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।
    • সোনাল ডিনুশা: অভিষেকেই পাঁচ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে দিনের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
    • তাইজুল ইসলাম: স্পিন ট্র্যাপে একমাত্র সফল বাংলাদেশি; ৩২-৫-৯০-১ বোলিং ফিগার হলেও ধারাবাহিক লাইন-লেংথে চাপ তৈরি রেখেছেন।

পিচ ও কন্ডিশন: যে দিকে ফিরছে ম্যাচ

এসএসসি পিচের উপরের স্তরে সামান্য ঘাস থাকলেও দ্বিতীয় দিনেই ফাটলের রেখা স্পষ্ট। বোলারদের জন্য সকালে হালকা সুইং-সিম, বিকেলে ধীরগতির টার্ন—যা চতুর্থ দিনে আরও রুক্ষ হবে বলে ধারণা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সামান্য বৃষ্টি থাকলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা শক্ত; সুতরাং ফলপ্রসূ ম্যাচই প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশ কোন পথে?

তৃতীয় সকালের নতুন বল হাতে দ্রুত ২-৩ উইকেট তুলতে না পারলে লিড ২০০-এর ঘরে পৌঁছাতে পারে, যা পিচের চরিত্র বিবেচনায় মহাসংকট ডেকে আনবে। দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত-মুশফিক-লিটনদের বড় জুটি গড়তেই হবে; টপ-অর্ডারের ‘অফ-স্টাম্পে ঢুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাট-পুল’ প্রবণতা বদলানো জরুরি। অন্যথায় চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ডিনুশা-জয়াসুরিয়াদের স্পিন ফাঁদে পড়ে আবারও ভাঙতে পারে ইনিংস।

সম্ভাব্য চিত্র

  • শ্রীলঙ্কার জয় (ইনিংস অথবা বড় ব্যবধানে):দলটির হাতে ৮ উইকেট, ব্যাটিং গভীরতাসহ লিড বাড়ানোর আদর্শ সুযোগ।
    • ড্র: আবহাওয়ার সহায়তা এবং বাংলাদেশের লড়াই-মনস্তত্ত্বই ভরসা।
    • বাংলাদেশের জয়: প্রায় অসম্ভব পথের অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের সমান।

প্রথম দুই দিনের গল্প বলছে—শ্রীলঙ্কা এসএসসি-তে কন্ডিশন পড়েছে পাঠ্যবইয়ের (Textbook) মতো, আর বাংলাদেশ ভুলে গেছে ব্যাট-বলের মৌলিক শৃঙ্খলা। সময় এখনো আছে; কিন্তু সময়ই আবার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। আজ তৃতীয় দিনে নতুন বল নিয়ে সঠিক জায়গায় আঘাত করতে না পারলে, আর পরের ইনিংসে ধৈর্যের পরীক্ষায় টিকে থাকতে না পারলে, সিরিজের ট্রফি শ্রীলঙ্কার হাতেই উঠবে—বাধা দেওয়ার মতো তেমন কিছুই তখন আর বাকি থাকবে না।

এসএসসি টেস্টের দুই দিনে শ্রীলঙ্কার রাজত্ব

০৬:৫৪:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

সিরিজের প্রেক্ষাপট

গলে প্রথম টেস্ট ড্র হওয়ায় পাঁচ দিনের লড়াইয়ের ট্রফি নির্ভর করছে কলম্বোর সিংহলী স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের এই দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচের ফলের ওপর। প্রথম দুই দিনেই ব্যাটে-বলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা স্পষ্ট দাপট দেখিয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত করেছে।

প্রথম দিন (২৫ জুন): ডিনুশা-ঝড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়

মেঘলা সকালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৭১ ওভারের খেলা শেষে বাংলাদেশ থেমেছে ২২০/৮-এ। অভিষিক্ত বাঁ-হাতি স্পিনার সোনাল ডিনুশা মাত্র ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন; দুই পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডো ও অসিথা ফার্নান্ডো মিলে নেন আরও ৪ উইকেট। শাদমান ইসলামের ৪৬ ও মুশফিকুর রহিমের ৩৫ ছাড়া কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। শ্রীলঙ্কা যদিও পাঁচটি ক্যাচ ফেলে দিয়েছিল, তবু আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং আর টাইট লাইন-লেংথের কাছে ধসে পড়ে টাইগারদের ব্যাটিং।

দ্বিতীয় দিন (২৬ জুন): নিসাঙ্কা-চণ্ডিমালের নিখুঁত নির্মাণ

সকালে বাকি দুই উইকেট হারিয়ে ২৪৭-এ গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপরই শ্রীলঙ্কার ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও লাহিরু উদারার ৮৩ রানের উদ্বোধনী জুটি। উদারা ৬৫ বলে ৪০ রানে ফেরার পর অধিনায়ক দীনেশ চণ্ডিমালকে সঙ্গে নিয়ে নিসাঙ্কা গড়েন ১৯৪ রানের অপরাজিত জুটি। দিন শেষে স্কোর ২৯০/২—অপরাজিত নিসাঙ্কা ১৪৬* (২৩৮ বল, ১৮ চার) আর চণ্ডিমাল ৯৩ (১৫৩ বল)। এতে ৪৩ রানের লিড নিয়ে স্বাগতিকরা ম্যাচের লাগাম শক্তভাবেই ধরেছে।

ব্যক্তিগত নায়করা

  • পাথুম নিসাঙ্কা:নির্ভার ডিফেন্স আর সঠিক শট-বাছাইয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি; অফ-সাইডে কাভার-ড্রাইভ ও স্কয়ার-কাটে অনায়াসে ১৮টি চার।
    • দীনেশ চণ্ডিমাল: অভিজ্ঞতার ছাপ—স্বাভাবিক স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে ৯৩ রানে অপরাজিত; স্পিনের বিরুদ্ধে ডাউন-দ্য-ট্র্যাকে আক্রমণে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।
    • সোনাল ডিনুশা: অভিষেকেই পাঁচ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে দিনের মোড় ঘুরিয়ে দেন।
    • তাইজুল ইসলাম: স্পিন ট্র্যাপে একমাত্র সফল বাংলাদেশি; ৩২-৫-৯০-১ বোলিং ফিগার হলেও ধারাবাহিক লাইন-লেংথে চাপ তৈরি রেখেছেন।

পিচ ও কন্ডিশন: যে দিকে ফিরছে ম্যাচ

এসএসসি পিচের উপরের স্তরে সামান্য ঘাস থাকলেও দ্বিতীয় দিনেই ফাটলের রেখা স্পষ্ট। বোলারদের জন্য সকালে হালকা সুইং-সিম, বিকেলে ধীরগতির টার্ন—যা চতুর্থ দিনে আরও রুক্ষ হবে বলে ধারণা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সামান্য বৃষ্টি থাকলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা শক্ত; সুতরাং ফলপ্রসূ ম্যাচই প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশ কোন পথে?

তৃতীয় সকালের নতুন বল হাতে দ্রুত ২-৩ উইকেট তুলতে না পারলে লিড ২০০-এর ঘরে পৌঁছাতে পারে, যা পিচের চরিত্র বিবেচনায় মহাসংকট ডেকে আনবে। দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত-মুশফিক-লিটনদের বড় জুটি গড়তেই হবে; টপ-অর্ডারের ‘অফ-স্টাম্পে ঢুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাট-পুল’ প্রবণতা বদলানো জরুরি। অন্যথায় চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে ডিনুশা-জয়াসুরিয়াদের স্পিন ফাঁদে পড়ে আবারও ভাঙতে পারে ইনিংস।

সম্ভাব্য চিত্র

  • শ্রীলঙ্কার জয় (ইনিংস অথবা বড় ব্যবধানে):দলটির হাতে ৮ উইকেট, ব্যাটিং গভীরতাসহ লিড বাড়ানোর আদর্শ সুযোগ।
    • ড্র: আবহাওয়ার সহায়তা এবং বাংলাদেশের লড়াই-মনস্তত্ত্বই ভরসা।
    • বাংলাদেশের জয়: প্রায় অসম্ভব পথের অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের সমান।

প্রথম দুই দিনের গল্প বলছে—শ্রীলঙ্কা এসএসসি-তে কন্ডিশন পড়েছে পাঠ্যবইয়ের (Textbook) মতো, আর বাংলাদেশ ভুলে গেছে ব্যাট-বলের মৌলিক শৃঙ্খলা। সময় এখনো আছে; কিন্তু সময়ই আবার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। আজ তৃতীয় দিনে নতুন বল নিয়ে সঠিক জায়গায় আঘাত করতে না পারলে, আর পরের ইনিংসে ধৈর্যের পরীক্ষায় টিকে থাকতে না পারলে, সিরিজের ট্রফি শ্রীলঙ্কার হাতেই উঠবে—বাধা দেওয়ার মতো তেমন কিছুই তখন আর বাকি থাকবে না।