একক জীবনের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে
বেইজিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক, ৩২ বছর বয়সি ট্রেসি লি বিয়ে বা সন্তান নেওয়াকে জীবনের আবশ্যিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন না। আগের প্রজন্মের মতো পরিবার গড়ে তোলার পথে না গিয়ে তিনি বেছে নিয়েছেন একা থাকার জীবন।
লি বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের জন্য খুব ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে—এতে সমাজে জন্মহার কমে যাচ্ছে। শিশুর দেখভাল, শিক্ষা খরচ, সময় ও শ্রম—সব মিলিয়ে পরিবার গড়ার চাহিদা কমছে।
প্রযুক্তির উন্নতি তার এই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যত এগোচ্ছে, লি মনে করেন, ভবিষ্যতে বিয়ের মাধ্যমে যেসব চাহিদা মেটে—যেমন আবেগগত সঙ্গ বা বৃদ্ধদের সেবা—সেগুলো এআই মেটাতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, এআই এখনই আবেগগত সঙ্গ দিতে পারে। আগামী ২০–৩০ বছরে আমাদের প্রজন্ম বৃদ্ধ হলে এমন রোবট সেবা সুলভ ও সহজলভ্য হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাই আমি চাই, সেবা প্রদানকারী রোবটের উন্নয়ন আরও দ্রুত হোক।
জনসংখ্যা হ্রাসে এআই-এর দায়
চীনের জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য অনেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দায়ী করছেন। কারণ এটি মানুষের যেসব ভূমিকা ছিল—যেমন আবেগের সঙ্গ দেওয়া বা বৃদ্ধদের যত্ন—সেগুলো নিজেই করে ফেলছে। ফলে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার প্রণোদনা কমে যাচ্ছে।
বিয়ে না করা বা সন্তান না নেওয়া অনেকের কাছে এখন সুবিধাজনক মনে হচ্ছে, যেহেতু এআই জীবনের জটিলতাগুলো সহজ করে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিতে।
ভিন্ন দৃষ্টিকোণ
তবে সবাই এই পরিবর্তনকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন না। একজন শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সবসময় খারাপ খবর নাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের মতে, সমাজের কাঠামো বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি যেমন সমস্যা তৈরি করছে, তেমনি সমাধানের পথও তৈরি করছে। জন্মহার কমা মানে হয়তো সমাজে নতুন ধরনের চাহিদা ও সুযোগ তৈরি হবে। বৃদ্ধদের দেখভাল বা একাকীত্ব দূর করার জন্য রোবটিক সেবা সমাজকে সহায়তা করতে পারে।
চীনে জন্মহার কমে যাওয়া একটি বাস্তব সমস্যা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে, তবে একই সঙ্গে এটি সমাজের পরিবর্তিত চাহিদা মেটাতে নতুন সমাধানও দিচ্ছে। তাই এআই-এর প্রভাব পুরোপুরি নেতিবাচক না হয়ে সমাজের রূপান্তরে ইতিবাচক ভূমিকাও রাখতে পারে।