প্রথমে এই আঘাতকে গুরুতর মনে হয়নি। কিন্তু সেই আঘাতেই ১৮ মার্চ তিনি মারা যান। নারিন্দার খ্রিষ্টান গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
জিনেট ভানতাসেল
একটি কারণে জিনেট ভানতাসেলের নাম ঢাকার ইতিহাসে আসে। সেটি হলো তিনি ঢাকার প্রথম আকাশচারী, বা বেলুনে করে তিনিই প্রথম উড়েছিলেন ঢাকার আকাশে। তার প্রথম উল্লেখ পাই আমার সংকলিত ‘গণিউর বাজার রোজনামচায়’। এর সূত্র ধরে পরে শামীম আমিনুর রহমান তাকে নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ভানতাসেল ও তার স্ত্রী জিনেট আমেরিকার বাসিন্দা। তারা বেলুনে চড়ে দর্শকদের দেখাতেন।
জিনেট ভানতাসেল
এটি হয়ে উঠেছিল তাদের পেশা। ১৮৯২ সালে ঢাকার নবাব আহসানউল্লাহ তাদের সঙ্গে ১০ হাজার টাকার একটি চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয় তারা বুড়িগঙ্গার এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাবেন।
ঢাকায় এ সংবাদ ঢোল মারফত জানানো হয়েছিল। ১৬ মার্চ বিকেলে বুড়িগঙ্গার দুই পাড় লোকে লোকারণ্য। বিকেল পাঁচটায় বুড়িগঙ্গার ওপারে কাঠুরিয়া থেকে বেলুনে উড়লেন। নবাব ও তার পরিবার আহসানমঞ্জিলের ছাদ থেকে তা অবলোকন করলেন। হঠাৎ প্রবল বাতাসে বেলুন চলে যায় শাহবাগ এলাকায়। প্যারাসুট খুলে জিনেট নামেন। কিন্তু মাটিতে না নেমে এক ঝাউগাছের মাথায় আটকে গেলেন। সেখানে যারা ছিলেন তারা বাঁশের সিঁড়ি করে তাকে নামানোর চেষ্টা করলেন।
ফ্রিজকাপের তোলা জিনেটের বেলুন আরোহনের ওপর প্রাপ্ত একমাত্র ছবি, ১৬ মার্চ (আনুমানিক ১৮৯২)
কিন্তু বা পিছলে মাটিতে পড়ে তিনি মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পান। প্রথমে এই আঘাতকে গুরুতর মনে হয়নি। কিন্তু সেই আঘাতেই ১৮ মার্চ তিনি মারা যান। নারিন্দার খ্রিষ্টান গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
বেলুনটি উচ্চতায় ছির ৭৮ ফুট। চারদিকের মাপ ৪৮ ফুট। ৬০০০ ফুট ওপর জিনেট উড়েছিলেন।
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪২)