০১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

রূপালী পর্দা নাচে গানে নতুন ছিলো এক আলাদা আকর্ষন

শৈশব ও কৈশোর

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে “নতুন” নামটি এক অমলিন পরিচয়। তাঁর জন্মনাম কাজী শামসুন্নাহার। জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশে। শৈশবেই নৃত্য ও গানের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়। পরিবারের উৎসাহে মঞ্চনাটক ও স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাঁর শিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটে।

চলচ্চিত্রে পদার্পণ

নতুনের অভিনয়যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকের শেষ দিকে। তারুণ্যের উদ্দামতা, নৃত্য ও অভিনয়ের দক্ষতা তাঁকে সম্ভাবনাময় শিল্পীতে পরিণত করে। তিনি প্রথমে নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। সৌন্দর্য, সাবলীল নৃত্য ও প্রাণবন্ত সংলাপ বলার ক্ষমতা পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আজও অভিনেত্রী হওয়ার পেছনে ছুটছি: নূতন

জনপ্রিয়তা ও স্বর্ণযুগ

নতুনের প্রকৃত জনপ্রিয়তা আসে সত্তরের দশকে। একের পর এক ছবিতে তিনি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত ‘চোরাবালি’, ‘ডাকাত’, ‘অশান্তি’, ‘নাচের পুতুল’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তিনি শক্তিশালী উপস্থিতি রাখেন। এ সময়ে তিনি কখনও নায়িকা, কখনও খলনায়িকা, আবার কখনও চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে প্রমাণ করেন যে তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী।

অভিনয়শৈলী ও বৈশিষ্ট্য

নতুনের অভিনয়শৈলী ছিল সহজ, প্রাণবন্ত এবং সংলাপনির্ভর। বিশেষ করে বাঙালি গ্রামীণ নারী চরিত্রে তাঁর স্বাভাবিক রূপায়ণ দর্শককে আকৃষ্ট করত। নৃত্যনৈপুণ্য ছিল তাঁর বড় সম্পদ, যা গান-নৃত্যনির্ভর সিনেমায় তাঁকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। তিনি কখনওই একঘেয়ে নায়িকা হয়ে থাকতে চাননি; নেতিবাচক চরিত্রেও অভিনয় করে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

বাংলা সিনেমার দুর্দান্ত খলনায়িকারা, যারা সকলের ঘৃণার পাত্রী - BD Info 360

খলনায়িকার চরিত্রে নতুন দিগন্ত

নতুনের ক্যারিয়ারের বিশেষ দিক হলো খলনায়িকার চরিত্রে তাঁর উত্থান। তিনি প্রমাণ করেন যে শুধু নায়িকা হওয়াই সাফল্য নয়, খলনায়িকার চরিত্রও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। ‘চোরাবালি’ ও ‘ডাকাত’ ছবিতে তাঁর চোখের ভাষা, সংলাপ ও ভঙ্গিমা দর্শককে মুগ্ধ করে।

পরবর্তী সময়ে চরিত্রাভিনেত্রী

আশি ও নব্বই দশকে নায়িকার চরিত্র থেকে সরে এসে নতুন মা, শাশুড়ি ও সমাজপতির মতো চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এ পর্যায়ে তাঁর অভিনয় আরও পরিণত, বাস্তবসম্মত ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। চোখের অভিব্যক্তি, দেহভঙ্গি ও সংলাপ—সবকিছুই ছিল শিক্ষণীয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ প্রদান কাল

ব্যক্তিজীবন ও শিল্পীজীবনের ভারসাম্য

নতুন ব্যক্তিজীবনকে সবসময় আড়ালে রেখেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সিনেমা জগতে খুব বেশি আলোড়ন শোনা যায়নি। তিনি বরাবরই পেশাদার; নিয়মিত শুটিং, সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি সম্মান—সবকিছুই সমন্বয় করে চলেছেন।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

নতুনের জীবনে এসেছে বহু সম্মান। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে অভিনয়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীরা তাঁকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

এ দেশে নায়িকা হওয়া পাপ : নূতন

নতুনের অবদান ও উত্তরাধিকার

বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনের অবদান অনন্য। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নায়িকা, খলনায়িকা কিংবা চরিত্রাভিনেত্রী—সব ভূমিকাতেই একজন শিল্পী দর্শকের মন জয় করতে পারেন। আজকের অনেক অভিনেত্রীই নতুনকে তাঁদের প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর অভিনয় দর্শককে রোমাঞ্চিত করেছে, কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে—এটাই একজন শিল্পীর পরম সাফল্য।

শুধু নাম নয়

নতুন শুধু একটি নাম নয়, বাংলা সিনেমার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর অভিনয়জীবন বাঙালি সংস্কৃতির সমৃদ্ধ দিগচিহ্ন। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁর নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও বৈচিত্র্য থেকে অনুপ্রেরণা নেবে—এটাই তাঁর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।

রূপালী পর্দা নাচে গানে নতুন ছিলো এক আলাদা আকর্ষন

০৯:৫০:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

শৈশব ও কৈশোর

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে “নতুন” নামটি এক অমলিন পরিচয়। তাঁর জন্মনাম কাজী শামসুন্নাহার। জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশে। শৈশবেই নৃত্য ও গানের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়। পরিবারের উৎসাহে মঞ্চনাটক ও স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তাঁর শিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটে।

চলচ্চিত্রে পদার্পণ

নতুনের অভিনয়যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকের শেষ দিকে। তারুণ্যের উদ্দামতা, নৃত্য ও অভিনয়ের দক্ষতা তাঁকে সম্ভাবনাময় শিল্পীতে পরিণত করে। তিনি প্রথমে নায়িকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। সৌন্দর্য, সাবলীল নৃত্য ও প্রাণবন্ত সংলাপ বলার ক্ষমতা পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

আজও অভিনেত্রী হওয়ার পেছনে ছুটছি: নূতন

জনপ্রিয়তা ও স্বর্ণযুগ

নতুনের প্রকৃত জনপ্রিয়তা আসে সত্তরের দশকে। একের পর এক ছবিতে তিনি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত ‘চোরাবালি’, ‘ডাকাত’, ‘অশান্তি’, ‘নাচের পুতুল’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তিনি শক্তিশালী উপস্থিতি রাখেন। এ সময়ে তিনি কখনও নায়িকা, কখনও খলনায়িকা, আবার কখনও চরিত্রাভিনেত্রী হয়ে প্রমাণ করেন যে তিনি বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী।

অভিনয়শৈলী ও বৈশিষ্ট্য

নতুনের অভিনয়শৈলী ছিল সহজ, প্রাণবন্ত এবং সংলাপনির্ভর। বিশেষ করে বাঙালি গ্রামীণ নারী চরিত্রে তাঁর স্বাভাবিক রূপায়ণ দর্শককে আকৃষ্ট করত। নৃত্যনৈপুণ্য ছিল তাঁর বড় সম্পদ, যা গান-নৃত্যনির্ভর সিনেমায় তাঁকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। তিনি কখনওই একঘেয়ে নায়িকা হয়ে থাকতে চাননি; নেতিবাচক চরিত্রেও অভিনয় করে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।

বাংলা সিনেমার দুর্দান্ত খলনায়িকারা, যারা সকলের ঘৃণার পাত্রী - BD Info 360

খলনায়িকার চরিত্রে নতুন দিগন্ত

নতুনের ক্যারিয়ারের বিশেষ দিক হলো খলনায়িকার চরিত্রে তাঁর উত্থান। তিনি প্রমাণ করেন যে শুধু নায়িকা হওয়াই সাফল্য নয়, খলনায়িকার চরিত্রও শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা যায়। ‘চোরাবালি’ ও ‘ডাকাত’ ছবিতে তাঁর চোখের ভাষা, সংলাপ ও ভঙ্গিমা দর্শককে মুগ্ধ করে।

পরবর্তী সময়ে চরিত্রাভিনেত্রী

আশি ও নব্বই দশকে নায়িকার চরিত্র থেকে সরে এসে নতুন মা, শাশুড়ি ও সমাজপতির মতো চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এ পর্যায়ে তাঁর অভিনয় আরও পরিণত, বাস্তবসম্মত ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। চোখের অভিব্যক্তি, দেহভঙ্গি ও সংলাপ—সবকিছুই ছিল শিক্ষণীয়।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ প্রদান কাল

ব্যক্তিজীবন ও শিল্পীজীবনের ভারসাম্য

নতুন ব্যক্তিজীবনকে সবসময় আড়ালে রেখেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সিনেমা জগতে খুব বেশি আলোড়ন শোনা যায়নি। তিনি বরাবরই পেশাদার; নিয়মিত শুটিং, সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রতি সম্মান—সবকিছুই সমন্বয় করে চলেছেন।

সম্মাননা ও স্বীকৃতি

নতুনের জীবনে এসেছে বহু সম্মান। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে অভিনয়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীরা তাঁকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

এ দেশে নায়িকা হওয়া পাপ : নূতন

নতুনের অবদান ও উত্তরাধিকার

বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনের অবদান অনন্য। তিনি প্রমাণ করেছেন যে নায়িকা, খলনায়িকা কিংবা চরিত্রাভিনেত্রী—সব ভূমিকাতেই একজন শিল্পী দর্শকের মন জয় করতে পারেন। আজকের অনেক অভিনেত্রীই নতুনকে তাঁদের প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁর অভিনয় দর্শককে রোমাঞ্চিত করেছে, কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে—এটাই একজন শিল্পীর পরম সাফল্য।

শুধু নাম নয়

নতুন শুধু একটি নাম নয়, বাংলা সিনেমার ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তাঁর অভিনয়জীবন বাঙালি সংস্কৃতির সমৃদ্ধ দিগচিহ্ন। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা তাঁর নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও বৈচিত্র্য থেকে অনুপ্রেরণা নেবে—এটাই তাঁর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।