০২:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

সেলিব্রিটি বুক ক্লাবের গল্প

তারকাদের বইপড়া প্রচারনতুন ধারা

আজকাল মনে হয় প্রায় সব সেলিব্রিটি নিজের নামে একটা বই ক্লাব খুলতে চান। ধনী আর বিখ্যাতদের মধ্যে এটা ঠিক ততটাই সাধারণ হয়ে গেছে, যতটা ব্যক্তিগত জেট, গোপনীয়তা চুক্তি বা ওজেমপিক ব্যবহার। অভিনেত্রী রিজ উইদারস্পুন চান নারীরা বই পড়ুন—যা তিনি বলেন “বুক জয়” বা বই পড়ার আনন্দের শক্তি গ্রহণ। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রি চান তার সুপারিশে পাঠকরা “আলোর সন্ধান” পান। পপস্টার দুয়া লিপা চান মানুষ “বিশ্বকে নতুন চোখে” দেখুক। মডেল কাইয়া গারবার চান তৈরি করতে “রেজ রিডার”—যা আসলে কী বা কেন দরকার তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

১৯২৯ সালে শুরুবুক সোসাইটি

যদিও এখন এই বই ক্লাব কালচার সেলিব্রিটিদের জন্য স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে উঠেছে, এর শিকড় অনেক পুরনো। ব্রিটেনে প্রথম এরকম ক্লাব ছিল ‘বুক সোসাইটি’, শুরু হয় ১৯২৯ সালে। এতে হিউ ওয়ালপোল, জে. বি. প্রিস্টলি-র মতো বুদ্ধিজীবীরা বই বেছে দিতেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল “নতুন প্রতিভাবান লেখক খুঁজে বের করা” এবং মানুষকে বই কিনতে উৎসাহিত করা। আমেরিকা ও ইউরোপে তখন একই ধরনের ক্লাব গড়ে উঠতে শুরু করে, আর বই কেনার অভ্যাসে একধরনের “নীরব বিপ্লব” ঘটে—এ কথা লিখেছেন গবেষক নিকোলা উইলসন তার বই ‘রেকমেন্ডেড!’-এ।

Celebrity book clubs to follow for your next read - Harpers bazaar

সমালোচনা এবং সাফল্য

যদিও শুরু থেকেই কিছু মানুষ এই ক্লাবকে ঠাট্টা করেছে। এর বিচারকদের বলা হতো “মধ্যস্বত্বভোগী”, যাদের “গড়পড়তা রুচি” নাকি সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে আর অলসতাকে উৎসাহিত করছে। আজও এরকম সমালোচনা শোনা যায়—যেমন “সেলিব্রিটি বুক ক্লাব মাফিয়া” নাকি “গুরুত্বপূর্ণ পাঠক” আর “মূল চিন্তা” নষ্ট করে। তবু এই বুক সোসাইটি প্রায় ৪০ বছর টিকে ছিল। প্রতি মাসে একটি নতুন বই সুপারিশ করত এবং মহামন্দা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পাঠককে পথ দেখাত, বিনোদন দিত।

বই কেনার অভ্যাসে পরিবর্তন

বুক সোসাইটি শুরুর আগে ব্রিটিশদের মধ্যে এই ধারণা ছিল—এইচ.জি. ওয়েলসের ভাষায়—“নিজের বই কেনা অপচয় আর ভুল কাজ”। ধনী পাঠকেরাও প্রয়োজনীয় বই লাইব্রেরি থেকে ধার নিতেন। ক্লাব তাদের বলল, বই আসলে বিনিয়োগ, যা দিয়ে নিজের আর সন্তানের জন্য ব্যক্তিগত লাইব্রেরি তৈরি করা যায়।

The 115 Best Books of All Time | Reedsy Discovery

বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ এবং বিস্তৃত প্রভাব

সোসাইটির সদস্য সংখ্যা একসময় ১০,০০০ ছাড়িয়ে যায় ৩৩টি দেশে, এর মধ্যে ছিলেন পাঁচজন রানি পর্যন্ত। তাদের বাছাই করা বইয়ের মধ্যে মেমোয়ার, থ্রিলার, রাজনৈতিক উপন্যাস সবই ছিল। এই ক্লাব ফ্রান্সিস হ্যাকেটের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘হেনরি দ্য এইথ’ আর ইভলিন ওয়-এর উপন্যাস ‘ব্রাইডসহেড রিভিজিটেড’-এর মতো বইকে বেস্টসেলার করে তুলেছিল।

শেষ এবং উত্তরাধিকার

১৯৬৮ সালে আর্থিক সমস্যায় ক্লাব বন্ধ হয়ে যায় এবং এর রেকর্ড নষ্ট হয়ে যায়। লেখক নিকোলা উইলসন ব্যক্তিগত নথি আর প্রকাশকের আর্কাইভ খুঁটিয়ে দেখে এই ইতিহাস বের করেছেন। তার এই পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসনীয়, যদিও কখনো কখনো মনে হয় বইটি আরেকটু ছাঁটলে ভালো হতো।

JPMorgan Summer Recommended Books - Business Insider

আজকের প্রভাব

যদিও বুক সোসাইটি বন্ধ হয়ে গেছে, তার প্রভাব এখনো স্পষ্ট। সাজানো-পছন্দ করা রিডিং লিস্ট এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়। মানুষ সেলিব্রিটি, বেস্টসেলার তালিকা বা টিকটক-এর সাহিত্য প্রভাবকদের কাছ থেকেও বইয়ের সুপারিশ নেয়। বুক সোসাইটি অবশেষে সন্দেহবাদীদেরও জয় করেছিল। ১৯৩০-এর দশকের এক সদস্য মজা করে লিখেছিলেন, “তোমাকে এত ঘৃণা করি যে শেষ পর্যন্ত তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি।” এটাই তো বোধহয় আসল “রেজ রিডার”।

সেলিব্রিটি বুক ক্লাবের গল্প

১০:০০:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

তারকাদের বইপড়া প্রচারনতুন ধারা

আজকাল মনে হয় প্রায় সব সেলিব্রিটি নিজের নামে একটা বই ক্লাব খুলতে চান। ধনী আর বিখ্যাতদের মধ্যে এটা ঠিক ততটাই সাধারণ হয়ে গেছে, যতটা ব্যক্তিগত জেট, গোপনীয়তা চুক্তি বা ওজেমপিক ব্যবহার। অভিনেত্রী রিজ উইদারস্পুন চান নারীরা বই পড়ুন—যা তিনি বলেন “বুক জয়” বা বই পড়ার আনন্দের শক্তি গ্রহণ। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রি চান তার সুপারিশে পাঠকরা “আলোর সন্ধান” পান। পপস্টার দুয়া লিপা চান মানুষ “বিশ্বকে নতুন চোখে” দেখুক। মডেল কাইয়া গারবার চান তৈরি করতে “রেজ রিডার”—যা আসলে কী বা কেন দরকার তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

১৯২৯ সালে শুরুবুক সোসাইটি

যদিও এখন এই বই ক্লাব কালচার সেলিব্রিটিদের জন্য স্টাইল স্টেটমেন্ট হয়ে উঠেছে, এর শিকড় অনেক পুরনো। ব্রিটেনে প্রথম এরকম ক্লাব ছিল ‘বুক সোসাইটি’, শুরু হয় ১৯২৯ সালে। এতে হিউ ওয়ালপোল, জে. বি. প্রিস্টলি-র মতো বুদ্ধিজীবীরা বই বেছে দিতেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল “নতুন প্রতিভাবান লেখক খুঁজে বের করা” এবং মানুষকে বই কিনতে উৎসাহিত করা। আমেরিকা ও ইউরোপে তখন একই ধরনের ক্লাব গড়ে উঠতে শুরু করে, আর বই কেনার অভ্যাসে একধরনের “নীরব বিপ্লব” ঘটে—এ কথা লিখেছেন গবেষক নিকোলা উইলসন তার বই ‘রেকমেন্ডেড!’-এ।

Celebrity book clubs to follow for your next read - Harpers bazaar

সমালোচনা এবং সাফল্য

যদিও শুরু থেকেই কিছু মানুষ এই ক্লাবকে ঠাট্টা করেছে। এর বিচারকদের বলা হতো “মধ্যস্বত্বভোগী”, যাদের “গড়পড়তা রুচি” নাকি সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে আর অলসতাকে উৎসাহিত করছে। আজও এরকম সমালোচনা শোনা যায়—যেমন “সেলিব্রিটি বুক ক্লাব মাফিয়া” নাকি “গুরুত্বপূর্ণ পাঠক” আর “মূল চিন্তা” নষ্ট করে। তবু এই বুক সোসাইটি প্রায় ৪০ বছর টিকে ছিল। প্রতি মাসে একটি নতুন বই সুপারিশ করত এবং মহামন্দা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পাঠককে পথ দেখাত, বিনোদন দিত।

বই কেনার অভ্যাসে পরিবর্তন

বুক সোসাইটি শুরুর আগে ব্রিটিশদের মধ্যে এই ধারণা ছিল—এইচ.জি. ওয়েলসের ভাষায়—“নিজের বই কেনা অপচয় আর ভুল কাজ”। ধনী পাঠকেরাও প্রয়োজনীয় বই লাইব্রেরি থেকে ধার নিতেন। ক্লাব তাদের বলল, বই আসলে বিনিয়োগ, যা দিয়ে নিজের আর সন্তানের জন্য ব্যক্তিগত লাইব্রেরি তৈরি করা যায়।

The 115 Best Books of All Time | Reedsy Discovery

বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ এবং বিস্তৃত প্রভাব

সোসাইটির সদস্য সংখ্যা একসময় ১০,০০০ ছাড়িয়ে যায় ৩৩টি দেশে, এর মধ্যে ছিলেন পাঁচজন রানি পর্যন্ত। তাদের বাছাই করা বইয়ের মধ্যে মেমোয়ার, থ্রিলার, রাজনৈতিক উপন্যাস সবই ছিল। এই ক্লাব ফ্রান্সিস হ্যাকেটের ইতিহাসভিত্তিক বই ‘হেনরি দ্য এইথ’ আর ইভলিন ওয়-এর উপন্যাস ‘ব্রাইডসহেড রিভিজিটেড’-এর মতো বইকে বেস্টসেলার করে তুলেছিল।

শেষ এবং উত্তরাধিকার

১৯৬৮ সালে আর্থিক সমস্যায় ক্লাব বন্ধ হয়ে যায় এবং এর রেকর্ড নষ্ট হয়ে যায়। লেখক নিকোলা উইলসন ব্যক্তিগত নথি আর প্রকাশকের আর্কাইভ খুঁটিয়ে দেখে এই ইতিহাস বের করেছেন। তার এই পরিশ্রম সত্যিই প্রশংসনীয়, যদিও কখনো কখনো মনে হয় বইটি আরেকটু ছাঁটলে ভালো হতো।

JPMorgan Summer Recommended Books - Business Insider

আজকের প্রভাব

যদিও বুক সোসাইটি বন্ধ হয়ে গেছে, তার প্রভাব এখনো স্পষ্ট। সাজানো-পছন্দ করা রিডিং লিস্ট এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়। মানুষ সেলিব্রিটি, বেস্টসেলার তালিকা বা টিকটক-এর সাহিত্য প্রভাবকদের কাছ থেকেও বইয়ের সুপারিশ নেয়। বুক সোসাইটি অবশেষে সন্দেহবাদীদেরও জয় করেছিল। ১৯৩০-এর দশকের এক সদস্য মজা করে লিখেছিলেন, “তোমাকে এত ঘৃণা করি যে শেষ পর্যন্ত তোমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছি।” এটাই তো বোধহয় আসল “রেজ রিডার”।