এই পর্বতের কোথাও কোথাও সুতীক্ষ্ণ চূড়া, কোথাও ভাঙা ভাঙা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথর। সমান পথ খুবই কম। পথ এত খাড়াই যে, ঘোড়ায় চড়ে যাওয়াও অসম্ভব।
এই দুর্ঘটনায়, এত কষ্টে সংগ্রহ করা পঞ্চাশ খানা গ্রন্থের অনুলিপি নষ্ট হওয়ায় হিউ এনচাঙ এর মনে যে কী কষ্ট হয়েছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। এই ক্ষতির দুঃখ তিনি কখনো ভুলতে পারেন নি।
কাপিশীর রাজা এ সময়ে উদভাওতে ছিলেন। তিনি এই ব্যাপারের সংবাদ পেয়ে নিজেই নদীতীরে এসে হিউএনচাঙকে প্রণাম করলেন আর তাঁকে সঙ্গে করে শহরে নিয়ে গেলেন। হিউএনচাঙ এক সঙ্ঘারামে উঠলেন আর সূত্রগুলির যতগুলি সম্ভব আবার অনুলিপি করবার জন্যে উদ্যানদেশে জনকতক লোক পাঠালেন। এইজন্যে তাঁর এখানে প্রায় দু মাস অপেক্ষা করতে হল।
এই অবসরে, কাশ্মীররাজও হিউএনচাঙের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার জন্যে উদভাণ্ডতে দিনকতক কাটিয়ে গেলেন। তার পর কাপিশীরাজ তাঁকে মহাসমারোহে ল্যানে নিয়ে গেলেন আর সেখানে পঁচাত্তর দিন ধরে ‘মোক্ষমহাদানের’ উৎসব করলেন। আবার চাউকুটা (আধুনিক গজনী) পার হয়ে তাঁর রাজ্যের উত্তর সীমানায় উপস্থিত হয়ে আর সাত দিন একটা দানসভা করলেন। এইখানে হিউএনচাঙ কাপিশীরাজের কাছে বিদায় নিয়ে ভারতবর্ষ ত্যাগ করলেন।
এইবার আবার ভীষণ হিন্দুকুশ পর্বত লঙ্ঘন করবার পালা। এই বিপদসংকুল পথে হিউএনচাঙের সঙ্গের জিনিসপত্র, খাদ্য, জ্বালানী কাঠ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে যেতে সাহায্য করবার জন্যে কাপিশীরাজ একজন পদস্থ কর্মচারী ও এক শত লোক নিযুক্ত করে দিলেন। হিউএনচাঙ ‘খাওয়াক’ গিরিসংকটের উপর দিয়ে হিন্দুকুশ পার হয়েছিলেন।
এই ভয়ংকর দুর্গম পথে যাত্রীদের খুব কষ্ট হয়েছিল। এই পর্বতের কোথাও কোথাও সুতীক্ষ্ণ চূড়া, কোথাও ভাঙা ভাঙা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড পাথর। সমান পথ খুবই কম। পথ এত খাড়াই যে, ঘোড়ায় চড়ে যাওয়াও অসম্ভব। হিউএনচাঙ লাঠিতে ভর করে পদব্রজে চললেন।
সাত দিন পরে তাঁরা একটা খুব উঁচু গিরিসংকটের কাছে একটা গ্রামে এলেন। সেখানে একজন গ্রামবাসী তাঁদের পথপ্রদর্শক হতে রাজি হল। এখানে সর্বদাই তুষারের স্তূপ ইতস্তত সঞ্চালিত হচ্ছে আর তুষার নদের মধ্যে মধ্যে গভীর ফাটল। সাবধানে পথপ্রদর্শকের পায় পায় না গেলে পতন ও মৃত্যু অনিবার্য। সূর্যোদয় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা এই বরফাবৃত পাহাড়ের উপর দিয়ে চললেন। এই সময়ে হিউএনচাঙের সঙ্গে কেবল সাতজন ভিক্ষু, কুড়িজন অনুচর, একটি হাতী, দশটি গাধা, আর চারটি ঘোড়া ছিল।
(চলবে)
হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫২)