সে যেন পত্রখানা সম্রাটের সভায় পেশ করে আর সংবাদ দেয় যে, যে-লোক ধর্মানুসন্ধানে ব্রাহ্মণদের দেশে গিয়েছিল সে ফিরে খোটান পর্যন্ত এসেছে।
কাশগড় থেকে দক্ষিণ-পূবে এসে হিউ এনচাঙ খোটানে পৌঁছলেন। এখানে তিনি কয়েক মাস ছিলেন। খোটান সম্বন্ধে হিউ এনচাঙ বলেন যে, এদেশের অর্ধেক অংশ বালিয়াড়িতে ভরা, কম জায়গায়ই চাষ হয়। এখানে কম্বল আর রেশমের কাপড় তৈরি হয়। জেড পাথর পাওয়া যায়। শীত বেশি নয় কিন্তু ঘূর্ণী হাওয়া আর বালির ঝড় হয়। ভালোমানুষ, কারিগরী ভালোবাসে। এদের অবস্থা সচ্ছল। এরা নৃত্যগীত লোকগুলি ভালোবাসে। পশম আর চামড়ার কাপড় কম লোকেই পরে। বেশি
লোকই রেশম আর সুতীর কাপড় পরে। এদের লিপি মূলে ভারতীয় ছিল, কালক্রমে কিছু বদলে গিয়েছে।
হিউএনচাঙ সিন্ধু নদী পার হওয়ার সময়ে যে শাস্ত্রের অনুলিপিগুলি হারিয়েছিলেন কুচা ও কাশগড়ে সেগুলি কতক কতক আবার অনুলিপি করবার জন্যে লোক পাঠিয়েছিলেন। সেইজন্যে খোটানে তাঁর কিছুদিন থাকতে হল।
তাছাড়া চীনসম্রাটের আদেশ অমান্য করে তিনি চীন ত্যাগ করেছিলেন; সেই জন্যে এখন চীন সাম্রাজ্যে প্রবেশ করবার সময় তাঁর একটু আশঙ্কা হল। খোটানের পরই তাঁকে চীন সাম্রাজ্যের ভিতর প্রবেশ করতে হবে।
সেই জন্যে সম্রাটকে একখানা পত্র লিখে এক যুবকের হাতে দিয়ে তাকে উপদেশ দিলেন যে, সে যেন পত্রখানা সম্রাটের সভায় পেশ করে আর সংবাদ দেয় যে, যে-লোক ধর্মানুসন্ধানে ব্রাহ্মণদের দেশে গিয়েছিল সে ফিরে খোটান পর্যন্ত এসেছে।
পত্রের মর্ম এই ছিল:-
‘শ্রমণ হিউএনচাঙের পত্র।
হিউএনচাঙ শুনেছেন যে পূর্বকালে চীনের পণ্ডিতরা বিদ্যানুসন্ধানের জন্যে দূর দেশে গিয়েছিলেন। তাঁরা বিখ্যাত লোক। তাঁদের আমরা প্রশংসা করি। তা হলে যাঁরা বুদ্ধের শুভধর্মের সূক্ষ্ম পদাঙ্কগুলির অনুসরণে আর ত্রিপিটকের জীববন্ধন-মোক্ষকারী আশ্চর্য বাক্যাবলীর অনুসন্ধানে রত থাকেন, তাঁদের পরিশ্রমকে আমরা তুচ্ছ করব কী সাহসে? পশ্চিমদেশ (ভারতবর্ষ) থেকে বুদ্ধের যে উপদেশাবলী ও ধর্মের নিয়মগুলি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পূর্বদেশে পৌঁছেছে, আমি হিউএনডাঙ, সেগুলি বহুদিন অধ্যয়ন করে, শারীরিক বিপদের আশঙ্কা তুচ্ছ জ্ঞান করে, প্রকৃত তথ্যগুলির অনুসন্ধান করবার সংকল্প করি।
সেই সংকল্প অনুসারে, চেঙ কোআনের তৃতীয় বৎসরের চতুর্থমাসে (৬৩০ খৃস্টাব্দের আষাঢ় মাসে) বাধা-বিপদ সত্ত্বেও গোপনে ভারতবর্ষে যাই। আমি বিস্তৃত বালুময় সমতল, দুধারাবৃত উত্তুঙ্গ পর্বত অতিক্রম ক’রে, লোহার কবাটের গিরিসংকটের ভিতর দিয়ে গিয়েছি; বিশাল তরঙ্গসংকুল গরম হ্রদের পাশ দিয়ে গিয়েছি। চাঙ আন থেকে যাত্রা করে রাজগৃহের নতুন নগরে পৌঁছেছি।
(চলবে)