১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
প্রতিবেশীদের আস্থা বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সক্রিয় সম্পর্ক জরুরি পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩২) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩১) বিরল মাটির দখলে চীনের জয়যাত্রা ও পরিবেশের চড়া খেসারত বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও কেন চীনের রেয়ার আর্থ আধিপত্য অটুট জৈবজ্বালানি বিধিমালা ও ভূরাজনৈতিক ঝাঁকুনিতে পাম ওয়েল বাজার কৃষকের স্ত্রীর পরিচয়ের ঊর্ধ্বে: লিঙ্গভিত্তিক পরিসর উন্মোচন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে ব্যর্থতার অভিযোগ, আলোচকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন হিউএনচাঙ (পর্ব-১৪২) ট্রাম্পের শুল্ক চিঠি এশিয়াকে ১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি করতে চাপ দিচ্ছে

প্রতিবেশীদের আস্থা বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সক্রিয় সম্পর্ক জরুরি

লরেন্স ওয়ং এমন এক সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব নিয়েছেনযখন সিঙ্গাপুর একাধিক কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে দুটি পরাশক্তিযুক্তরাষ্ট্র ও চীনএর সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবেপাশাপাশি মালয়-মুসলিম-প্রধান প্রতিবেশী মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আস্থাও অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। দুটি বিষয় একসঙ্গে সামাল দেওয়া মোটেই সহজ নয়।

দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা এবং বাণিজ্যপ্রযুক্তি ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। এই সংঘাতময় প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রনীতিবিশেষত প্রতিরক্ষা-নীতিতে ভারসাম্য রক্ষার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বেইজিংয়ের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্বও বাড়ছে।

সিঙ্গাপুর বহু বছর ধরে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া ও উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় বাড়িয়েছে এবং একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী চীনা সেনাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী মহড়াও করেছে।

তবে চীনের সামরিক ক্ষমতা ও আঞ্চলিক উপস্থিতি বাড়তে থাকায় সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা যদি বেইজিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েতা হলে এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে দূরগামী প্রভাব পড়তে পারে।

এখানে জাতিগত বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশই চীনা বংশোদ্ভূতফলে সিঙ্গাপুর-চীন সম্পর্কের সামান্য পরিবর্তনও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে সংবেদনশীল করে তোলে। উভয় দেশের সঙ্গে চীনের সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

লি কুয়ান ইউয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক কৌশল অনুসারেআসিয়ানের অন্যান্য দেশের তুলনায় সিঙ্গাপুর সর্বশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই ঐতিহাসিক সতর্কতা আজও প্রাসঙ্গিক।

সিঙ্গাপুর-চীন নিরাপত্তা সংযোগের ঘনিষ্ঠতা কুয়ালালামপুর ও জাকার্তার নীতিনির্ধারক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিতাঁদের উদ্বেগ নিঃশব্দ হলেও গভীর।

তাঁদের মতেচীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা ঐতিহ্যগত অংশীদারদের বিমুখ করবে এবং অঞ্চলের সূক্ষ্ম ভারসাম্য ভেঙে দিতে পারে।

মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেনতাঁদেরও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে তাঁরা উল্লেখ করেছেনসিঙ্গাপুর ২০২৪ সালে যে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ চীনে পাঠিয়ে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিলমালয়েশিয়া এমন পদক্ষেপ কল্পনাও করতে পারত না।

ইন্দোনেশিয়ার আশঙ্কা একটু ভিন্ন। তাঁদের মতেসিঙ্গাপুরের রাজনীতি ও সামরিক কাঠামোতে জাতিগত চীনা অংশগ্রহণ বেশি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে একটি আবেগনির্ভর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠতে পারেআর শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর বেইজিংয়ের উপগ্রহ’ এ পরিণত হতে পারে।

এই ধারণা সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিচয় ও স্বাধীন নীতিনির্ধারণকে হালকা করে দেখলেওতা সিঙ্গাপুরকে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংযোগে আরও সতর্ক হতে উদ্বুদ্ধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা শীঘ্রই শেষ হওয়ার নয়। এই চাপের মধ্যেও ওয়াশিংটন ও বেইজিংউভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে সিঙ্গাপুরকে অবশ্যই প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: গবেষণা ফেলোসাউথইস্ট এশিয়া প্রোগ্রামলোই ইনস্টিটিউট

প্রতিবেশীদের আস্থা বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সক্রিয় সম্পর্ক জরুরি

প্রতিবেশীদের আস্থা বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের সক্রিয় সম্পর্ক জরুরি

০৮:০০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

লরেন্স ওয়ং এমন এক সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব নিয়েছেনযখন সিঙ্গাপুর একাধিক কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে দুটি পরাশক্তিযুক্তরাষ্ট্র ও চীনএর সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবেপাশাপাশি মালয়-মুসলিম-প্রধান প্রতিবেশী মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আস্থাও অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। দুটি বিষয় একসঙ্গে সামাল দেওয়া মোটেই সহজ নয়।

দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা এবং বাণিজ্যপ্রযুক্তি ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। এই সংঘাতময় প্রেক্ষাপটে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রনীতিবিশেষত প্রতিরক্ষা-নীতিতে ভারসাম্য রক্ষার চাপ ক্রমেই বাড়ছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বেইজিংয়ের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের গুরুত্বও বাড়ছে।

সিঙ্গাপুর বহু বছর ধরে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া ও উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় বাড়িয়েছে এবং একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। ২০১৯ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়। এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর সশস্ত্র বাহিনী চীনা সেনাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী মহড়াও করেছে।

তবে চীনের সামরিক ক্ষমতা ও আঞ্চলিক উপস্থিতি বাড়তে থাকায় সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা যদি বেইজিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েতা হলে এতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে দূরগামী প্রভাব পড়তে পারে।

এখানে জাতিগত বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশই চীনা বংশোদ্ভূতফলে সিঙ্গাপুর-চীন সম্পর্কের সামান্য পরিবর্তনও মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াকে সংবেদনশীল করে তোলে। উভয় দেশের সঙ্গে চীনের সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

লি কুয়ান ইউয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক কৌশল অনুসারেআসিয়ানের অন্যান্য দেশের তুলনায় সিঙ্গাপুর সর্বশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই ঐতিহাসিক সতর্কতা আজও প্রাসঙ্গিক।

সিঙ্গাপুর-চীন নিরাপত্তা সংযোগের ঘনিষ্ঠতা কুয়ালালামপুর ও জাকার্তার নীতিনির্ধারক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছিতাঁদের উদ্বেগ নিঃশব্দ হলেও গভীর।

তাঁদের মতেচীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা ঐতিহ্যগত অংশীদারদের বিমুখ করবে এবং অঞ্চলের সূক্ষ্ম ভারসাম্য ভেঙে দিতে পারে।

মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেনতাঁদেরও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে তাঁরা উল্লেখ করেছেনসিঙ্গাপুর ২০২৪ সালে যে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ চীনে পাঠিয়ে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিলমালয়েশিয়া এমন পদক্ষেপ কল্পনাও করতে পারত না।

ইন্দোনেশিয়ার আশঙ্কা একটু ভিন্ন। তাঁদের মতেসিঙ্গাপুরের রাজনীতি ও সামরিক কাঠামোতে জাতিগত চীনা অংশগ্রহণ বেশি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে একটি আবেগনির্ভর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠতে পারেআর শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর বেইজিংয়ের উপগ্রহ’ এ পরিণত হতে পারে।

এই ধারণা সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিচয় ও স্বাধীন নীতিনির্ধারণকে হালকা করে দেখলেওতা সিঙ্গাপুরকে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংযোগে আরও সতর্ক হতে উদ্বুদ্ধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা শীঘ্রই শেষ হওয়ার নয়। এই চাপের মধ্যেও ওয়াশিংটন ও বেইজিংউভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে সিঙ্গাপুরকে অবশ্যই প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: গবেষণা ফেলোসাউথইস্ট এশিয়া প্রোগ্রামলোই ইনস্টিটিউট