০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
ফিলিপাইনে দুতার্তে শিবিরের প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে মার্কোসের শেষ সুযোগ অ্যালবামের ‘বোনাস কনটেন্ট’ই হলো নম্বর ওয়ান মুভি: টেলর সুইফটের নতুন পাওয়ার প্লে সরকারি তহবিল কমানোয় বিপদে ইতালির চলচ্চিত্র শিল্প —-কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা ডজার্স বনাম ব্লু জেস: ওয়ার্ল্ড সিরিজ দেখতে এখন অ্যাপ জাগল না করলে চলবে না পান্ডা কূটনীতির পরের অধ্যায়? এখন স্পটলাইটে সোনালি বানর প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৪) ভূতুড়ে কণিকা নিয়ে নতুন আবিষ্কার: যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের গবেষকদের যুগান্তকারী অন্তর্দৃষ্টি কিশোরদের এআই চ্যাট সীমাবোধে নতুন সুইচ দিল মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানসিক সান্ত্বনার নতুন সহচর নাকি কেবল যান্ত্রিক প্রতিফলন? ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি

ইরানে চীনা বিনিয়োগ অনিশ্চিত, তবু মধ্যপ্রাচ্যের আহ্বান অটুট

নতুন সংঘাত ও বাণিজ্যে ধস

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও সমুদ্রপথে অস্থিরতা চীনা ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা ও চুক্তি নস্যাৎ করে দিচ্ছে। চীনা হালকা শিল্পপণ্যের রপ্তানিকারক মিয়া ইউ এপ্রিলের ক্যান্টন মেলায় এক ইরানি ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি সেরে উৎপাদনের প্রস্তুতি নিলেও, ইরান-মার্কিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর সেই ক্রেতা ফেরতই লিখলেন না। অপরদিকে ১২ লাখেরও বেশি অনুসারী-সম্পন্ন দোইন ইনফ্লুয়েন্সার এবং ওয়েনঝৌ-র উদ্যোক্তা চাই ঝান অগাস্টে তেহরানের গাড়ি-যন্ত্রাংশ মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন নিরাপত্তা সতর্কতায়।

চীনা রপ্তানিকারকদের সরাসরি ধাক্কা

বহু রপ্তানিকারক এখন অর্ডার কমে যাওয়া, পরিবহন ব্যয় বাড়া আর দৃষ্টিগোচর অনিশ্চয়তার মুখে খরচ কমাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন—মধ্যপ্রাচ্যে চীনা সম্পদ কতটা নিরাপদ?

তেলের ওপর নির্ভরতা ও হরমুজের ঝুঁকি

চীনের অর্ধেকেরও বেশি তেল আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যার বড় অংশ ইরানের। ২০২৪ সালে ইরান-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৩.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার: চীনের রপ্তানি ৮.৯৩ বিলিয়ন, আমদানি ৪.৪৪ বিলিয়ন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ মতে, ইরানের মোট তেল রপ্তানির ৮০-৯০ শতাংশের ক্রেতাই চীন। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার হুমকি চীনের জ্বালানি নিরাপত্তাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে, পাশাপাশি বৈশ্বিক তেলের দাম, বীমা ও পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তুলবে।

ইরানে বিনিয়োগপরিকল্পনা ও বাধা

ইরানে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালে ৩২২ মিলিয়ন ডলার, মোট বিনিয়োগ ৩.৯ বিলিয়ন ছুঁয়েছে। তবু ইরানের রাজনৈতিক-ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা, ইসরায়েল-মার্কিন বিরোধ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এই বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিকল্প হিসেবে চীন মধ্য এশিয়ার রুট বিবেচনা করছে।

বৈচিত্র্যকরণের কৌশল: সৌদি আরব ও ইউএই

চীন বহু আগেই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগ ও রেনমিনবি নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বাড়িয়ে ঝুঁকি ছড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবে চীনা সৌর প্যানেল নির্মাতা জিঙ্কোসোলারের কারখানা নির্দিষ্ট সময়ে চালু হওয়ার পথে, কারণ “মধ্যপ্রাচ্য অনেক বড়”—সংঘাতপীড়িত অঞ্চল থেকে তা দূরত্বে সুরক্ষিত।

কায়রোতে চীনা উদ্যোক্তাদের নতুন সুযোগ

ঝেজিয়াংয়ের ব্যবসায়ী শে জুনপিং কায়রোতে নতুন গুদাম খুলে জানান, চীনা গাড়ি থেকে সোফার কাপড় পর্যন্ত সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে। কায়রোর নতুন প্রশাসনিক রাজধানীর বড় অংশের নির্মাণেই চীনা কোম্পানি যুক্ত; ফলে যুদ্ধোত্তর অবকাঠামো ও ভোগ্যপণ্যের বিপুল চাহিদা চীনা পুঁজির জন্য দরজা খুলে দেবে বলে তার ধারণা।

ঝুঁকি-সুযোগের সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সংঘাত চীনা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে তাৎক্ষণিক শঙ্কা সৃষ্টি করলেও, অঞ্চলটির জ্বালানি, অবকাঠামো ও ভোক্তা বাজারকে উপেক্ষা করা কঠিন। বিশ্লেষকদের মতে, চীনা কোম্পানিগুলি ঝুঁকি মেনে নিয়েই নতুন সুযোগ খুঁজবে—বিশেষত সৌদি আরব, ইউএই ও মিশরের তুলনামূলক স্থিতিশীল অংশে—যেখানে বৈশ্বিক জ্বালানি স্থানান্তর ও প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নয়ন পরিকল্পনায় চীনের সেবা ও পণ্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ফিলিপাইনে দুতার্তে শিবিরের প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে মার্কোসের শেষ সুযোগ

ইরানে চীনা বিনিয়োগ অনিশ্চিত, তবু মধ্যপ্রাচ্যের আহ্বান অটুট

০৪:০০:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

নতুন সংঘাত ও বাণিজ্যে ধস

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও সমুদ্রপথে অস্থিরতা চীনা ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা ও চুক্তি নস্যাৎ করে দিচ্ছে। চীনা হালকা শিল্পপণ্যের রপ্তানিকারক মিয়া ইউ এপ্রিলের ক্যান্টন মেলায় এক ইরানি ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি সেরে উৎপাদনের প্রস্তুতি নিলেও, ইরান-মার্কিন-ইসরায়েল সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর সেই ক্রেতা ফেরতই লিখলেন না। অপরদিকে ১২ লাখেরও বেশি অনুসারী-সম্পন্ন দোইন ইনফ্লুয়েন্সার এবং ওয়েনঝৌ-র উদ্যোক্তা চাই ঝান অগাস্টে তেহরানের গাড়ি-যন্ত্রাংশ মেলায় যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন নিরাপত্তা সতর্কতায়।

চীনা রপ্তানিকারকদের সরাসরি ধাক্কা

বহু রপ্তানিকারক এখন অর্ডার কমে যাওয়া, পরিবহন ব্যয় বাড়া আর দৃষ্টিগোচর অনিশ্চয়তার মুখে খরচ কমাচ্ছেন। তাদের প্রশ্ন—মধ্যপ্রাচ্যে চীনা সম্পদ কতটা নিরাপদ?

তেলের ওপর নির্ভরতা ও হরমুজের ঝুঁকি

চীনের অর্ধেকেরও বেশি তেল আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, যার বড় অংশ ইরানের। ২০২৪ সালে ইরান-চীন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৩.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার: চীনের রপ্তানি ৮.৯৩ বিলিয়ন, আমদানি ৪.৪৪ বিলিয়ন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ মতে, ইরানের মোট তেল রপ্তানির ৮০-৯০ শতাংশের ক্রেতাই চীন। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার হুমকি চীনের জ্বালানি নিরাপত্তাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে, পাশাপাশি বৈশ্বিক তেলের দাম, বীমা ও পরিবহন খরচ বাড়িয়ে তুলবে।

ইরানে বিনিয়োগপরিকল্পনা ও বাধা

ইরানে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৩ সালে ৩২২ মিলিয়ন ডলার, মোট বিনিয়োগ ৩.৯ বিলিয়ন ছুঁয়েছে। তবু ইরানের রাজনৈতিক-ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা, ইসরায়েল-মার্কিন বিরোধ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এই বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিকল্প হিসেবে চীন মধ্য এশিয়ার রুট বিবেচনা করছে।

বৈচিত্র্যকরণের কৌশল: সৌদি আরব ও ইউএই

চীন বহু আগেই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিনিয়োগ ও রেনমিনবি নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বাড়িয়ে ঝুঁকি ছড়িয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবে চীনা সৌর প্যানেল নির্মাতা জিঙ্কোসোলারের কারখানা নির্দিষ্ট সময়ে চালু হওয়ার পথে, কারণ “মধ্যপ্রাচ্য অনেক বড়”—সংঘাতপীড়িত অঞ্চল থেকে তা দূরত্বে সুরক্ষিত।

কায়রোতে চীনা উদ্যোক্তাদের নতুন সুযোগ

ঝেজিয়াংয়ের ব্যবসায়ী শে জুনপিং কায়রোতে নতুন গুদাম খুলে জানান, চীনা গাড়ি থেকে সোফার কাপড় পর্যন্ত সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে। কায়রোর নতুন প্রশাসনিক রাজধানীর বড় অংশের নির্মাণেই চীনা কোম্পানি যুক্ত; ফলে যুদ্ধোত্তর অবকাঠামো ও ভোগ্যপণ্যের বিপুল চাহিদা চীনা পুঁজির জন্য দরজা খুলে দেবে বলে তার ধারণা।

ঝুঁকি-সুযোগের সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সংঘাত চীনা বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে তাৎক্ষণিক শঙ্কা সৃষ্টি করলেও, অঞ্চলটির জ্বালানি, অবকাঠামো ও ভোক্তা বাজারকে উপেক্ষা করা কঠিন। বিশ্লেষকদের মতে, চীনা কোম্পানিগুলি ঝুঁকি মেনে নিয়েই নতুন সুযোগ খুঁজবে—বিশেষত সৌদি আরব, ইউএই ও মিশরের তুলনামূলক স্থিতিশীল অংশে—যেখানে বৈশ্বিক জ্বালানি স্থানান্তর ও প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নয়ন পরিকল্পনায় চীনের সেবা ও পণ্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে।