ঢাকায় তখন যারা নামকরা ছিলেন তারা সবাই আসতেন। এরা সবাই এসেছিলেন উত্তর ভারত থেকে।
গড়পড়া পিঠা

শিশু যখন হাঁটতে শিখত, যাতে সে সুস্থভাবে হাঁটাচলা করতে পারে, সেজন্য একটি অনুষ্ঠান ছিল গড়পড়া। সাদ উর রহমান লিখেছেন-অনুষ্ঠানের সময় শিশুর মাথায় নতুন কুলা রেখে তার উপর তৈরি পিঠে ঢালা হয়। এই পিঠা গড়িয়ে মাটিতে পড়ে বলে এর নাম গড়পড়া পিঠা। আকৃতিতে ছোট ছোট মার্বেলের মতো পুলি পিঠার অনুরূপ। চালের গুঁড়ার সাথে ঘি, চিনি, কলা, নারিকেল, মিষ্টির টুকরোসহ নানা উপাদান মিশিয়ে ভাপে সিদ্ধ করে গড়পড়া পিঠা তৈরি করা হতো।
গনি মিয়ার চা-খানা
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যখন ঢাকার নবাব আবদুল গণি (১৮৩০-১৮৯১] পাকাপোক্ত হয়ে বসেছেন, তখন আড্ডার জন্য সকালে আসর বসাতেন। খুব সম্ভব ১৮৭২ সালে তাঁর বাসভবন আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মিত হলে, বহির্ভবনে সকালে ঢাকার রইসরা জমায়েত হতেন, নবাব গণিও থাকতেন। আলাপের সঙ্গে চা পান করা হতো।

নবাব আবদুল গণি
এটি পরিচিত হয়ে ওঠে ‘গণি মিয়ার চাখানা’ নামে। উল্লেখ্য চা ছিল তখন মহার্ঘ। গণি মিয়া তার জমিদারী বেগুন বাড়িতে ৩০ একর জমিতে চা চাষ করেছিলেন। চা হয়তো সেখান থেকেই আসত। তবে, এর অন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যা উল্লেখ করেছেন হাকিম হাবিবুর রহমান।
চা-খানায় তাওয়ায়েফগণ আসতেন। তাদের পুরুষসঙ্গীরা অন্য কামরায় থাকতেন। ঢাকায় তখন যারা নামকরা ছিলেন তারা সবাই আসতেন। এরা সবাই এসেছিলেন উত্তর ভারত থেকে। যেমন, আনু, গান্নু, নোওয়াবীন। এরা ছিলেন তিন বোন।
নবাবের এস্টেট থেকে তারা ভাতা পেতেন, এদের নিজস্ব বাগানঅলা বাড়ি ছিল, এদরে মধ্যে কনিষ্ঠ নেওয়াবীন বেশ নাম করেছিলেন, আরো ছিলেন, এলাহীজান, আবেদী, পেয়ারী। “আছি বেগম সাহেবা মূলতঃ লাখনৌবাসী ছিলেন আর নৃত্য প্রদর্শনে নৈপুণ্যতা দেখাতেন। ঢাকায় এত বড় নর্তকী তাওয়ায়েফ পরবর্তীতে আর আসেনি।” এ ছাড়া ছিল ওয়াসু, বাঙালী, হীরা, ইমামী, অতুল বাঈ, কালীবাঈ ও রাজলক্ষ্মী।” ১১টা পর্যন্ত চলত আড্ডা ও আসর।
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৩৭)
মুনতাসীর মামুন 



















