০২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

সাগরের অদেখা ভূবনের কথা জানাচ্ছে চীনের প্রযুক্তি আইপিপি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:১০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
  • 25

 জুলাই ১৭, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: সাগরে বাস করে এক অদেখা জগত। মানে সহজে খালি চোখে ধরা পড়ে না ওই জগতের বাসিন্দারা। প্লাঙ্কটনসহ অন্যান্য ক্ষুদে সামুদ্রিক প্রাণীর সুলুকসন্ধানে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে থাকা শেনচেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড টেকনোলজি (এসআইএটি) তৈরি করেছে ইমেজিং প্লাঙ্কটন প্রোব বা আইপিপি প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে চীনা গবেষকরা সমুদ্রের এই সুবিশাল বাস্তুসংস্থান নিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করছেন নতুন তথ্য। ছবি তুলছেন আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নিখুঁত রেজুলেশনে। রিয়েল টাইমে প্লাঙ্কটন ও অন্য সামুদ্রিক প্রজাতি শনাক্ত করতে পারছে আইপিপি প্রযুক্তি।

সেই সঙ্গে এটি প্রাণীটির আকার ও সংখ্যা গণনা করে। এই অত্যাধুনিক টুলটি স্ফটিক-স্বচ্ছ ছবির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে সমন্বিত করেছে, যা আগের প্রযুক্তির নাগালের বাইরে ছিল। সম্প্রতি আইপিপি প্রযুক্তিতে চীনের সাগরের অদেখা ভূবনের তোলা ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিত জানা যাক এবার— কোপেপডস স্পঞ্জবব-এর চরিত্রটা বাস্তবেই আছে। বাস্তব সমুদ্রের প্রাণী কোপেপড। আকৃতিতে তেলাপোকার মতো হলেও, তারা প্রায়শই উজ্জ্বল রঙ ছড়ায়। প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্য উভয় ক্ষেত্রেই জুয়োপ্লাঙ্কটনের প্রভাবশালী পরিবার। মাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিকার এরা। তারা না থাকলে অনেক সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবারের অস্তিত্বই থাকত না। নকটিলুকা সিনটিলান প্লাঙ্কটনের মধ্যে জনপ্রিয় একটি প্রজাতি। যাকে বলে ‘নীল অশ্রু’।

উপকূলরেখা বরাবর এই প্লাঙ্কটন রাতে বেলায় সৈকতে নীল আভা ছড়ায়। বায়ো নকটিলুকার পরিমাণ সৈকতে বেড়ে গেলে তাকে বলা হয় ‘রেড টাইড’। এ সময় সিনটিলান অক্সিজেন নিঃসরণ করে ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ইকিনোপ্লুটিয়াস লার্ভা সামুদ্রিক আরচিন সুস্বাদু হলেও, কখনও কি তাদের শৈশব রূপ দেখেছেন? এই ভেসে থাকা ‘ছিটে বিন্দুগুলো’ মহাসাগরের স্রোতে জীবন্ত দিক নির্দেশক বেইতৌ স্যাটেলাইটের কাজ করে। তাদের ক্যালসিয়ামযুক্ত কঙ্কালের পাতায় থাকা নিখুঁত নকশাগুলো উষ্ণ স্রোতের দিক নির্দেশ করে, যা সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে পরিবেশগত চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডোলিওলেটা গেগেনবাউরি আইপিপি প্রযুক্তি এই স্বচ্ছ ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’কে রেকর্ড গতিতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন গিলতে দেখেছে। এটি কার্বনও আটকে রাখে।

তাই এর আরেক নাম জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী যোদ্ধা। ক্যাসিনোডিসকাস আইপিপির ছবিতে দেখা গেছে, কাচের মতো সিলিকা খোলসে ঢাকা প্লাঙ্কটনটি সূর্যালোককে ক্যালেইডোস্কোপের মতো প্রতিফলিত করে এবং ঝাপসা পানিতেও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ করতে সক্ষম। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে এদের বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত। মহাসাগরের ‘খাদ্য ভান্ডার’ হিসেবে কাজ করে এরা। হেমিডিসকাস আইপিপি দেখিয়েছে, তরমুজের নকশার মতো দেখতে এই ডায়াটম তাদের গোলাকৃতির খোলসে থাকা সর্পিল রেখার মাধ্যমে ‘ব্র্যাগ ডিফ্র্যাকশন’ তৈরি করে, যা সূর্যোদয়ের সময়ও আলো গ্রহণে সহায়তা করে। ফলে কম আলোতেও এরা ভালোভাবে ফটোসিন্থেসিস করে ও অক্সিজেন নির্গত করে।

স্বচ্ছ জেলিফিশ আইপিপি ধারণ করেছে প্রকৃতির স্বচ্ছ নিনজা! মগজ নেই, হৃদয় নেই, তবুও বিষাক্ত দংশনে ভরপুর। যখন এরা দলে দলে আসে—তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইন বন্ধ করে দিতে পারে এবং মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে পরিণত করতে পারে ভুতুড়ে নগরীতে। ক্রেসিস অ্যাসিকুলা এদের বলা হয় সামুদ্রিক ‘কাঁচের কলম।’ তাপমাত্রা বুঝে চলে এরা। এই স্বচ্ছ প্রাণীরা ২৯ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পানিতে দারুণ গতিতে বংশবিস্তার করে—যে তাপমাত্রা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য নিঃসরণের ফলে তৈরি হতে পারে। এর ফলে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের আবাস নষ্ট নয়।

ট্রাইকোডেসমিয়াম রেড টাইডের আরেক খেলোয়াড় এরা। মরিচারঙা এই কলোনিগুলো দেখতে খড়ের আঁটি বা ব্যাডমিন্টনের শাটল ককের মতো। এদের নাইট্রোজেন তৈরির ক্ষমতা পুষ্টিহীন সাগরে উৎপাদন বজায় রাখতে সাহায্য করে। রেডিওলারিয়ানস কাচের মতো জটিল সিলিকা কঙ্কালযুক্ত ক্ষুদ্র প্রাণীর চমৎকার ছবি। এদের রশ্মিময় কৃত্রিম হাত (সুডোপডস) শিকার ধরে রাখে, আর এদের কঙ্কাল সমুদ্রতলের গঠন বদলে দেয়। বিজ্ঞানীরা এই মাইক্রোফসিলের মাধ্যমে অতীতের মহাসাগরের রহস্য উন্মোচন করেন! অ্যাসেটিস আপনার স্যুপে থাকা স্বচ্ছ ‘শুঁটকি চিংড়ি’ একসময় ছিল জীবন্ত প্ল্যাঙ্কটন। পালকের মতো লোমে ভেসে থাকা এরা মাছের খাদ্যচক্র বজায় রাখে। তবে এদের অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে পানি পরিশোধন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা মৎস্য খাত এবং পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

 

সাগরের অদেখা ভূবনের কথা জানাচ্ছে চীনের প্রযুক্তি আইপিপি

০৫:১০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

 জুলাই ১৭, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: সাগরে বাস করে এক অদেখা জগত। মানে সহজে খালি চোখে ধরা পড়ে না ওই জগতের বাসিন্দারা। প্লাঙ্কটনসহ অন্যান্য ক্ষুদে সামুদ্রিক প্রাণীর সুলুকসন্ধানে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে থাকা শেনচেন ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড টেকনোলজি (এসআইএটি) তৈরি করেছে ইমেজিং প্লাঙ্কটন প্রোব বা আইপিপি প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে চীনা গবেষকরা সমুদ্রের এই সুবিশাল বাস্তুসংস্থান নিয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করছেন নতুন তথ্য। ছবি তুলছেন আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নিখুঁত রেজুলেশনে। রিয়েল টাইমে প্লাঙ্কটন ও অন্য সামুদ্রিক প্রজাতি শনাক্ত করতে পারছে আইপিপি প্রযুক্তি।

সেই সঙ্গে এটি প্রাণীটির আকার ও সংখ্যা গণনা করে। এই অত্যাধুনিক টুলটি স্ফটিক-স্বচ্ছ ছবির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে সমন্বিত করেছে, যা আগের প্রযুক্তির নাগালের বাইরে ছিল। সম্প্রতি আইপিপি প্রযুক্তিতে চীনের সাগরের অদেখা ভূবনের তোলা ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিত জানা যাক এবার— কোপেপডস স্পঞ্জবব-এর চরিত্রটা বাস্তবেই আছে। বাস্তব সমুদ্রের প্রাণী কোপেপড। আকৃতিতে তেলাপোকার মতো হলেও, তারা প্রায়শই উজ্জ্বল রঙ ছড়ায়। প্রাচুর্য এবং বৈচিত্র্য উভয় ক্ষেত্রেই জুয়োপ্লাঙ্কটনের প্রভাবশালী পরিবার। মাছের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিকার এরা। তারা না থাকলে অনেক সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবারের অস্তিত্বই থাকত না। নকটিলুকা সিনটিলান প্লাঙ্কটনের মধ্যে জনপ্রিয় একটি প্রজাতি। যাকে বলে ‘নীল অশ্রু’।

উপকূলরেখা বরাবর এই প্লাঙ্কটন রাতে বেলায় সৈকতে নীল আভা ছড়ায়। বায়ো নকটিলুকার পরিমাণ সৈকতে বেড়ে গেলে তাকে বলা হয় ‘রেড টাইড’। এ সময় সিনটিলান অক্সিজেন নিঃসরণ করে ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন খাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ইকিনোপ্লুটিয়াস লার্ভা সামুদ্রিক আরচিন সুস্বাদু হলেও, কখনও কি তাদের শৈশব রূপ দেখেছেন? এই ভেসে থাকা ‘ছিটে বিন্দুগুলো’ মহাসাগরের স্রোতে জীবন্ত দিক নির্দেশক বেইতৌ স্যাটেলাইটের কাজ করে। তাদের ক্যালসিয়ামযুক্ত কঙ্কালের পাতায় থাকা নিখুঁত নকশাগুলো উষ্ণ স্রোতের দিক নির্দেশ করে, যা সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে পরিবেশগত চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডোলিওলেটা গেগেনবাউরি আইপিপি প্রযুক্তি এই স্বচ্ছ ‘ভ্যাকুয়াম ক্লিনার’কে রেকর্ড গতিতে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন গিলতে দেখেছে। এটি কার্বনও আটকে রাখে।

তাই এর আরেক নাম জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী যোদ্ধা। ক্যাসিনোডিসকাস আইপিপির ছবিতে দেখা গেছে, কাচের মতো সিলিকা খোলসে ঢাকা প্লাঙ্কটনটি সূর্যালোককে ক্যালেইডোস্কোপের মতো প্রতিফলিত করে এবং ঝাপসা পানিতেও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন নিঃসরণ করতে সক্ষম। বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে এদের বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত। মহাসাগরের ‘খাদ্য ভান্ডার’ হিসেবে কাজ করে এরা। হেমিডিসকাস আইপিপি দেখিয়েছে, তরমুজের নকশার মতো দেখতে এই ডায়াটম তাদের গোলাকৃতির খোলসে থাকা সর্পিল রেখার মাধ্যমে ‘ব্র্যাগ ডিফ্র্যাকশন’ তৈরি করে, যা সূর্যোদয়ের সময়ও আলো গ্রহণে সহায়তা করে। ফলে কম আলোতেও এরা ভালোভাবে ফটোসিন্থেসিস করে ও অক্সিজেন নির্গত করে।

স্বচ্ছ জেলিফিশ আইপিপি ধারণ করেছে প্রকৃতির স্বচ্ছ নিনজা! মগজ নেই, হৃদয় নেই, তবুও বিষাক্ত দংশনে ভরপুর। যখন এরা দলে দলে আসে—তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইন বন্ধ করে দিতে পারে এবং মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে পরিণত করতে পারে ভুতুড়ে নগরীতে। ক্রেসিস অ্যাসিকুলা এদের বলা হয় সামুদ্রিক ‘কাঁচের কলম।’ তাপমাত্রা বুঝে চলে এরা। এই স্বচ্ছ প্রাণীরা ২৯ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পানিতে দারুণ গতিতে বংশবিস্তার করে—যে তাপমাত্রা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য নিঃসরণের ফলে তৈরি হতে পারে। এর ফলে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের আবাস নষ্ট নয়।

ট্রাইকোডেসমিয়াম রেড টাইডের আরেক খেলোয়াড় এরা। মরিচারঙা এই কলোনিগুলো দেখতে খড়ের আঁটি বা ব্যাডমিন্টনের শাটল ককের মতো। এদের নাইট্রোজেন তৈরির ক্ষমতা পুষ্টিহীন সাগরে উৎপাদন বজায় রাখতে সাহায্য করে। রেডিওলারিয়ানস কাচের মতো জটিল সিলিকা কঙ্কালযুক্ত ক্ষুদ্র প্রাণীর চমৎকার ছবি। এদের রশ্মিময় কৃত্রিম হাত (সুডোপডস) শিকার ধরে রাখে, আর এদের কঙ্কাল সমুদ্রতলের গঠন বদলে দেয়। বিজ্ঞানীরা এই মাইক্রোফসিলের মাধ্যমে অতীতের মহাসাগরের রহস্য উন্মোচন করেন! অ্যাসেটিস আপনার স্যুপে থাকা স্বচ্ছ ‘শুঁটকি চিংড়ি’ একসময় ছিল জীবন্ত প্ল্যাঙ্কটন। পালকের মতো লোমে ভেসে থাকা এরা মাছের খাদ্যচক্র বজায় রাখে। তবে এদের অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে পানি পরিশোধন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা মৎস্য খাত এবং পরমাণু কেন্দ্রের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।