০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অপরিচিতকে টাকা পাঠালে হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড

সহায়তার ছলে আইনি ফাঁদ

একদল মানুষ এটিএম বুথে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের একজন বলছে, কার্ড কাজ করছে না বা পরিচয়পত্র ভুলে গেছে—আপনি কী দয়া করে আপনার আইডি দিয়ে টাকা জমা বা ট্রান্সফার করে দেবেন? অনেকেই সদিচ্ছা থেকে সাহায্য করেন। কিন্তু আইনের চোখে এই “সহায়তা” আপনাকে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে যদি সেই হিসাবটি মাদক, সন্ত্রাস অর্থায়ন বা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়, দোষের ভাগীদার হতে পারেন আপনিও।

কী ধরনের ঝুঁকি?

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অজানা বা যাচাইহীন ব্যক্তির হিসাব-এ টাকা জমা বা প্রেরণ করলে কঠোর আইনগত জবাবদিহিতায় পড়তে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন একাধিক ঘটনার পর ব্যাংক অনেক গ্রাহককে সন্দেহজনক হিসাবের কারণে ট্রান্সফার থামিয়ে দিয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, অপরিচিতের অনুরোধে এলোমেলোভাবে টাকা পাঠানোই ছিল মূল বিপদ।

Reasons You Should Follow Your Lawyer's Advice

আইনজীবীর পরামর্শ

আইনজীবী ও আইনি পরামর্শক আবীর আল দাহমানি বলেন:

যার পরিচয় জানেন না, উৎস যাচাই করেননি—এমন কাউকে টাকা জমা বা ট্রান্সফার করা আইনগত দায় তৈরি করে। অনেকেই এটিএমে সাহায্য চান, কিন্তু তা সন্দেহজনক লেনদেন আড়াল করার ফাঁদও হতে পারে। আইন এখানে প্রতারণায় পড়া ও অবহেলাকে খুব বেশি আলাদা করে না—সদিচ্ছা শাস্তি কমাতে পারে, কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না।

তিনি আরও বলেন, যে কেউ টাকা পাঠানোর আগে নিশ্চিত হবেন—টাকার উৎস বৈধ কিনা, প্রাপকের পরিচয় ও লেনদেনের উদ্দেশ্য কী। এটিএমে পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে অপরিচিতকে টাকা পাঠানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার আইডি দিয়ে করা লেনদেনের দায় আপনারই।

মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন: কী বলে

ফেডারেল মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন ও অবৈধ সংগঠনবিরোধী আইনের (ধারা ২) ভাষ্য অনুযায়ী:

যে কেউ জানেন যে অর্থ অপরাধ থেকে এসেছে এবং সেটির উৎস গোপন বা আড়াল করতে ট্রান্সফার, স্থানান্তর বা যে কোনো আর্থিক লেনদেন করেন—তিনি মানি লন্ডারিং অপরাধে দোষী।

Breaking This ONE Law Will Land You UAE's Biggest Fine - AED 500,000 To AED 1 Million - Gulfbuzz

শাস্তি (ধারা ২২):

১ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড

কমপক্ষে ১,০০,০০০ দিরহাম এবং সর্বোচ্চ ৫০,০০,০০০ দিরহাম জরিমানা

বা উভয় দণ্ডই

আইন এখানে কোনো নমনীয়তা রাখে না। আইন না জানার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

পাবলিক প্রসিকিউশনের সতর্কবার্তা

ইউএই পাবলিক প্রসিকিউশন সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে—অপরিচিত বা যাচাইহীন ব্যক্তিকে টাকা পাঠানো অপরাধীদের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার ব্যক্তিগত আইডি ব্যবহার করে অন্যের হিসাব-এ টাকা পাঠালে সেটি মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
অবৈধ অর্থ স্থানান্তর বা তার উৎস গোপন করাও মানি লন্ডারিংয়ের অংশ।

অপরাধের উপাদানগুলো কী?

অপরিচিতকে টাকা পাঠালে আপনি মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পড়তে পারেন।

অবৈধ উৎসের অর্থকে বৈধ রূপ দিতে উৎস, পরিচয় বা প্রকৃতি গোপন/ছদ্মবেশ দেওয়া হয়।

ব্যাংক ট্রান্সফার এই আড়ালকরণে ব্যবহৃত হতে পারে।

আপনি না জানলেও, পরবর্তীতে অর্থের উৎস অবৈধ প্রমাণিত হলে আইনগত সমস্যায় পড়বেন।

যেকোনো আর্থিক লেনদেনে উৎসের বৈধতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সন্দেহ থাকলে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ নিন।

Cybercrime: being bad is big business

সাইবার অপরাধ আইনের শাস্তি

ফেডারেল ডিক্রি আইন নং ৩৪ (২০২১) অনুযায়ী গুজব ও সাইবার অপরাধ দমন আইনের ধারা ৩০ বলছে:
মানি লন্ডারিং আইন অক্ষুণ্ন রেখে—

ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য নেটওয়ার্ক, ইলেকট্রনিক সিস্টেম বা যে কোনো আইটি মাধ্যম ব্যবহার করে নিম্নলিখিত কাজ করলে শাস্তি:

সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড

১,০০,০০০ থেকে ৫০,০০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা
অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে:

অবৈধ অর্থ ট্রান্সফার/জমা/স্থানান্তর করে উৎস গোপন বা ছদ্মবেশ দেওয়া

অবৈধ অর্থের সত্যতা, উৎস, চলাচল, মালিকানা বা সংশ্লিষ্ট অধিকার লুকিয়ে রাখা

অবৈধ উৎস জেনেও অর্থ অধিগ্রহণ, দখল বা ব্যবহার করা

কখন আপনাকে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধী ধরা হবে

আপনি জানতেন অর্থ কোনো গুরুতর অপরাধ (ফেলনি) বা লঘু অপরাধ (মিসডিমিনার) থেকে এসেছে

ইচ্ছাকৃতভাবে সেই অর্থ স্থানান্তর/ব্যবহার করে উৎস গোপন করেছেন

অর্থের প্রকৃতি, অবস্থান, ব্যবহারের ধরন, চলাচল, মালিকানা বা অধিকার আড়াল করেছেন

কিংবা অর্থ গ্রহণের পর তা নিজের কাছে রেখেছেন, ব্যবহার করেছেন বা মূল অপরাধীকে শাস্তি এড়াতে সহায়তা করেছেন

Banking Guide - Checking, Savings, CDs - Banking Articles

কী করবেন—ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ

অপরিচিতের অনুরোধে এটিএমে বা অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না

প্রাপকের পরিচয়, লেনদেনের উদ্দেশ্য ও অর্থের উৎস নিশ্চিত করুন

সন্দেহ হলে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিন

নিজের আইডি ও ব্যাংক তথ্য কঠোরভাবে সুরক্ষিত রাখুন

অপরিচিতের জন্য টাকা পাঠাবেন না। আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি এতটাই বড় যে সামান্য সহায়তা আপনাকে বছরের পর বছর জেলে পাঠাতে পারে এবং লাখো দিরহাম জরিমানার মুখে ফেলতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অপরিচিতকে টাকা পাঠালে হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড

০৫:৫৬:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

সহায়তার ছলে আইনি ফাঁদ

একদল মানুষ এটিএম বুথে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের একজন বলছে, কার্ড কাজ করছে না বা পরিচয়পত্র ভুলে গেছে—আপনি কী দয়া করে আপনার আইডি দিয়ে টাকা জমা বা ট্রান্সফার করে দেবেন? অনেকেই সদিচ্ছা থেকে সাহায্য করেন। কিন্তু আইনের চোখে এই “সহায়তা” আপনাকে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। পরবর্তীতে যদি সেই হিসাবটি মাদক, সন্ত্রাস অর্থায়ন বা মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়, দোষের ভাগীদার হতে পারেন আপনিও।

কী ধরনের ঝুঁকি?

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অজানা বা যাচাইহীন ব্যক্তির হিসাব-এ টাকা জমা বা প্রেরণ করলে কঠোর আইনগত জবাবদিহিতায় পড়তে হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন একাধিক ঘটনার পর ব্যাংক অনেক গ্রাহককে সন্দেহজনক হিসাবের কারণে ট্রান্সফার থামিয়ে দিয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, অপরিচিতের অনুরোধে এলোমেলোভাবে টাকা পাঠানোই ছিল মূল বিপদ।

Reasons You Should Follow Your Lawyer's Advice

আইনজীবীর পরামর্শ

আইনজীবী ও আইনি পরামর্শক আবীর আল দাহমানি বলেন:

যার পরিচয় জানেন না, উৎস যাচাই করেননি—এমন কাউকে টাকা জমা বা ট্রান্সফার করা আইনগত দায় তৈরি করে। অনেকেই এটিএমে সাহায্য চান, কিন্তু তা সন্দেহজনক লেনদেন আড়াল করার ফাঁদও হতে পারে। আইন এখানে প্রতারণায় পড়া ও অবহেলাকে খুব বেশি আলাদা করে না—সদিচ্ছা শাস্তি কমাতে পারে, কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না।

তিনি আরও বলেন, যে কেউ টাকা পাঠানোর আগে নিশ্চিত হবেন—টাকার উৎস বৈধ কিনা, প্রাপকের পরিচয় ও লেনদেনের উদ্দেশ্য কী। এটিএমে পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে অপরিচিতকে টাকা পাঠানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আপনার আইডি দিয়ে করা লেনদেনের দায় আপনারই।

মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন: কী বলে

ফেডারেল মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসবাদ অর্থায়ন ও অবৈধ সংগঠনবিরোধী আইনের (ধারা ২) ভাষ্য অনুযায়ী:

যে কেউ জানেন যে অর্থ অপরাধ থেকে এসেছে এবং সেটির উৎস গোপন বা আড়াল করতে ট্রান্সফার, স্থানান্তর বা যে কোনো আর্থিক লেনদেন করেন—তিনি মানি লন্ডারিং অপরাধে দোষী।

Breaking This ONE Law Will Land You UAE's Biggest Fine - AED 500,000 To AED 1 Million - Gulfbuzz

শাস্তি (ধারা ২২):

১ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ড

কমপক্ষে ১,০০,০০০ দিরহাম এবং সর্বোচ্চ ৫০,০০,০০০ দিরহাম জরিমানা

বা উভয় দণ্ডই

আইন এখানে কোনো নমনীয়তা রাখে না। আইন না জানার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।

পাবলিক প্রসিকিউশনের সতর্কবার্তা

ইউএই পাবলিক প্রসিকিউশন সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে—অপরিচিত বা যাচাইহীন ব্যক্তিকে টাকা পাঠানো অপরাধীদের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার ব্যক্তিগত আইডি ব্যবহার করে অন্যের হিসাব-এ টাকা পাঠালে সেটি মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
অবৈধ অর্থ স্থানান্তর বা তার উৎস গোপন করাও মানি লন্ডারিংয়ের অংশ।

অপরাধের উপাদানগুলো কী?

অপরিচিতকে টাকা পাঠালে আপনি মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পড়তে পারেন।

অবৈধ উৎসের অর্থকে বৈধ রূপ দিতে উৎস, পরিচয় বা প্রকৃতি গোপন/ছদ্মবেশ দেওয়া হয়।

ব্যাংক ট্রান্সফার এই আড়ালকরণে ব্যবহৃত হতে পারে।

আপনি না জানলেও, পরবর্তীতে অর্থের উৎস অবৈধ প্রমাণিত হলে আইনগত সমস্যায় পড়বেন।

যেকোনো আর্থিক লেনদেনে উৎসের বৈধতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সন্দেহ থাকলে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ নিন।

Cybercrime: being bad is big business

সাইবার অপরাধ আইনের শাস্তি

ফেডারেল ডিক্রি আইন নং ৩৪ (২০২১) অনুযায়ী গুজব ও সাইবার অপরাধ দমন আইনের ধারা ৩০ বলছে:
মানি লন্ডারিং আইন অক্ষুণ্ন রেখে—

ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য নেটওয়ার্ক, ইলেকট্রনিক সিস্টেম বা যে কোনো আইটি মাধ্যম ব্যবহার করে নিম্নলিখিত কাজ করলে শাস্তি:

সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড

১,০০,০০০ থেকে ৫০,০০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা
অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে:

অবৈধ অর্থ ট্রান্সফার/জমা/স্থানান্তর করে উৎস গোপন বা ছদ্মবেশ দেওয়া

অবৈধ অর্থের সত্যতা, উৎস, চলাচল, মালিকানা বা সংশ্লিষ্ট অধিকার লুকিয়ে রাখা

অবৈধ উৎস জেনেও অর্থ অধিগ্রহণ, দখল বা ব্যবহার করা

কখন আপনাকে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধী ধরা হবে

আপনি জানতেন অর্থ কোনো গুরুতর অপরাধ (ফেলনি) বা লঘু অপরাধ (মিসডিমিনার) থেকে এসেছে

ইচ্ছাকৃতভাবে সেই অর্থ স্থানান্তর/ব্যবহার করে উৎস গোপন করেছেন

অর্থের প্রকৃতি, অবস্থান, ব্যবহারের ধরন, চলাচল, মালিকানা বা অধিকার আড়াল করেছেন

কিংবা অর্থ গ্রহণের পর তা নিজের কাছে রেখেছেন, ব্যবহার করেছেন বা মূল অপরাধীকে শাস্তি এড়াতে সহায়তা করেছেন

Banking Guide - Checking, Savings, CDs - Banking Articles

কী করবেন—ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ

অপরিচিতের অনুরোধে এটিএমে বা অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন না

প্রাপকের পরিচয়, লেনদেনের উদ্দেশ্য ও অর্থের উৎস নিশ্চিত করুন

সন্দেহ হলে ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিন

নিজের আইডি ও ব্যাংক তথ্য কঠোরভাবে সুরক্ষিত রাখুন

অপরিচিতের জন্য টাকা পাঠাবেন না। আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি এতটাই বড় যে সামান্য সহায়তা আপনাকে বছরের পর বছর জেলে পাঠাতে পারে এবং লাখো দিরহাম জরিমানার মুখে ফেলতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন।