০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৩)

অষ্টম পরিচ্ছেদ

গৃহকর্তা এক সময়ে পাশের ঘরে গেল। এ-ঘর থেকে আমরা দেরাজের টানা খোলার আওয়াজ পেলুম।
‘মজার বুড়ো,’ ফিসফিস করে আমি বললুম।
‘মজার বটে, কিন্তু,’ সায় দিয়েও চুবুক বললেন, ‘কিন্তু ও জানলা দিয়ে বারবার বাইরের দিকি দেখচে কেন?’
কথাটা বলেই চুবুক ঘাড় ফিরিয়ে ঘরের চারপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। এবার ঘরের এক কোণে পাতা পুরনো একটা চটের থলের দিকে ওঁর চোখ পড়ে গেল। ভুরুটা কাঁচকে উনি উঠে ঘরের ওপাশে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।
এই সময়ে গৃহকর্তা ফিরে এল। ওর হাতে ছিল একটা বোতল। নিজের পাজামার তলাটা দিয়ে বোতলের গায়ে-জমা ধুলো ও মুছে নিল।
‘এই-যে, এস,’ টেবিলের কাছে এসে গৃহকর্তা বলল। ‘ক্যাপটেন শুভাৎস যখন শেষবার এসেছিলেন তখন এ-বোতলটা শেষ করতে পারেন নি। এস, তোমাদের চায়ে একটু করে ব্র্যান্ডি মিশিয়ে দিই। জিনিসটা আমার নিজেরই ভারি পছন্দ, তবে কিনা অতিথদের জন্যে… অতিথ বলে কথা…’ বোতলের মুখে-আটকানো ছিপির বদলে একদলা কাগজ টেনে খুলে বোতলের জিনিসটা আমাদের গেলাস দুটোয় ঢেলে দিল ও। আমার গেলাসটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়াতেই জানলা থেকে চুবুক ছুটে এসে রূঢ়ভাবে আমায় বললেন:
‘আচ্ছা ছেলে তো তুমি! ঘরে-যে সবার জন্যি যথেষ্ট গেলাস নেই, চোখি দেখতে পাও না? যাও, গা এলিয়ে বসে না থেকি জায়গাটা বুড়া ভন্দরনোকরে ছেড়ে দ্যাও দিকি। তুমি পরে খেও। আসুন, বুড়োবাবা, বসুন। আমরা দু-জনা একসঙ্গে খাই।’
হঠাৎ অমন রুক্ষভাবে আমার সঙ্গে কথা বলায় আমি অবাক হয়ে চুবুকের দিকে তাকালুম।
‘না-না, থাক, থাক!’ বলতে-বলতে বৃদ্ধ গেলাসটা ঠেলে সরিয়ে দিল। ‘আমি পরে খাব অখন। তোমরা হলে গিয়ে আমার অতিথ…’
‘খান, বুড়োবাবা,’ দৃঢ়সংকল্পের ভঙ্গিতে গৃহকর্তার দিকে গেলাসটা এগিয়ে দিতে-দিতে চুবুক ফের বললেন।

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৮৩)

০৮:০০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

অষ্টম পরিচ্ছেদ

গৃহকর্তা এক সময়ে পাশের ঘরে গেল। এ-ঘর থেকে আমরা দেরাজের টানা খোলার আওয়াজ পেলুম।
‘মজার বুড়ো,’ ফিসফিস করে আমি বললুম।
‘মজার বটে, কিন্তু,’ সায় দিয়েও চুবুক বললেন, ‘কিন্তু ও জানলা দিয়ে বারবার বাইরের দিকি দেখচে কেন?’
কথাটা বলেই চুবুক ঘাড় ফিরিয়ে ঘরের চারপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। এবার ঘরের এক কোণে পাতা পুরনো একটা চটের থলের দিকে ওঁর চোখ পড়ে গেল। ভুরুটা কাঁচকে উনি উঠে ঘরের ওপাশে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।
এই সময়ে গৃহকর্তা ফিরে এল। ওর হাতে ছিল একটা বোতল। নিজের পাজামার তলাটা দিয়ে বোতলের গায়ে-জমা ধুলো ও মুছে নিল।
‘এই-যে, এস,’ টেবিলের কাছে এসে গৃহকর্তা বলল। ‘ক্যাপটেন শুভাৎস যখন শেষবার এসেছিলেন তখন এ-বোতলটা শেষ করতে পারেন নি। এস, তোমাদের চায়ে একটু করে ব্র্যান্ডি মিশিয়ে দিই। জিনিসটা আমার নিজেরই ভারি পছন্দ, তবে কিনা অতিথদের জন্যে… অতিথ বলে কথা…’ বোতলের মুখে-আটকানো ছিপির বদলে একদলা কাগজ টেনে খুলে বোতলের জিনিসটা আমাদের গেলাস দুটোয় ঢেলে দিল ও। আমার গেলাসটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়াতেই জানলা থেকে চুবুক ছুটে এসে রূঢ়ভাবে আমায় বললেন:
‘আচ্ছা ছেলে তো তুমি! ঘরে-যে সবার জন্যি যথেষ্ট গেলাস নেই, চোখি দেখতে পাও না? যাও, গা এলিয়ে বসে না থেকি জায়গাটা বুড়া ভন্দরনোকরে ছেড়ে দ্যাও দিকি। তুমি পরে খেও। আসুন, বুড়োবাবা, বসুন। আমরা দু-জনা একসঙ্গে খাই।’
হঠাৎ অমন রুক্ষভাবে আমার সঙ্গে কথা বলায় আমি অবাক হয়ে চুবুকের দিকে তাকালুম।
‘না-না, থাক, থাক!’ বলতে-বলতে বৃদ্ধ গেলাসটা ঠেলে সরিয়ে দিল। ‘আমি পরে খাব অখন। তোমরা হলে গিয়ে আমার অতিথ…’
‘খান, বুড়োবাবা,’ দৃঢ়সংকল্পের ভঙ্গিতে গৃহকর্তার দিকে গেলাসটা এগিয়ে দিতে-দিতে চুবুক ফের বললেন।