অচল সিকি
এনামুল বললে, ‘একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি হবে নানামিয়া?’
এতোক্ষণ লক্ষ্য করেনি বলে চমকে উঠলো বুড়ো। ‘বহেন বাপ বহেন, পানি দিতাছি
এনামুল মুগ্ধ চোখে একটা লালচে বয়মের দিকে তাকিয়ে থাকে, শৈশবের কথা মনে পড়ে যায় আচমকা, যেন স্বপ্ন। কালিতে জুবড়ানো কেৎলি, কানাভাঙা পানির কলসি, ঘামাচিওলা চার পাঁচটা বেঁটে বেঁটে দেশী কাচের গেলাস তার চোখের সামনে নৃত্য করে। লালচে বয়েমে ভরা বিস্কুট; এবিস্কুট, কুকিস। এই বিস্কুট তাকে দীর্ঘ অতীতের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
দু’জনেই ঢকঢক করে পানি খেলো। নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে বুড়োটা। আসবার সময় তারা এপথে আসেনি। এটা হাট, কে জানে কবে কবে বসে।
এনামুল বললে, ‘স্টেশন এখান থেকে কতোদূর?’
‘মাইল দেরেক হৈবো আঁরি।’
জেবুন্নেসা ছেলেমানুষের মতো জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা এদিকটা এমন ফাঁকা কেন, মানুষজন দেখাই যায় না।’
বুড়ো ফোকলা গালে মাড়ি চিতিয়ে শিশুর মতো ফিক করে হাসলো। তারপর সে অনেক কথাই বললে, যে কথার সব বোঝা যায় না। এ দিকটা চিরকালই এ রকম ফাঁকা। ‘শিয়ালরাজার বাড়ি’ মাঝে মাঝে অনেকেই দেখতে আসে। কেউ কেউ আবার মোটর গাড়ি নিয়েও আসে। তবে চৈত্রমাসের খরদুপুরের মাথায় কেউ আসে না।
একটা মেয়ে ছিলো বুড়োর বছর দু’য়েক আগে ওলাবিবি তাকে খেয়েছে। পেট নিয়ে অনেক জ্বালা তার। সপ্তাহে দু’বার এ-হাট বসে, যা বিক্রিপাট্টা হয় তা সপ্তাহের ঐ দু’দিনে; বাকি পাঁচটা দিন তাকে এইভাবে বসে বসে কাটাতে হয়। ঘরদোর বলতে তার এই চালা ঘরটি। এইখানেই থাকা, এইখানেই খাওয়া, এইখানেই ঘুমানো।
তার কোনো জোয়ান ছেলে আছে কিনা জেবুন্নেসা জানতে চায়। ছেলে আছে, তবে বিয়েশাদি করে কাচ্চাবাচ্চার বাপ হয়েছে তারা, তাদেরই চলে না,
বাপকে আবার কি দেখবে।