০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

বিচ্ছিন্ন সেন্টিনেল জনগোষ্ঠী জনশুমারির প্রস্তুতিতে ভারতের নজরে

  • কিরণ শর্মা
  • ০৫:২৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • 35

ভারত ছয়বছর বিলম্বের পর আগামী জনশুমারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ক্ষুদ্র সেন্টিনেলেস জনগোষ্ঠীর হিসাব নেওয়া সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন” হিসেবে পরিচিত এই আদিবাসীরা বহির্জগতের সঙ্গে যেকোনো যোগাযোগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

দশবছরে একবার হওয়া এই সারাদেশব্যাপী জনশুমারি ২০২১সালে হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড‑১৯ মহামারির কারণে পিছিয়ে যায়। অধিকাংশ রাজ্যে গণনা শুরু হবে মার্চ২০২৭‑এতবে দেশের উত্তরের কয়েকটি রাজ্য ও অঞ্চলে তা শুরুর কথা আগামী বছর অক্টোবরে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এই শুমারিতে জনসংখ্যার পাশাপাশি জাতপাত‑সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।

প্রায় ৬০,০০০বছর ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বনে শিকারমাছ ধরা ও সংগ্রহ করে জীবনযাপন করা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের শত্রুভাবাপন্ন উপজাতিদের গোনা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তারা কোনো পোশাক পরে নাকেবল কোমরে তন্তু ও পাতার আচ্ছাদন থাকে। গবেষকেরা দূর থেকে দেখেছেনতাদের কাছে ধনুক‑বাণ রয়েছে।

২০১১সালের শেষ জনশুমারিতে সেন্টিনেলেস জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ধরা হয় ১৫এর মধ্যে তিনজন নারী। ২০১৯সালে সরকারের এক বিবৃতি তাদের আনুমানিক সংখ্যা ৫০বলে উল্লেখ করে।

বাহ্যিক সংস্পর্শে তাদের প্রবল অনীহা ও আধুনিক रोगের প্রতি প্রবল দুর্বলতার কারণে কর্তৃপক্ষ সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কথা ভাবছে না।

বহিরাগতদের ওপর হামলা চালানো এই গোষ্ঠীর একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য। ২০১৮সালের নভেম্বরে অনুমতি ছাড়া দ্বীপে ওঠা এক মার্কিন খ্রিস্টান মিশনারিকে সেন্টিনেলেসরা হত্যার অভিযোগ রয়েছে। দ্বীপের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেও যাওয়া নিষিদ্ধ।

সেন্টিনেলেসদের সম্পর্কে আরও জানতে নিক্কেইএশিয়া নৃবিজ্ঞানী মধুমালা চট্টোপাধ্যায়কে খুঁজে বের করেছে১৯৯১সালের জানুয়ারিতে তিনিই প্রথম নারী গবেষক হিসেবে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করেন। ২০২১সালে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রকের যুগ্ম পরিচালক পদ থেকে অবসর নেওয়া ৬৪বছর বয়সী চট্টোপাধ্যায় আন্দামান‑নিকোবরের পাঁচটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপজাতি গোষ্ঠী” (পিভিটিজি)সেন্টিনেলেসজারোয়াওঙ্গিগ্রেট আন্দামানিজ ও সোমপেনসম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। ১৯৮৯‑৯৫সাল পর্যন্ত এলাকায় পোস্টিংকালে তিনি অপেক্ষাকৃত কম শত্রুভাবাপন্ন গোষ্ঠীগুলোর মাঝে মাসের পর মাস থাকতেন এবং পরে মাঝেমাঝে তাদের কাছে যেতেন।

সেন্টিনেলেস বাদে অন্যান্য অনেক পিভিটিজির সদস্য ইতিমধ্যে ভারতের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেন্টিনেলেসদের কাছে পৌঁছানো জনশুমারি বা ভোটের জন্যই সম্ভব নয়।” স্থানীয় প্রশাসন তাদের সুরক্ষায় কোনও পরিকল্পনা প্রকাশ করে না। তিনি জানানস্যাটেলাইট ছবি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ সম্ভব।

সেন্টিনেলেসদের সঙ্গে মাত্র কয়েকবারই যোগাযোগ হয়েছেএর একটি ১৩‑সদস্যের সরকারি দলে তিনিই একমাত্র নারী ছিলেন। ১৯৯১সালের ৪জানুয়ারি প্রথমবার দুটি নৌকায় দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তারা দূর থেকে জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করেন।

বিঘ্ন কমাতে কর্মকর্তারা প্রথমে উপহার হিসেবে পানি ছুঁড়ে নারকেল ফেলে দেন। একটু দ্বিধার পর কিছু পুরুষ ভাসমান নারকেল সংগ্রহ করতে আসেঅন্য পুরুষনারী ও শিশুরা তট থেকে দেখে। সেই যাত্রায় তারা ১৪জন পুরুষছয়নারী ও আটশিশুমোট ২৮জনকে গণনা করেন।

পরের ও শেষ মিশন ২১ফেব্রুয়ারি ১৯৯১‑এ আরও স্বচ্ছন্দ পরিবেশে হয়। তখন কোনো সেন্টিনেলেস অস্ত্র বহন করছিল নাকয়েকজন পুরুষ নৌকায় উঠে বস্তাসহ নারকেল নেয়।

দ্বীপের ভেতরে তারা কখনো যায়নি। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকা ছোট জনসংখ্যার এই গোষ্ঠীর ক্ষতি এড়াতে দ্বিতীয় মিশনের পর ভারত সরকার আর যোগাযোগ না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০০৪সালের ভারত মহাসাগরীয় সুনামির পর আকাশপথে নজরদারিতে দেখা যায়তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নিহেলিকপ্টারের দিকে তীর ছোড়ে। সরকার দৃষ্টি রাখিহাত দিই না” নীতি অনুসরণ করে গোষ্ঠীটি রক্ষায়।

১৯৫৬‑তে বাইরের মানুষের জন্য দ্বীপে যাতায়াত নিষিদ্ধ হয়১৯৯০‑এর দশকে অনুমোদিত সরকারি দলগুলোর সফরও বন্ধ হয়। ভারতীয় কোস্ট গার্ডনৌবাহিনী ও মেরিন পুলিশ দ্বীপের আকাশ‑সামুদ্রিক নজরদারি চালায়।

চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে এক মার্কিন পর্যটক অনুমতি ছাড়া দ্বীপে প্রবেশ করে ধরা পড়েনযদিও সেন্টিনেলেসদের সঙ্গে দেখা হয়নিতিনি একটি ডায়েট কোকের ক্যান ও নারকেল রেখে আসেন বলে জানান।

অন্য পিভিটিজির মধ্যে গ্রেট আন্দামানিজদের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে সহজবলেন চট্টোপাধ্যায়। জারোয়ার কিছু দল বহির্জগতের প্রতি বন্ধুবৎসলভবিষ্যতে তারা জনশুমারিতে অংশ নিতে পারে। এরা অন্যান্য জারোয়া দলকেও রাজি করাতে পারেযদিও সময় লাগবে,” যোগ করেন তিনি।

ওঙ্গি জনগোষ্ঠীকে রাজি করাতে পারলে তারা সরকারি উদ্যোগে অংশ নেবেতবে সোমপেনরা আধা‑ভবঘুরে ও ছড়িয়ে‑ছিটিয়ে থাকায় তাদের গণনা করা কঠিন হবে।

বিচ্ছিন্ন সেন্টিনেল জনগোষ্ঠী জনশুমারির প্রস্তুতিতে ভারতের নজরে

০৫:২৬:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

ভারত ছয়বছর বিলম্বের পর আগামী জনশুমারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ক্ষুদ্র সেন্টিনেলেস জনগোষ্ঠীর হিসাব নেওয়া সরকারকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন” হিসেবে পরিচিত এই আদিবাসীরা বহির্জগতের সঙ্গে যেকোনো যোগাযোগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

দশবছরে একবার হওয়া এই সারাদেশব্যাপী জনশুমারি ২০২১সালে হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড‑১৯ মহামারির কারণে পিছিয়ে যায়। অধিকাংশ রাজ্যে গণনা শুরু হবে মার্চ২০২৭‑এতবে দেশের উত্তরের কয়েকটি রাজ্য ও অঞ্চলে তা শুরুর কথা আগামী বছর অক্টোবরে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এই শুমারিতে জনসংখ্যার পাশাপাশি জাতপাত‑সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।

প্রায় ৬০,০০০বছর ধরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বনে শিকারমাছ ধরা ও সংগ্রহ করে জীবনযাপন করা উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের শত্রুভাবাপন্ন উপজাতিদের গোনা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তারা কোনো পোশাক পরে নাকেবল কোমরে তন্তু ও পাতার আচ্ছাদন থাকে। গবেষকেরা দূর থেকে দেখেছেনতাদের কাছে ধনুক‑বাণ রয়েছে।

২০১১সালের শেষ জনশুমারিতে সেন্টিনেলেস জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ধরা হয় ১৫এর মধ্যে তিনজন নারী। ২০১৯সালে সরকারের এক বিবৃতি তাদের আনুমানিক সংখ্যা ৫০বলে উল্লেখ করে।

বাহ্যিক সংস্পর্শে তাদের প্রবল অনীহা ও আধুনিক रोगের প্রতি প্রবল দুর্বলতার কারণে কর্তৃপক্ষ সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কথা ভাবছে না।

বহিরাগতদের ওপর হামলা চালানো এই গোষ্ঠীর একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য। ২০১৮সালের নভেম্বরে অনুমতি ছাড়া দ্বীপে ওঠা এক মার্কিন খ্রিস্টান মিশনারিকে সেন্টিনেলেসরা হত্যার অভিযোগ রয়েছে। দ্বীপের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেও যাওয়া নিষিদ্ধ।

সেন্টিনেলেসদের সম্পর্কে আরও জানতে নিক্কেইএশিয়া নৃবিজ্ঞানী মধুমালা চট্টোপাধ্যায়কে খুঁজে বের করেছে১৯৯১সালের জানুয়ারিতে তিনিই প্রথম নারী গবেষক হিসেবে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করেন। ২০২১সালে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রকের যুগ্ম পরিচালক পদ থেকে অবসর নেওয়া ৬৪বছর বয়সী চট্টোপাধ্যায় আন্দামান‑নিকোবরের পাঁচটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ উপজাতি গোষ্ঠী” (পিভিটিজি)সেন্টিনেলেসজারোয়াওঙ্গিগ্রেট আন্দামানিজ ও সোমপেনসম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। ১৯৮৯‑৯৫সাল পর্যন্ত এলাকায় পোস্টিংকালে তিনি অপেক্ষাকৃত কম শত্রুভাবাপন্ন গোষ্ঠীগুলোর মাঝে মাসের পর মাস থাকতেন এবং পরে মাঝেমাঝে তাদের কাছে যেতেন।

সেন্টিনেলেস বাদে অন্যান্য অনেক পিভিটিজির সদস্য ইতিমধ্যে ভারতের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেন্টিনেলেসদের কাছে পৌঁছানো জনশুমারি বা ভোটের জন্যই সম্ভব নয়।” স্থানীয় প্রশাসন তাদের সুরক্ষায় কোনও পরিকল্পনা প্রকাশ করে না। তিনি জানানস্যাটেলাইট ছবি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণ সম্ভব।

সেন্টিনেলেসদের সঙ্গে মাত্র কয়েকবারই যোগাযোগ হয়েছেএর একটি ১৩‑সদস্যের সরকারি দলে তিনিই একমাত্র নারী ছিলেন। ১৯৯১সালের ৪জানুয়ারি প্রথমবার দুটি নৌকায় দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তারা দূর থেকে জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করেন।

বিঘ্ন কমাতে কর্মকর্তারা প্রথমে উপহার হিসেবে পানি ছুঁড়ে নারকেল ফেলে দেন। একটু দ্বিধার পর কিছু পুরুষ ভাসমান নারকেল সংগ্রহ করতে আসেঅন্য পুরুষনারী ও শিশুরা তট থেকে দেখে। সেই যাত্রায় তারা ১৪জন পুরুষছয়নারী ও আটশিশুমোট ২৮জনকে গণনা করেন।

পরের ও শেষ মিশন ২১ফেব্রুয়ারি ১৯৯১‑এ আরও স্বচ্ছন্দ পরিবেশে হয়। তখন কোনো সেন্টিনেলেস অস্ত্র বহন করছিল নাকয়েকজন পুরুষ নৌকায় উঠে বস্তাসহ নারকেল নেয়।

দ্বীপের ভেতরে তারা কখনো যায়নি। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকা ছোট জনসংখ্যার এই গোষ্ঠীর ক্ষতি এড়াতে দ্বিতীয় মিশনের পর ভারত সরকার আর যোগাযোগ না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০০৪সালের ভারত মহাসাগরীয় সুনামির পর আকাশপথে নজরদারিতে দেখা যায়তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নিহেলিকপ্টারের দিকে তীর ছোড়ে। সরকার দৃষ্টি রাখিহাত দিই না” নীতি অনুসরণ করে গোষ্ঠীটি রক্ষায়।

১৯৫৬‑তে বাইরের মানুষের জন্য দ্বীপে যাতায়াত নিষিদ্ধ হয়১৯৯০‑এর দশকে অনুমোদিত সরকারি দলগুলোর সফরও বন্ধ হয়। ভারতীয় কোস্ট গার্ডনৌবাহিনী ও মেরিন পুলিশ দ্বীপের আকাশ‑সামুদ্রিক নজরদারি চালায়।

চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে এক মার্কিন পর্যটক অনুমতি ছাড়া দ্বীপে প্রবেশ করে ধরা পড়েনযদিও সেন্টিনেলেসদের সঙ্গে দেখা হয়নিতিনি একটি ডায়েট কোকের ক্যান ও নারকেল রেখে আসেন বলে জানান।

অন্য পিভিটিজির মধ্যে গ্রেট আন্দামানিজদের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে সহজবলেন চট্টোপাধ্যায়। জারোয়ার কিছু দল বহির্জগতের প্রতি বন্ধুবৎসলভবিষ্যতে তারা জনশুমারিতে অংশ নিতে পারে। এরা অন্যান্য জারোয়া দলকেও রাজি করাতে পারেযদিও সময় লাগবে,” যোগ করেন তিনি।

ওঙ্গি জনগোষ্ঠীকে রাজি করাতে পারলে তারা সরকারি উদ্যোগে অংশ নেবেতবে সোমপেনরা আধা‑ভবঘুরে ও ছড়িয়ে‑ছিটিয়ে থাকায় তাদের গণনা করা কঠিন হবে।