ভয়ঙ্কর সংক্রমণের ঝুঁকি: বার্ন ইউনিটে প্রবেশ কেন নিয়ন্ত্রিত?
হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় বার্ন ইউনিট একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের ক্ষতস্থান খোলা থাকে এবং সেই ক্ষত থেকে সহজেই ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে রোগীদের সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এই কারণেই বার্ন ইউনিটে দর্শনার্থী প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে।
একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী যেভাবে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে প্রবেশ করেন, দর্শনার্থীর ক্ষেত্রেও সেভাবে সতর্কতা না নিলে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। সামান্য অসতর্কতা যেমন– জুতার নিচে লেগে থাকা ধুলা, শরীরের কাপড়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া কিংবা মুখ থেকে নিঃসৃত ভাইরাস পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে রোগীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
কেন সম্মানিত ও সচেতন মানুষ বার্ন ইউনিটে সাধারণ পোশাকে যান না?
বার্ন ইউনিটের প্রবেশপথে অনেক সময় দেখা যায়, কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় বাইরের সাধারণ পোশাকে প্রবেশ না করে চিকিৎসকদের অনুমতি ব্যতীত বাইরে অপেক্ষা করেন। এই আচরণ কোনো সামাজিক সৌজন্য নয়, এটি একটি চরম মানবিক দায়িত্ব। কারণ তারা জানেন, বার্ন রোগীর ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটানো মানে তার মৃত্যু ডেকে আনা।
একজন সচেতন মানুষ কখনোই নিজের অজ্ঞতা বা আবেগকে রোগীর জীবনের ওপর চাপিয়ে দেন না। এমনকি আত্মীয়স্বজন হলেও, তার পোশাক, হাত, চুল বা জুতো যে জীবাণু বহন করছে না—তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা বার্ন ইউনিটে প্রবেশ করেন না। এটি শুধু সচেতনতার বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি একজন সুস্থ সমাজ নাগরিকের নৈতিক অবস্থান।
কেন মেডিকেটেড অ্যাপ্রন পরা বাধ্যতামূলক?
বার্ন ইউনিটে প্রবেশের আগে স্বাস্থ্যকর্মীরা বা অনুমতিপ্রাপ্ত দর্শনার্থীরা একটি মেডিকেটেড অ্যাপ্রন পরেন। এতে জীবাণুনাশক প্রয়োগ করা থাকে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো রোধ করে। একই সঙ্গে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস এবং পায়ে কভার ব্যবহার করতে হয়। এইসব ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় রোগীর শরীরে মারাত্মক ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে, যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বার্ন রোগীর ইমিউন সিস্টেম একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার সংক্রমণের ঝুঁকি এতটাই তীব্র যে, একজন সাধারণ মানুষ যিনি ঠান্ডা কিংবা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত, তার উপস্থিতিতেই রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
আবেগ নয়, চাই সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ
প্রিয়জন বার্ন ইউনিটে ভর্তি শুনে আবেগে আপ্লুত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধিমত্তা ও দায়িত্ববোধ দিয়ে কাজ করতে হবে। রোগীকে দেখতে গিয়ে যেন তার ক্ষতি না হয়, সেটাই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। বার্ন ইউনিটে ডাক্তারদের নিষেধাজ্ঞা বা নিয়মকানুন কোনো ‘অতিরিক্ত সতর্কতা’ নয়, এটি একটি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ও জীবন রক্ষার কৌশল।
সচেতন থাকুন, জীবন বাঁচান
বাংলাদেশের বার্ন ইউনিটগুলো প্রতিদিন নানা ধরনের গুরুতর রোগীর সেবা দেয়। চিকিৎসকদের চেষ্টাকে সফল করতে হলে জনসচেতনতা অপরিহার্য। বার্ন ইউনিটে প্রবেশ করতে হলে আবেগ নয়, সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার প্রমাণ দিতে হবে। কেউ সেখানে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করলে, একটি নিরীহ জীবন মুহূর্তেই নিভে যেতে পারে।
স্মরণ রাখা উচিত, একজন দর্শনার্থীর অবহেলা একটি জীবন শেষ করে দিতে পারে। তাই বার্ন ইউনিটে প্রবেশের আগে বারবার ভাবুন—আপনার উপস্থিতি কি রোগীর জন্য আশীর্বাদ, না অভিশাপ?