০৭:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৩৯)

অচল সিকি

যে মেয়েটা মরেছে, সে দিকের-ও কেউ নেই। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে। বারো বছরে পড়তে না পড়তে সে তার স্বামী খোয়ায়। সে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু নিকেয় বসাতে পারে নি মেয়েকে-

জেবুন্নেসা অবাক হয়ে এনামুলকে বলে, ‘নিজেদের চলে না, এটা কোনো কথা হলো? তাই বলে বুড়ো বাপকে দেখবে না।’

অচল বুড়োমানুষের জীবনের কোনো দাম নেই, নিজের কাছেই সে নিজে অচল। পেট নিয়ে বড় জ্বালা, খুদকুঁড়ো যা-ই হোক দু’টি দিয়ে ওটা ভরাতে হয়। চোখে ছানি, ভালো দেখে না। বাত আছে, তাতে আধা পঙ্গু। তার ওপর হাঁপানি কাশি। আগে বেদেনীরা শিং মেরে বদরক্ত ঝেড়ে দিত, আজকাল সিকিটা-আধুলিটা ছাড়া শিং বসাতে চায় না।

নিজের মনে নিজের সঙ্গেই কথা বলে বুড়ো, তারা শুনলো কি শুনলো না সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। বাড়ি বাড়িতে ধান ভেনে, গা-গতর খাটিয়ে মেয়ে তাকে কিভাবে টানতো নাকের জলে চোখের জলে হয়ে সে শুধু সে-ই বৃত্তান্তেই ডুবে থাকে।

একটু থেমে বুড়ো আবার শুরু করে। তার বেশীরভাগ কথাই জড়ানো জড়ানো, বোঝা যায় না। এক রকম ভালো ছিলোই, ভাগ্যে তার সয়নি। বাড়ি বাড়ি গতর ভেনে ভালোই রেখেছিলো মেয়েটা তার বাপকে।’

কথা বলতে বলতে বুড়োর গলা ধরে এলো। পাতলা ছানি পড়া চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আট বছরের মেয়ে, তার বিয়ে, স্বামীর ঘর, বারো বছরে বিধবা হওয়া, বারো বছরের বিধবার স্বামীর স্মৃতিকে আগলে বেড়ানো, এসব যেন এক উদ্ভট রূপকথা। মৃত স্বামীর প্রতি প্রেম, না বিবাহিত জীবনের প্রতি আতঙ্ক, কোন্টা? এনামুলের স্বভাব এই রকম, সবকিছু যাচাই করে নিতে ভালোবাসে। যাচাই করাটা তার পুরনো অভ্যাসের একটি। সে জেবুন্নেসার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললে, ‘চা খাবে?’

‘তুমি?’

‘তুমি খেলে আমিও খাই!’

কেৎলিতে পানি চাপালো বুড়ো। কাঠের চুলোয় ফুঁ দিতেই একরাশ ধোঁয়া গলগলিয়ে কুগুলি পাকালো চতুর্দিকে।

 

 

বন্ধুত্বের গল্প হোক রঙ বাংলাদেশ’র রঙিন আয়োজনে

প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৩৯)

১২:০০:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

অচল সিকি

যে মেয়েটা মরেছে, সে দিকের-ও কেউ নেই। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে। বারো বছরে পড়তে না পড়তে সে তার স্বামী খোয়ায়। সে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু নিকেয় বসাতে পারে নি মেয়েকে-

জেবুন্নেসা অবাক হয়ে এনামুলকে বলে, ‘নিজেদের চলে না, এটা কোনো কথা হলো? তাই বলে বুড়ো বাপকে দেখবে না।’

অচল বুড়োমানুষের জীবনের কোনো দাম নেই, নিজের কাছেই সে নিজে অচল। পেট নিয়ে বড় জ্বালা, খুদকুঁড়ো যা-ই হোক দু’টি দিয়ে ওটা ভরাতে হয়। চোখে ছানি, ভালো দেখে না। বাত আছে, তাতে আধা পঙ্গু। তার ওপর হাঁপানি কাশি। আগে বেদেনীরা শিং মেরে বদরক্ত ঝেড়ে দিত, আজকাল সিকিটা-আধুলিটা ছাড়া শিং বসাতে চায় না।

নিজের মনে নিজের সঙ্গেই কথা বলে বুড়ো, তারা শুনলো কি শুনলো না সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই। বাড়ি বাড়িতে ধান ভেনে, গা-গতর খাটিয়ে মেয়ে তাকে কিভাবে টানতো নাকের জলে চোখের জলে হয়ে সে শুধু সে-ই বৃত্তান্তেই ডুবে থাকে।

একটু থেমে বুড়ো আবার শুরু করে। তার বেশীরভাগ কথাই জড়ানো জড়ানো, বোঝা যায় না। এক রকম ভালো ছিলোই, ভাগ্যে তার সয়নি। বাড়ি বাড়ি গতর ভেনে ভালোই রেখেছিলো মেয়েটা তার বাপকে।’

কথা বলতে বলতে বুড়োর গলা ধরে এলো। পাতলা ছানি পড়া চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আট বছরের মেয়ে, তার বিয়ে, স্বামীর ঘর, বারো বছরে বিধবা হওয়া, বারো বছরের বিধবার স্বামীর স্মৃতিকে আগলে বেড়ানো, এসব যেন এক উদ্ভট রূপকথা। মৃত স্বামীর প্রতি প্রেম, না বিবাহিত জীবনের প্রতি আতঙ্ক, কোন্টা? এনামুলের স্বভাব এই রকম, সবকিছু যাচাই করে নিতে ভালোবাসে। যাচাই করাটা তার পুরনো অভ্যাসের একটি। সে জেবুন্নেসার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললে, ‘চা খাবে?’

‘তুমি?’

‘তুমি খেলে আমিও খাই!’

কেৎলিতে পানি চাপালো বুড়ো। কাঠের চুলোয় ফুঁ দিতেই একরাশ ধোঁয়া গলগলিয়ে কুগুলি পাকালো চতুর্দিকে।