০৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমোদন, প্রকারভেদ ও নিয়মভঙ্গের শাস্তি

বাংলাদেশে নাগরিকদের জন্য ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট করা আছে। সরকারের অনুমোদিত নীতির আওতায় কিছু শর্ত পূরণ করে বৈধ উপায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া যায়। তবে এই নিয়ম ভঙ্গ করলে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান।

কীভাবে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া যায়

বাংলাদেশের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ১৮৭৮ (সংশোধিত) এবং সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন নাগরিক বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ করে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন।
নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়—

  • আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা:
    • জেলা প্রশাসকের (ডিসি অফিস) নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়।
    • আবেদনপত্রে নিজের পরিচয়, ঠিকানা, পেশা, অস্ত্রের ধরন উল্লেখ করতে হয়।
  • ন্যূনতম বয়স সীমা:
    • আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
  • নিরাপত্তার যৌক্তিক কারণ প্রদর্শন:
    • জীবন বা সম্পদের নিরাপত্তা হুমকির যথার্থ কারণ দেখাতে হয়।
    • ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, গ্রামীণ এলাকার চৌকিদার-দফাদার, বন্যপ্রাণীর ঝুঁকিতে থাকা মানুষ এই যৌক্তিকতা দেখিয়ে আবেদন করতে পারেন।

  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি:
    • বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হয়।
  • পুলিশ যাচাই (Police verification):
    • জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা আবেদনকারীর অপরাধমূলক রেকর্ড আছে কিনা তা যাচাই করে।
    • রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস থাকলে আবেদন বাতিল হয়।
  • প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের নিরাপদ ব্যবহার:
    • নিরাপদ ব্যবহারের মৌলিক নিয়ম জানা আছে কিনা, তার প্রমাণও দিতে হতে পারে।
  • ডাক্তারি সনদ (যদি প্রয়োজন হয়):
    • মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে—এটি প্রমাণ করতে ডাক্তারি সনদ প্রয়োজন হতে পারে।
  • ডিসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন:
    • জেলা প্রশাসক যাচাই শেষে আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
    • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে লাইসেন্স ইস্যু হয়।
  • নবায়ন (renewal):
    • লাইসেন্সের মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর হয়।
    • মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন আবশ্যক।

ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত অস্ত্রের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত লাইসেন্সে যেসব অস্ত্র রাখা যায়, সেগুলো নিয়মিত সরকারি নীতিমালায় বর্ণিত। অনুমোদিত অস্ত্রের ধরন মূলত নিচের মতো—

  • রিভলভার ও পিস্তল:
    • সাধারণত .32 ক্যালিবার রিভলভার বা পিস্তল সবচেয়ে প্রচলিত।
    • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয় পিস্তল নিষিদ্ধ।
  • শটগান (DBBL বা SBBL):
    • গ্রামীণ এলাকার নিরাপত্তার জন্য বহুল ব্যবহৃত।
    • দুই নলা (Double Barrel) বা এক নলা (Single Barrel) লাইসেন্স পাওয়া যায়।
  • রাইফেল:
    • নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনুমোদনপ্রাপ্ত শিকার বা পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবহার।
    • সেনা বা আধা-সামরিক স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যক্তিগত ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • .22 বোর রাইফেল:
    • সীমিত শিকারের জন্য বা প্রশিক্ষণমূলক ব্যবহারে অনুমোদিত।

সরকার স্পষ্ট করেছে যে, স্বয়ংক্রিয় বা আধা-স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ-অস্ত্রের লাইসেন্স সাধারণ নাগরিককে দেওয়া হয় না।

লাইসেন্সধারীর দায়িত্ব ও শর্তাবলী

  • অস্ত্র লাইসেন্সে উল্লিখিত ঠিকানায় নিরাপদে রাখতে হবে।
  • বাইরে নেওয়ার সময় বৈধ অনুমতি বা লাইসেন্স বহন করতে হবে।
  • লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হলে প্রশাসন বাতিলের অধিকার সংরক্ষণ করে।
  • অস্ত্র চুরি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানাতে হবে।

লাইসেন্স ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখা বা বহনের শাস্তি

বাংলাদেশের অস্ত্র আইন ১৮৭৮ ও সংশোধিত বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া বা শর্ত ভঙ্গ করে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা গুরুতর অপরাধ।

  • শাস্তি:
    • সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
    • কোনো কোনো ক্ষেত্রে আজীবন কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে।
    • অর্থদণ্ড আরোপ করা যায়।
    • উদ্ধারকৃত অস্ত্র বাজেয়াপ্ত হয়।

আইন প্রয়োগ ও নজরদারি

পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে। সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র চোরাচালান রোধে কড়া নজরদারি রাখা হয়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।

জনসচেতনতার আহ্বান

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ উপায় ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখা উচিত নয়। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং কোনো সন্দেহজনক অস্ত্র বা ব্যক্তির তথ্য পুলিশকে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, আইন মেনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবে আইন ভেঙে অবৈধ অস্ত্র রাখা সমাজের জন্য বড় হুমকি। তাই সবার প্রতি আহ্বান — আইন মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন।

১৪ জুলাই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমোদন, প্রকারভেদ ও নিয়মভঙ্গের শাস্তি

০৩:৩২:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশে নাগরিকদের জন্য ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং আইন দ্বারা সুনির্দিষ্ট করা আছে। সরকারের অনুমোদিত নীতির আওতায় কিছু শর্ত পূরণ করে বৈধ উপায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া যায়। তবে এই নিয়ম ভঙ্গ করলে রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান।

কীভাবে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া যায়

বাংলাদেশের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন ১৮৭৮ (সংশোধিত) এবং সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন নাগরিক বিশেষ কিছু শর্ত পূরণ করে ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স নিতে পারেন।
নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়—

  • আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা:
    • জেলা প্রশাসকের (ডিসি অফিস) নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়।
    • আবেদনপত্রে নিজের পরিচয়, ঠিকানা, পেশা, অস্ত্রের ধরন উল্লেখ করতে হয়।
  • ন্যূনতম বয়স সীমা:
    • আবেদনকারীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর হতে হবে।
  • নিরাপত্তার যৌক্তিক কারণ প্রদর্শন:
    • জীবন বা সম্পদের নিরাপত্তা হুমকির যথার্থ কারণ দেখাতে হয়।
    • ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, গ্রামীণ এলাকার চৌকিদার-দফাদার, বন্যপ্রাণীর ঝুঁকিতে থাকা মানুষ এই যৌক্তিকতা দেখিয়ে আবেদন করতে পারেন।

  • জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি:
    • বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হয়।
  • পুলিশ যাচাই (Police verification):
    • জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা আবেদনকারীর অপরাধমূলক রেকর্ড আছে কিনা তা যাচাই করে।
    • রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস থাকলে আবেদন বাতিল হয়।
  • প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের নিরাপদ ব্যবহার:
    • নিরাপদ ব্যবহারের মৌলিক নিয়ম জানা আছে কিনা, তার প্রমাণও দিতে হতে পারে।
  • ডাক্তারি সনদ (যদি প্রয়োজন হয়):
    • মানসিক ভারসাম্য ঠিক আছে—এটি প্রমাণ করতে ডাক্তারি সনদ প্রয়োজন হতে পারে।
  • ডিসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন:
    • জেলা প্রশাসক যাচাই শেষে আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
    • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে লাইসেন্স ইস্যু হয়।
  • নবায়ন (renewal):
    • লাইসেন্সের মেয়াদ সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর হয়।
    • মেয়াদ শেষ হলে নবায়ন আবশ্যক।

ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত অস্ত্রের প্রকারভেদ

বাংলাদেশে ব্যক্তিগত লাইসেন্সে যেসব অস্ত্র রাখা যায়, সেগুলো নিয়মিত সরকারি নীতিমালায় বর্ণিত। অনুমোদিত অস্ত্রের ধরন মূলত নিচের মতো—

  • রিভলভার ও পিস্তল:
    • সাধারণত .32 ক্যালিবার রিভলভার বা পিস্তল সবচেয়ে প্রচলিত।
    • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয় পিস্তল নিষিদ্ধ।
  • শটগান (DBBL বা SBBL):
    • গ্রামীণ এলাকার নিরাপত্তার জন্য বহুল ব্যবহৃত।
    • দুই নলা (Double Barrel) বা এক নলা (Single Barrel) লাইসেন্স পাওয়া যায়।
  • রাইফেল:
    • নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনুমোদনপ্রাপ্ত শিকার বা পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ব্যবহার।
    • সেনা বা আধা-সামরিক স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যক্তিগত ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • .22 বোর রাইফেল:
    • সীমিত শিকারের জন্য বা প্রশিক্ষণমূলক ব্যবহারে অনুমোদিত।

সরকার স্পষ্ট করেছে যে, স্বয়ংক্রিয় বা আধা-স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধ-অস্ত্রের লাইসেন্স সাধারণ নাগরিককে দেওয়া হয় না।

লাইসেন্সধারীর দায়িত্ব ও শর্তাবলী

  • অস্ত্র লাইসেন্সে উল্লিখিত ঠিকানায় নিরাপদে রাখতে হবে।
  • বাইরে নেওয়ার সময় বৈধ অনুমতি বা লাইসেন্স বহন করতে হবে।
  • লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ হলে প্রশাসন বাতিলের অধিকার সংরক্ষণ করে।
  • অস্ত্র চুরি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানাতে হবে।

লাইসেন্স ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখা বা বহনের শাস্তি

বাংলাদেশের অস্ত্র আইন ১৮৭৮ ও সংশোধিত বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া বা শর্ত ভঙ্গ করে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা গুরুতর অপরাধ।

  • শাস্তি:
    • সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
    • কোনো কোনো ক্ষেত্রে আজীবন কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে।
    • অর্থদণ্ড আরোপ করা যায়।
    • উদ্ধারকৃত অস্ত্র বাজেয়াপ্ত হয়।

আইন প্রয়োগ ও নজরদারি

পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে। সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র চোরাচালান রোধে কড়া নজরদারি রাখা হয়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।

জনসচেতনতার আহ্বান

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈধ উপায় ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র রাখা উচিত নয়। মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং কোনো সন্দেহজনক অস্ত্র বা ব্যক্তির তথ্য পুলিশকে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, আইন মেনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তবে আইন ভেঙে অবৈধ অস্ত্র রাখা সমাজের জন্য বড় হুমকি। তাই সবার প্রতি আহ্বান — আইন মেনে চলুন, নিরাপদ থাকুন।