ব্যতিক্রম শুধু বাকশালীর পাণ্ডুলিপিতে। এখানে শ্রেঢ়ীর পরিবর্তে “বর্গ” শব্দটি উল্লিখিত আছে।
(ক) সমান্তর শ্রেণী যার সাধারণ অন্তর ২, (খ) সমান্তর শ্রেণী যার সাধারণ অন্তর ১০। দ্বিতীয় সারি থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে এটি একটি সমান্তর প্রগতি যার সাধারণ অন্তর ২। অনুরূপভাবে তৃতীয় ও চতুর্থটি সমান্তর শ্রেণীতে সংখ্যা সাজান রয়েছে।
বাজসনেয় সংহিতাতে দেখতে পাওয়া যায়:
৪, ৮, ১২, ১৬,৪৮, ১, ৩, ৫, ৭,০০০০০-৩১ পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণেও সংখ্যাগুলি শ্রেণী অনুযায়ী সাজান রয়েছে। যেমন: ১২, ২৪, ৪৮, ১৬,০০০১৯৬৬০৮, ৩৯৩২১৬।
বৃহৎদেবতাতে সমান্তর শ্রেণীর যোগফল পর্যন্ত উল্লেখ আছে। যেমন:
২+৩+৪+۰۰۰+১০০০= ৫০০৪৯৯.
সুতরাং আমরা লক্ষ্য দেখতে পাচ্ছি যে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও নানাবিধ ধর্মগ্রন্থে সমান্তর শ্রেণীর সাহায্যে সংখ্যাগুলি উল্লেখিত হয়েছে। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যেও সমান্তর শ্রেণীর সাহায্যে সংখ্যার উল্লেখ থাকতে দেখা যায়। বৌদ্ধ সাহিত্য দীঘনিকায়তে মানুষের জীবন বৃদ্ধি সম্পর্কে গণনা করতে গিয়ে নিম্নোক্তরূপে সংখ্যাগুলি সাজান হয়েছে ১০, ২০, ৪০,০০, ৮০۰۰۰,
ভদ্রবাহুর কল্পসূত্রে ১+২+৩+৪++৮১৯২ = ১৬৩৮৩ এর কথা উল্লিখিত আছে। নেমীচন্দ্রের ত্রিলোকসারে ১, ৫, ১৩, ২৯, ৬১, ১২৫, ২৫৩ সংখ্যাগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। কতকগুলি বলয়ের উল্লেখ করতে গিয়ে নেমীচন্দ্র এই সংখ্যাগুলি বলেছেন। দেখা গেছে প্রত্যেকটি বলয়ের দৈর্ঘ্য a , 2a , 2²a , ….. 2²-¹a।
∴ ব্যাস a , (2²+1)a, (2³+2²+1)a, n তম বলয়ের ব্যাস a(1+2²+2³ +……+2)=a2ª†¹ -3a.
অন্তগড়াদশাওতে সংখ্যাগুলি সমান্তর প্রগতিতে সাজিয়ে তার যোগফল পর্যন্ত নির্ণয় করে দেখানো হয়েছে। যেমন:
৭+১৪+২১+২৮+৩৫+৪২+৪৯ = ১৯৬
৮+১৬+২৪+৩২+৪০+৪৮+৫৬+৬৪ = ২৮৮ ৯+১৮+২৭+৩৬-৪৫+৫৪+৬৩ + ৭২+৮১=৪০৫ ১০+২০+৩০+৪০+৫০+৬০+৭০+৮০-৯০+১০০ = ৫৫০
১+২+৩+………+১০০=৫১৫০
এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করলাম যে, সমান্তর প্রগতিতে সংখ্যাগুলির উল্লেখ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে রয়েছে। কিন্তু কোনও গ্রন্থে কোন সূত্র বা সংজ্ঞা আলোচিত হয় নাই। ঠিক সুষ্ঠভাবে প্রথম আলোচিত হয় বাকশালীর পাণ্ডুলিপিতে। তারপর আর্যভটীয়, ব্রাহ্মস্ফুট সিদ্ধান্ত, সিদ্ধান্ত শেখর, লীলাবতী প্রভৃতি ভারতীয় গ্রন্থে আলোচিত হয়। সাধারণতঃ ভারতীয় গণিতগ্রন্থে শ্রেণীকে ‘শ্রেঢ়ী’ বলেই উল্লেখ করা হত। ব্যতিক্রম শুধু বাকশালীর পাণ্ডুলিপিতে। এখানে শ্রেঢ়ীর পরিবর্তে “বর্গ” শব্দটি উল্লিখিত আছে। তাছাড়াও সংকলিতম্, রূপণাকরণ শব্দটিও দেখতে পাওয়া যায়।
(চলবে)
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৩৯)