এই পর্বত-পৃষ্ঠের দক্ষিণ থেকে উত্তর পাশে পার হয়ে গেলে পথ কিছু সহজ হল। এখানে একটা ছোট সমতল জায়গা পেয়ে ধর্মগুরু রাত্রের জন্য তাঁবু খাটালেন।
পরদিন তাঁরা গিরিসংকট থেকে নেমে এলেন। তার পর আঁকাবাঁকা পথে গিয়ে আবার একটা খুব উঁচু মেঘে ঢাকা পর্বতপৃষ্ঠে উঠতে হল। অত উঁচু হলেও এর উপর তুষার ছিল না, কেবল ভাঙা ভাঙা সাদা সাদা পাথরের খণ্ড ছিল। এর উপর যখন তাঁরা চড়লেন তখন সন্ধ্যা আগত-প্রায়। কিন্তু এখানে এমন ভীষণ বরফের মত ঠাণ্ডা ঝড় হচ্ছিল যে, কেউ এখানে রাত কাটাতে সাহসী হল না।
এখানে এত ঠাণ্ডা যে কোনো গাছপালা হয় না। কেবল প্রস্তরখণ্ড বিশৃঙ্খলভাবে ছড়ানো আর পর্বতের তীক্ষ্ণ চূড়াগুলি পাতাহীন অরণ্যের মত দণ্ডায়মান। দূরের পর্বতগুলি এত উঁচু যে পাখীরাও সেগুলি উড়ে পার হতে পারে না। এই পর্বত-পৃষ্ঠের দক্ষিণ থেকে উত্তর পাশে পার হয়ে গেলে পথ কিছু সহজ হল। এখানে একটা ছোট সমতল জায়গা পেয়ে ধর্মগুরু রাত্রের জন্য তাঁবু খাটালেন।
তার পর পাঁচ-ছয় দিনে পর্বত থেকে নেমে এসে হিউএনচাঙ তুখার দেশের সীমার মধ্যে অন্দরাবে এলেন। অন্দরাবে পাঁচটি সঙ্ঘারাম ও কয়েক কুড়ি ভিক্ষু ছিল। এখানে পাঁচদিন কাটিয়ে যাত্রা করে তিনি খোস্ত পার হয়ে চৌদ্দ বছর পরে আবার পূর্বপরিচিত তুখার-রাজধানী কুন্দুজে এলেন। কুন্দুজ রাজধানী হলেও হিউ এনচাঙ বলেন যে, এখানকার তুরুস্ক রাজা সব সময় এখানে থাকেন না। ‘পাখী যেমন বাসা `বদলায়, তেমনি সর্বদাই ইনি আবাস বদলাতেন।’
তুখাররাজ তাঁর পূর্বপরিচিত হওয়ায় তিনি এ সময়ে মফস্বলে যেখানে সফর করছিলেন, হিউ এনচাও সেখানেই গিয়ে তাঁর সঙ্গে একমাস কাটালেন। আর সম্ভবতঃ এখানেই তিনি তাঁর পূর্বপরিচিত মিত্র তুরফানরাজ সম্বন্ধে দুঃসংবাদ শুনলেন। তিনি যখন তুরফানরাজ কু-ওয়েনতাইএর কাছে বিদায় নেন, তার বছর দশেক পরে, কু-ওয়েনতাই সম্রাট থাইচুঙের আদেশের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করবার দুঃসাহস করেন। তার ফলে সম্রাটের সৈন্যরা তাঁর রাজত্ব অধিকার করে। এর অব্যবহিত পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। এখন তুরফান চীনের সীমানার মধ্যে একটা প্রদেশ মাত্র।
(চলবে)