গোপালগঞ্জে এনসিপি’র পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানি ঘটেছে, তার কারণ ও দায় নিরূপণে সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহে আজ দু’জন উপদেষ্টা গোপালগঞ্জে আসেন।
বিচার বিভাগের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ তদন্ত
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, একজন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশন গঠন হবে। শুধু সরকারি কর্মকর্তা নন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এতে থাকবেন। দু’এক দিনের মধ্যে কমিশন ঘোষণা করা হবে এবং সকলের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়।
সরকারের অবস্থান: দলনিরপেক্ষতা ও জনগণের নিরাপত্তা
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দলনিরপেক্ষ এবং শহীদদের আত্মত্যাগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি আশ্বস্ত করেন—কোনো নিরীহ বা নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হবে না। তবে যারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করেছেন বা নাশকতায় যুক্ত, তারা আইনের আওতায় শাস্তি পাবেন। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখতে প্রশাসন কাজ করবে।
গণতন্ত্রচর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, পূর্বে বিরোধী মত দমন করা হলেও এখন সরকার গণতন্ত্র চর্চার পরিবেশ গড়ে তুলতে চায়। সবাই যেন দায়িত্বশীলভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারেন—এমন একটি সহনশীল সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার ওপর তিনি জোর দেন। নিজের দল বা মতাদর্শের ক্ষতি ডেকে আনে এমন কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন: ‘অগ্নিপরীক্ষা’
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে তিনি সরকারের জন্য অগ্নিপরীক্ষা আখ্যা দেন। লক্ষ্য হলো এমন একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে ভোটার, পোলিং এজেন্ট ও সংশ্লিষ্ট সবাই নির্ভয়ে কেন্দ্রে থাকতে পারেন; ভোট প্রকাশ্যে গণনা ও ঘোষণা হয়। এজন্য রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও প্রশাসনের সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়।
মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক প্রসঙ্গে নিশ্চয়তা
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলা হলেই তা চূড়ান্ত নয়; প্রতিটি মামলা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে এগোবে। আধুনিক অনুসন্ধান পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরীহ কাউকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কারা ছিলেন সাথে
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মন্ত্রীপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমেদ এবং জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান (যুগ্মসচিব)সহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পরিদর্শন সূচি ও মতবিনিময়
এর আগে উপদেষ্টাদ্বয় গোপালগঞ্জ সার্কিট হাউসে এসে প্রথমে জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন এবং সংঘর্ষের দিনে কারাগারে হামলার বিষয়ে খোঁজ নেন। এরপর হেঁটে যান ১৬ জুলাইয়ের এনসিপি সমাবেশস্থল গোপালগঞ্জ পৌরপার্কে। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করা হয়।
সমাপনী আহ্বান
উপদেষ্টা দল গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, আইনের শাসন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বস্তরের সহযোগিতা চেয়েছে। তাদের প্রত্যাশা—উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব হবে।