০৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের হোটেলে হামলা ও নারীদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরালের পর যুবদল নেতা বহিষ্কার, কী জানা যাচ্ছে সালমান শাহ: চার বছরের রাজত্বে অমর এক নায়ক মব ভায়োলেন্সে দ্বৈত-সঙ্কেত দামে আগুন, ফুটিয়েও আতঙ্ক: বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকার অসহায় লড়াই হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলায় নিহত ইতালীয় নাগরিকদের পরিচয়, শোক, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এ বছর গ্রামীণ ও উপশহর এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার কেন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে? চেকিয়ার জাতীয় ব্ল্যাকআউট: তদন্তে নেমেছে কর্তৃপক্ষ ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের নগরী? সোশ্যাল মিডিয়া: এক প্রজন্মকে হতাশা, অমনোযোগ, অলসতা ও বৈষম্য’র দিকে ঠেলে দেওয়া

ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের নগরী?

প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা ২–২.৫ কোটি হলেও জনঘনত্বের দিক থেকে একে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের সমতুল্য জনঘনত্বপূর্ণ একটি নগরী বলা যায়। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০–৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঠাসাঠাসি করে বাস করে। তাই ঢাকা আসলে ৩০ কোটি মানুষের শহর নয়, তবে এর জনঘনত্ব ৩০ কোটি মানুষের দেশের সমান চাপ সৃষ্টি করে। এই বিপুল ঘনত্ব সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। কোভিড-১৯-পরবর্তী যুগে ঢাকা কি এখন স্বাস্থ্যসম্মত নগরী?

জনঘনত্বের ভয়াবহ চিত্র

ঢাকা শহর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরগুলোর একটি। পুরান ঢাকার সরু গলি থেকে শুরু করে মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর—সবখানেই বহুতল ভবনের সারি।

  • এক বর্গকিলোমিটারে ৪০–৫০ হাজার মানুষ
  • বস্তি এলাকায় প্রতি ১০ বর্গমিটারে একাধিক মানুষ গাদাগাদি করে থাকে
  • বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—সবই সীমিত

এ চিত্রটি এমন এক চাপ তৈরি করে, যা ৩০ কোটি মানুষের দেশের জনসংখ্যাঘনত্বের সমতুল্য।

সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি

এ রকম ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ সংক্রামক রোগের জন্য আদর্শ। ঢাকায় এর আগে টাইফয়েড, কলেরা, হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু এবং সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি ভয়ানক আকার ধারণ করেছিল।

গলির ভেতর ঢুকলে রোদ-বাতাস পৌঁছায় না। অপরিষ্কার নালা-নর্দমা থেকে মশার উপদ্রব বাড়ে। পানি সাপ্লাই লাইন নষ্ট হয়ে ময়লা পানি মেশে, আর পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

সব মিলিয়ে এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ।

কোভিড-১৯-পরবর্তী ঢাকা কি স্বাস্থ্যসম্মত হয়েছে?

কোভিডের সময় সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল—হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো। কিন্তু ২০২৫ সালের বাস্তবতা হলো—

  • মানুষের সচেতনতা কমে গেছে
  • বাজার, বাস, লঞ্চ—সবখানেই আগের মতো ভিড়
  • স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়েছে
  • পাবলিক হেলথ ল্যাবগুলোর সক্ষমতা আবার কমে আসছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে যে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা মজবুত করা দরকার; তবু অনেক উদ্যোগই দীর্ঘমেয়াদে টেকেনি।

নগর ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা

অপরিকল্পিত নগরায়ণ: জমি নেই, তাই আকাশছোঁয়া দালান—কিন্তু পাইপলাইন ও পয়ঃনিষ্কাশন নেই।
ফুটপাত দখল: পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই।
গাড়ির ধোঁয়া: দূষণ ক্রমেই বাড়ছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অনেক জায়গায় উন্মুক্ত ভাগাড়।

ফলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, অ্যালার্জি, চর্মরোগ এবং পানি-বাহিত রোগ লেগেই আছে।

সমাধানের দিক

  • শহরের জনসংখ্যা বিকেন্দ্রীকরণ
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা
  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা
  • স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়ানো
  • আধুনিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা

বাস্তবে আজ ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের চাপ বইছে। এই ঘনত্ব ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বারবার ছড়াবে। কোভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা শেখায়—স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা উন্নত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসম্মত ঢাকা গড়ে তুলতে নগর পরিকল্পনা, জনসচেতনতা ও সরকারি বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই নতুন করে ভাবনা জরুরি।

বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে গড়া আইএসের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার দাবি মালয়েশিয়ার পুলিশের

ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের নগরী?

০৩:৫৩:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার জনসংখ্যা ২–২.৫ কোটি হলেও জনঘনত্বের দিক থেকে একে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের সমতুল্য জনঘনত্বপূর্ণ একটি নগরী বলা যায়। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০–৫০ হাজারের বেশি মানুষ ঠাসাঠাসি করে বাস করে। তাই ঢাকা আসলে ৩০ কোটি মানুষের শহর নয়, তবে এর জনঘনত্ব ৩০ কোটি মানুষের দেশের সমান চাপ সৃষ্টি করে। এই বিপুল ঘনত্ব সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। কোভিড-১৯-পরবর্তী যুগে ঢাকা কি এখন স্বাস্থ্যসম্মত নগরী?

জনঘনত্বের ভয়াবহ চিত্র

ঢাকা শহর দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরগুলোর একটি। পুরান ঢাকার সরু গলি থেকে শুরু করে মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর—সবখানেই বহুতল ভবনের সারি।

  • এক বর্গকিলোমিটারে ৪০–৫০ হাজার মানুষ
  • বস্তি এলাকায় প্রতি ১০ বর্গমিটারে একাধিক মানুষ গাদাগাদি করে থাকে
  • বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সুবিধা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা—সবই সীমিত

এ চিত্রটি এমন এক চাপ তৈরি করে, যা ৩০ কোটি মানুষের দেশের জনসংখ্যাঘনত্বের সমতুল্য।

সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি

এ রকম ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ সংক্রামক রোগের জন্য আদর্শ। ঢাকায় এর আগে টাইফয়েড, কলেরা, হেপাটাইটিস, ডেঙ্গু এবং সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারি ভয়ানক আকার ধারণ করেছিল।

গলির ভেতর ঢুকলে রোদ-বাতাস পৌঁছায় না। অপরিষ্কার নালা-নর্দমা থেকে মশার উপদ্রব বাড়ে। পানি সাপ্লাই লাইন নষ্ট হয়ে ময়লা পানি মেশে, আর পাবলিক টয়লেটের অপ্রতুলতা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

সব মিলিয়ে এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিস্তারের জন্য অত্যন্ত সহায়ক পরিবেশ।

কোভিড-১৯-পরবর্তী ঢাকা কি স্বাস্থ্যসম্মত হয়েছে?

কোভিডের সময় সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল—হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো। কিন্তু ২০২৫ সালের বাস্তবতা হলো—

  • মানুষের সচেতনতা কমে গেছে
  • বাজার, বাস, লঞ্চ—সবখানেই আগের মতো ভিড়
  • স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থা শিথিল হয়ে পড়েছে
  • পাবলিক হেলথ ল্যাবগুলোর সক্ষমতা আবার কমে আসছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে যে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা মজবুত করা দরকার; তবু অনেক উদ্যোগই দীর্ঘমেয়াদে টেকেনি।

নগর ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা

অপরিকল্পিত নগরায়ণ: জমি নেই, তাই আকাশছোঁয়া দালান—কিন্তু পাইপলাইন ও পয়ঃনিষ্কাশন নেই।
ফুটপাত দখল: পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই।
গাড়ির ধোঁয়া: দূষণ ক্রমেই বাড়ছে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অনেক জায়গায় উন্মুক্ত ভাগাড়।

ফলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, অ্যালার্জি, চর্মরোগ এবং পানি-বাহিত রোগ লেগেই আছে।

সমাধানের দিক

  • শহরের জনসংখ্যা বিকেন্দ্রীকরণ
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা
  • বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা
  • স্বাস্থ্য-সচেতনতা বাড়ানো
  • আধুনিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা

বাস্তবে আজ ঢাকা জনঘনত্বের দিক থেকে ৩০ কোটি মানুষের চাপ বইছে। এই ঘনত্ব ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা না করলে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বারবার ছড়াবে। কোভিড-১৯-এর অভিজ্ঞতা শেখায়—স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা উন্নত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসম্মত ঢাকা গড়ে তুলতে নগর পরিকল্পনা, জনসচেতনতা ও সরকারি বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই নতুন করে ভাবনা জরুরি।