০৬:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ক্যাম্পাসে মাঝরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ – কী ঘটেছে?

  • Sarakhon Report
  • ০৯:০৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • 17
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। তবে কয়েক ঘণ্টা পরেই সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ‘কর্ডন’ করে নিয়ন্ত্রণ নেয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বের করে দেয়া হয় এবং আর কাউকে তখন ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

পরে সোমবার দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিভিন্ন হোস্টেলে থাকা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ওই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চেয়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের তথ্য গোপনের অভিযোগে করে তারা।

একই সাথে শিক্ষার্থীদের কেন দুপুরে ঢুকতে দেয়া হয়নি এবং সেসময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয় এমন অভিযোগও করে তারা। তাদের বেশিরভাগই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থী।

সোমবার দিবাগত রাত দুইটায় কেন স্কুল ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুলেন্স এমন প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রাতেই ক্যাম্পাসের প্রবেশ গেইট খুলে তাদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়।

পরে দুইজন শিক্ষক তাদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায়।

পরে আজ মঙ্গলবার সকালেও শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে।

বিবিসি বাংলার সর্বশেষ খবর ও বিশ্লেষণ এখন সরাসরি আপনার ফোনে।

ফলো করুন, নোটিফিকেশন অন রাখুন

বিবিসি বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ, আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ, শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় সেনা সদস্যদের জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, নিহতদের পরিবারকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এছাড়াও বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো উড়োজাহাজ বাতিল করা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে মঙ্গলবার সারাদিন বিক্ষোভ করেছে তারা।

সকালে শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন উপদেষ্টারা।

ঘটনাস্থলে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিন বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় অন্তত তিন জনের মাথা ফেটে গেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুই দফায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে সেনাবাহিনী এ ধরনের বেসামরিক স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে কি না? একই সাথে ওই স্থানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে কি না?

কেনই বা রাতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা? কি ঘটেছে সেখানে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন গতকাল সোমবার দুর্ঘটনার স্থান সেনাবাহিনী যেভাবে কর্ডন বা ঘেরাও করে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাতে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পদ হওয়ায় দুর্ঘটনাস্থল নিরাপদ করার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর।

দুর্ঘটনাস্থলের ম্যাপ

কি ঘটেছে সোমবার দিবাগত রাতে?

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে সোমবার দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়, বিক্ষোভ করে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেইট খোলার জন্য তারা ধাক্কাধাক্কি করলেও খোলা হয়নি।

গণমাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত আড়াইটায় ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করায় আহত ও নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হবে না বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

সোমবার সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কেন তাদের বের করে দিয়েছে এমন অভিযোগ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

তাদের অভিযোগ দুপুরে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বের করতে লাঠিচার্জও করা হয়েছে।

আবার প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে রাতে দেড়টার পরে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া মধ্যরাতে মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করতেও দেখা যায় তাদের।

উল্লেখ্য, মধ্যরাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জোরে জোরে ধাক্কা দিলে খুলে দেয়া হয় প্রধান ফটক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দুইজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। পরে তারা যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে অবস্থান নেয়।

শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ এবং নিহত ও আহতদের সঠিক সংখ্যা বা তালিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে জানান।

আজ মঙ্গলবার সকালে উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে অবহিত করেন।

একই সাথে স্কুলের কো-অর্ডিনেটর শিক্ষক এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সন্তানও নিহত হয়েছে বলে তাদের জানানো হয়।

নিহতের সংখ্যা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন এই শিক্ষকরা। কোন মরদেহ যাতে ক্যাম্পাস থেকে বের না হয় সেজন্য শিক্ষকরা রাতেও পাহারায় রয়েছেন বলে তিনি তাদের প্রতিশ্রুতি দেন।

শিক্ষার্থীদের কেন ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নে একজন শিক্ষক বলেন, “এটাতো আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই ছিল না। এটা টোটালি সেনাবাহিনী কর্ডন করছে। তারা কোন ভাবে কাজ করবে তাদের রুল এন্ড রেগুলেশনস কি এটাতো আমাদের বলতে বাধ্য না।”

আজ মঙ্গলবার হাসপাতালের আহত ও নিহতদের তালিকা এবং অভিভাবকরা আসলে তা মিলিয়ে সংখ্যা নিশ্চিত করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন এই শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ছয় দফা দাবিতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে

মঙ্গলবার সারাদিন যে পরিস্থিতি

এদিকে, মঙ্গলবার সকালেও ওই ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে।

আজ ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন না থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।

এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত তিন জন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে বলে জানা যায়। আহতদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ পুরো প্রেস উইং ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।

বেলা এগারটা থেকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল সাড়ে চারটায়ও তারা অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা।

অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রেস উইংয়ের সদস্যরা।

এমন অবস্থায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুপুরেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, সকাল থেকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে।

“আজকে স্কুলের ক্যাম্পাসের ভেতরে আর্মি নেই। আজকে বিমান বাহিনীর সদস্য, সিআইডি এবং পুলিশ রয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা রাতে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যে ভবনে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি। এছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য সব স্থানে গণমাধ্যম, অভিভাবক, শিক্ষার্থী যারাই আসতে চাচ্ছে সবাই আসতে পারছে ” বলেন বিবিসির সংবাদদাতা মুকিমুল আহসান।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণাও শিক্ষা উপদেষ্টা দিয়েছেন বলে জানান মি. আহসান।

এদিকে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ছয় দাবির প্রত্যেকটিকেই যৌক্তিক বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এদিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত–উদ্ধার তৎপরতায় অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলেছে, “উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন, বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে, একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।”

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আহত একজন

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

সেনাবাহিনী বেসামরিক স্থান কর্ডন করতে পারে কি?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন গতকাল সোমবার দুর্ঘটনার স্থান সেনাবাহিনী যেভাবে কর্ডন করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সে বিষয়টিতে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।

কারণ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পদ হওয়ায় দুর্ঘটনাস্থল নিরাপদ করার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর।

এছাড়া উদ্ধার তৎপরতা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় সেনাবাহিনীকে ওই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

একইসাথে সাধারণ মানুষ যাতে উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটায় সে কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনাস্থল ‘কর্ডন’ করতে হবে বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি আ ন ম মুনীরুজ্জামানের মতে, গতকাল দুর্ঘটনার স্থানে পুলিশ থাকলেও কোন দায়িত্ব পালন করেনি।

“কর্ডন একটা ক্রাশ সাইটকে করতে হবেই যাতে করে মানুষ গিয়ে সেখানে কাজে ইন্টারফেয়ার না করে। পুলিশ তো কাজ করছে না। ওখানে পুলিশ কিন্তু ধারেকাছে ছিল কিন্তু তারা কোনও রোল প্লে করেনি। সো সেখানে আর্মিকে স্টেপ ইন করতে হয়েছে” বলেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

গত জুলাইয়ে গণ অভ্যুত্থানের পর অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে আইন – শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দফায় দফায় ওই আদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর ওই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এখনও বলবৎ রয়েছে।

এই আদেশের ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন।

এছাড়া সেনাবাহিনী কর্মকর্তারা আদেশ বহাল থাকা সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

মি. মুনীরুজ্জামানের মতে সেনাবাহিনী এখনও মাঠে থাকায় তাদেরকে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

“যেহেতু আর্মি কিন্তু এখন আর ব্যারাকে নাই, আর্মি মাঠে আছে। যেহেতু ইতিমধ্যে তারা এ ধরনের কাজে সারাদেশে ডেপ্লয়েড বা মোতায়েন আছে কাজেই ন্যাচারালি তাদের সামনে এগিয়ে আসতে হয়েছে বা তাদেরকে ডেকে আনা হয়েছে। এখানে আমি কোন ব্যত্যয় দেখছি না” বলেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

ওই আদেশের কারণেই এ ধরনের উদ্ধার তৎপরতার কাজে মাঠে থাকা সেনাবাহিনীকে প্রথমে ডাকা হয়েছে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

তবে উদ্ধার তৎপরতা কর্মকাণ্ডে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

” পুলিশতো থাকলেও কাজ করছে না। প্রশ্ন করা উচিত কেন পুলিশ কাজ করে না? কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও রোল প্লে করতে পারে না?” বলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

বিধ্বস্ত যুদ্ধ বিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পত্তি হওয়ায় সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“যেহেতু ডিফেন্সের অ্যাসেট পড়ে আছে, ক্রাশ করেছে ওইটার জন্য তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু ওখানে এয়ারক্রাফ্ট পড়ে আছে ওই সাইটটাতো তাদের সিকিউর করতে হবে” বলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

” পুলিশ ঘটনাস্থলে কর্ডন করার দায়িত্বে ছিল “

তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতার কথা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দাবি করেন সোমবার ঘটনাস্থল কর্ডন বা ঘেরাও করার দায়িত্বে পুলিশও ছিল।

বিবিসি বাংলাকে মি. রহমান বলেন, ” পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলই। কালকেও ছিল আজকেও আছে। সব জায়গায় পুলিশ ঘটনাস্থলে প্রথম রেসপন্ডেন্ট পুলিশই যায় এবং এইখানেও পুলিশ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে গেছে।”

উদ্ধার তৎপরতায় ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই ছিল উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, ” পুলিশ ইনঅ্যাটিভ বিষয়টা সঠিক না। পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে কর্ডন করার দায়িত্বেও ছিল, উদ্ধার কাজেও কাজ করেছে এবং এখনও পুলিশ সক্রিয় আছে।”

উল্লেখ্য, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১ জন।

বিবিসি বাংলা

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ক্যাম্পাসে মাঝরাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ – কী ঘটেছে?

০৯:০৫:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। তবে কয়েক ঘণ্টা পরেই সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ‘কর্ডন’ করে নিয়ন্ত্রণ নেয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বের করে দেয়া হয় এবং আর কাউকে তখন ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

পরে সোমবার দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিভিন্ন হোস্টেলে থাকা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ওই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চেয়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের তথ্য গোপনের অভিযোগে করে তারা।

একই সাথে শিক্ষার্থীদের কেন দুপুরে ঢুকতে দেয়া হয়নি এবং সেসময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয় এমন অভিযোগও করে তারা। তাদের বেশিরভাগই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থী।

সোমবার দিবাগত রাত দুইটায় কেন স্কুল ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুলেন্স এমন প্রশ্ন তোলেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রাতেই ক্যাম্পাসের প্রবেশ গেইট খুলে তাদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়।

পরে দুইজন শিক্ষক তাদেরকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায়।

পরে আজ মঙ্গলবার সকালেও শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে।

বিবিসি বাংলার সর্বশেষ খবর ও বিশ্লেষণ এখন সরাসরি আপনার ফোনে।

ফলো করুন, নোটিফিকেশন অন রাখুন

বিবিসি বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ, আহতদের সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ, শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় সেনা সদস্যদের জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, নিহতদের পরিবারকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এছাড়াও বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো উড়োজাহাজ বাতিল করা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে মঙ্গলবার সারাদিন বিক্ষোভ করেছে তারা।

সকালে শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন উপদেষ্টারা।

ঘটনাস্থলে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারাদিন বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এই ঘটনায় অন্তত তিন জনের মাথা ফেটে গেছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুই দফায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে সেনাবাহিনী এ ধরনের বেসামরিক স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে কি না? একই সাথে ওই স্থানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে কি না?

কেনই বা রাতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা? কি ঘটেছে সেখানে?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন গতকাল সোমবার দুর্ঘটনার স্থান সেনাবাহিনী যেভাবে কর্ডন বা ঘেরাও করে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাতে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। কারণ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পদ হওয়ায় দুর্ঘটনাস্থল নিরাপদ করার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর।

দুর্ঘটনাস্থলের ম্যাপ

কি ঘটেছে সোমবার দিবাগত রাতে?

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে সোমবার দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়, বিক্ষোভ করে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেইট খোলার জন্য তারা ধাক্কাধাক্কি করলেও খোলা হয়নি।

গণমাধ্যমের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত আড়াইটায় ক্যাম্পাসে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করায় আহত ও নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হবে না বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা। কারণ তাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

সোমবার সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কেন তাদের বের করে দিয়েছে এমন অভিযোগ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

তাদের অভিযোগ দুপুরে সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বের করতে লাঠিচার্জও করা হয়েছে।

আবার প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে রাতে দেড়টার পরে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া মধ্যরাতে মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করতেও দেখা যায় তাদের।

উল্লেখ্য, মধ্যরাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন।

বিক্ষোভের এক পর্যায়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা জোরে জোরে ধাক্কা দিলে খুলে দেয়া হয় প্রধান ফটক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে দুইজন শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়। পরে তারা যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে অবস্থান নেয়।

শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ এবং নিহত ও আহতদের সঠিক সংখ্যা বা তালিকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে জানান।

আজ মঙ্গলবার সকালে উপদেষ্টারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদেরকে অবহিত করেন।

একই সাথে স্কুলের কো-অর্ডিনেটর শিক্ষক এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সন্তানও নিহত হয়েছে বলে তাদের জানানো হয়।

নিহতের সংখ্যা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ তৎপর রয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন এই শিক্ষকরা। কোন মরদেহ যাতে ক্যাম্পাস থেকে বের না হয় সেজন্য শিক্ষকরা রাতেও পাহারায় রয়েছেন বলে তিনি তাদের প্রতিশ্রুতি দেন।

শিক্ষার্থীদের কেন ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নে একজন শিক্ষক বলেন, “এটাতো আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই ছিল না। এটা টোটালি সেনাবাহিনী কর্ডন করছে। তারা কোন ভাবে কাজ করবে তাদের রুল এন্ড রেগুলেশনস কি এটাতো আমাদের বলতে বাধ্য না।”

আজ মঙ্গলবার হাসপাতালের আহত ও নিহতদের তালিকা এবং অভিভাবকরা আসলে তা মিলিয়ে সংখ্যা নিশ্চিত করা হবে বলে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন এই শিক্ষক।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
ছয় দফা দাবিতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে

মঙ্গলবার সারাদিন যে পরিস্থিতি

এদিকে, মঙ্গলবার সকালেও ওই ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে।

আজ ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী মোতায়েন না থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দুপুর সোয়া দুইটার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।

এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে অন্তত তিন জন শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে বলে জানা যায়। আহতদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও আইন উপদেষ্টাসহ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ পুরো প্রেস উইং ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা।

বেলা এগারটা থেকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিকেল সাড়ে চারটায়ও তারা অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা।

অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ রয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রেস উইংয়ের সদস্যরা।

এমন অবস্থায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুপুরেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলে দ্বিতীয় দফায় পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানান, সকাল থেকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে ছয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছে।

“আজকে স্কুলের ক্যাম্পাসের ভেতরে আর্মি নেই। আজকে বিমান বাহিনীর সদস্য, সিআইডি এবং পুলিশ রয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা রাতে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সকালে খুলে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র যে ভবনে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখান থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডি। এছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য সব স্থানে গণমাধ্যম, অভিভাবক, শিক্ষার্থী যারাই আসতে চাচ্ছে সবাই আসতে পারছে ” বলেন বিবিসির সংবাদদাতা মুকিমুল আহসান।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণাও শিক্ষা উপদেষ্টা দিয়েছেন বলে জানান মি. আহসান।

এদিকে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ছয় দাবির প্রত্যেকটিকেই যৌক্তিক বলে মনে করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এদিকে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত–উদ্ধার তৎপরতায় অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বলেছে, “উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন, বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে, একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।”

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আহত একজন

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

সেনাবাহিনী বেসামরিক স্থান কর্ডন করতে পারে কি?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন গতকাল সোমবার দুর্ঘটনার স্থান সেনাবাহিনী যেভাবে কর্ডন করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সে বিষয়টিতে কোন ব্যত্যয় ঘটেনি।

কারণ বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পদ হওয়ায় দুর্ঘটনাস্থল নিরাপদ করার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর।

এছাড়া উদ্ধার তৎপরতা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকায় সেনাবাহিনীকে ওই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

একইসাথে সাধারণ মানুষ যাতে উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যাঘাত না ঘটায় সে কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনাস্থল ‘কর্ডন’ করতে হবে বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি আ ন ম মুনীরুজ্জামানের মতে, গতকাল দুর্ঘটনার স্থানে পুলিশ থাকলেও কোন দায়িত্ব পালন করেনি।

“কর্ডন একটা ক্রাশ সাইটকে করতে হবেই যাতে করে মানুষ গিয়ে সেখানে কাজে ইন্টারফেয়ার না করে। পুলিশ তো কাজ করছে না। ওখানে পুলিশ কিন্তু ধারেকাছে ছিল কিন্তু তারা কোনও রোল প্লে করেনি। সো সেখানে আর্মিকে স্টেপ ইন করতে হয়েছে” বলেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

গত জুলাইয়ে গণ অভ্যুত্থানের পর অগাস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে আইন – শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

দফায় দফায় ওই আদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর ওই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এখনও বলবৎ রয়েছে।

এই আদেশের ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন।

এছাড়া সেনাবাহিনী কর্মকর্তারা আদেশ বহাল থাকা সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

মি. মুনীরুজ্জামানের মতে সেনাবাহিনী এখনও মাঠে থাকায় তাদেরকে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।

“যেহেতু আর্মি কিন্তু এখন আর ব্যারাকে নাই, আর্মি মাঠে আছে। যেহেতু ইতিমধ্যে তারা এ ধরনের কাজে সারাদেশে ডেপ্লয়েড বা মোতায়েন আছে কাজেই ন্যাচারালি তাদের সামনে এগিয়ে আসতে হয়েছে বা তাদেরকে ডেকে আনা হয়েছে। এখানে আমি কোন ব্যত্যয় দেখছি না” বলেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

ওই আদেশের কারণেই এ ধরনের উদ্ধার তৎপরতার কাজে মাঠে থাকা সেনাবাহিনীকে প্রথমে ডাকা হয়েছে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

তবে উদ্ধার তৎপরতা কর্মকাণ্ডে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

” পুলিশতো থাকলেও কাজ করছে না। প্রশ্ন করা উচিত কেন পুলিশ কাজ করে না? কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও রোল প্লে করতে পারে না?” বলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

বিধ্বস্ত যুদ্ধ বিমানটি সামরিক বাহিনীর সম্পত্তি হওয়ায় সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

“যেহেতু ডিফেন্সের অ্যাসেট পড়ে আছে, ক্রাশ করেছে ওইটার জন্য তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু ওখানে এয়ারক্রাফ্ট পড়ে আছে ওই সাইটটাতো তাদের সিকিউর করতে হবে” বলেন মি. মুনীরুজ্জামান।

” পুলিশ ঘটনাস্থলে কর্ডন করার দায়িত্বে ছিল “

তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতার কথা সঠিক নয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দাবি করেন সোমবার ঘটনাস্থল কর্ডন বা ঘেরাও করার দায়িত্বে পুলিশও ছিল।

বিবিসি বাংলাকে মি. রহমান বলেন, ” পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিলই। কালকেও ছিল আজকেও আছে। সব জায়গায় পুলিশ ঘটনাস্থলে প্রথম রেসপন্ডেন্ট পুলিশই যায় এবং এইখানেও পুলিশ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে গেছে।”

উদ্ধার তৎপরতায় ফায়ার সার্ভিসসহ সবাই ছিল উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, ” পুলিশ ইনঅ্যাটিভ বিষয়টা সঠিক না। পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে কর্ডন করার দায়িত্বেও ছিল, উদ্ধার কাজেও কাজ করেছে এবং এখনও পুলিশ সক্রিয় আছে।”

উল্লেখ্য, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১ জন।

বিবিসি বাংলা