কী নিয়ে সমঝোতা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান নতুন এক বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে। উভয় দেশ পরস্পরের পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপে সম্মত হয়েছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং সেই বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ৯০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র পাবে—এমন দাবি করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে জাপান তাদের বাজার গাড়ি, ট্রাক, চালসহ কিছু কৃষিপণ্য বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অটোমোবাইল খাতে বড় ছাড়
টোকিওর প্রধান বাণিজ্য আলোচক জানিয়েছেন, গাড়ির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১৫ শতাংশে আনা হবে। অটোমোবাইল খাতেই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সবচেয়ে বড় জটিলতা ছিল, যা এই চুক্তিতে আংশিকভাবে সুরাহা হয়েছে। তবে ইস্পাতের ওপর ৫০ শতাংশ জাতীয় নিরাপত্তা-ভিত্তিক শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে।
ট্রাম্পের দাবিকৃত ‘সবচেয়ে বড় চুক্তি’
হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প এই চুক্তিকে “ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি—হয়তো ইতিহাসের যেকোনো চুক্তির মধ্যে সবচেয়ে বড়” বলে আখ্যা দেন। তিনি জানান, আলাস্কা থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির জন্য জাপান সরকারের সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগেও তারা সম্মত হয়েছে—যার অংশীদার খুঁজে পেতে মার্কিন প্রশাসন ও গ্যাস শিল্প দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিল।
জাপানের প্রতিক্রিয়া: জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কথা
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানান, তিনি প্রধান আলোচকের কাছ থেকে চুক্তির রিপোর্ট পেয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় অটল ছিল।” তাঁর মতে, এই চুক্তি ভবিষ্যতে দুদেশকে একসঙ্গে কাজ করতে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে এবং উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করবে। প্রধান আলোচক রিওসেই আকাজাওয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ “মিশন সম্পন্ন” লিখে একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায়—জি–সেভেন সম্মেলনে (কানাডা, জুন) ট্রাম্পের সঙ্গে ইশিবার আলোচনা নিয়ে হোয়াইট হাউসের সিঁড়ির পাশে টাঙানো ছবির দিকে তিনি ইশারা করছেন।
শুল্ক হারে পার্থক্য: হুমকির তুলনায় স্বস্তি
ট্রাম্প সম্প্রতি জাপান সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই হার ১৫ শতাংশে নেমে আসায় জাপানি অটোমোবাইল শিল্পের ওপর সম্ভাব্য চাপ কিছুটা কমেছে। আলাদা করে আরোপিত জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত গাড়ির শুল্কও ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামানো হয়েছে বলে আকাজাওয়া জানান।
শেয়ারবাজারের প্রতিক্রিয়া
চুক্তির খবরে টোকিও শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বুধবার দুপুরে নিক্কেই সূচক ৩.২ শতাংশ বেড়ে যায়, আর টয়োটার শেয়ারদর ১৪ শতাংশ পর্যন্ত লাফিয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কা কমে গেছে বলে মনে করেন।
বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তি
১. অটোমোবাইল খাতের ভারসাম্য: এতদিনের আলোচনার মূল জট ছিল গাড়ির শুল্ক। ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামানোয় জাপানের প্রধান রপ্তানি খাত বড় ধাক্কা এড়াতে পারল।
২. যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ প্রবাহ: ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি মার্কিন অবকাঠামো, জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে নতুন চাকরি ও প্রকল্পের সম্ভাবনা জাগায়।
৩. এলএনজি যৌথ উদ্যোগ: আলাস্কার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বহির্বিশ্ব থেকে অংশীদার দরকার ছিল। জাপানের যুক্ত হওয়া মার্কিন জ্বালানি রপ্তানি কৌশলকে গতি দিতে পারে।
৪. কৃষিপণ্যের বাজার: চালসহ কিছু কৃষিপণ্য আমদানিতে জাপানের বাজার আরও খোলা হলে মার্কিন কৃষকরা সুযোগ পেতে পারেন।
৫. ভূরাজনৈতিক বার্তা: অর্থনৈতিক চাপ ও শুল্ক হুমকির মধ্যেও টোকিও ও ওয়াশিংটনের পারস্পরিক নির্ভরতা বজায় থাকছে—এটি চীনের উত্থান ও বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
চুক্তিটি ঘোষণার ভাষার চেয়ে বাস্তব প্রয়োগে কতটা বড় প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করবে শর্তাবলীর বিস্তারিত ও বাস্তবায়নের গতি-প্রকৃতির ওপর। তবু আপাতত ১৫ শতাংশের পারস্পরিক শুল্কহার ও বিশাল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র—দু’পক্ষের জন্যই তাৎক্ষণিক স্বস্তি ও রাজনৈতিক সাফল্যের বার্তা বহন করছে।