১২:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

চীনের সেনাবাহিনী কি সত্যিই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?

২০২২ সালের অক্টোবরের ২০তম দলীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)‑এর শীর্ষ সারিতে নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর চারটি শাখা — স্থল, নৌ, বিমান ও রকেট — মিলিয়ে ২০‑এর বেশি জেনারেল হঠাৎ নিখোঁজ অথবা বরখাস্ত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনে অর্ধেক পদ ফাঁকা

২০২৩‑এর শেষ দিক থেকে ছয় সদস্যের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) তিনজন ইউনিফর্মধারী নেতা পদচ্যুত হয়েছেন — সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু, রাজনৈতিক কাজ বিভাগের প্রধান মিয়াও হুয়া ও দ্বিতীয় ভাইস‑চেয়ার হে ওয়েইডং। এত অল্প সময়ে সিএমসি‑র অর্ধেক সদস্য অপসারণ চীনের সামরিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা।

২০২৭ : শি‑এর টাইমলাইন ও শুদ্ধির ধাক্কা

পিএলএ‑র শতবর্ষ (২০২৭) সামনে রেখে শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে “আধুনিকায়নের বড় ফল” দেখাতে বলেছেন এবং সাবেক সিআইএ পরিচালক বিল বার্নসের ভাষ্য অনুযায়ী, তাইওয়ান দখলের সফল সক্ষমতা অর্জনের নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু ধারাবাহিক শুদ্ধি অভিযান অস্ত্র‑উন্নয়ন, শৃঙ্খলা, সিদ্ধান্ত‑গ্রহণ ও মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সামগ্রিক যুদ্ধ‑প্রস্তুতি শ্লথ করছে।

কেন এই শুদ্ধি — দুর্নীতি, গ্রুপিং ও অক্ষমতা

সততা নিয়ে প্রশ্ন, পদোন্নতিতে ঘুষ, নিজস্ব “পাহাড়” গড়ে তোলা এবং অস্ত্র‑ক্রয়ে সিলো নির্মাণে ত্রুটি — এসবই তদন্তে উঠে এসেছে। রকেট ফোর্সের নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের কিছুতে জ্বালানির বদলে পানি, সিলোর দরজা ভাঙা — এসব দৃষ্টান্ত পিএলএ‑র কারিগরি নির্ভরতার ওপর আস্থায় ঘাটতি তৈরি করেছে।

‘অনিরাপত্তা সংকট’ ও যৌথ যুদ্ধ‑পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ

যৌথ অভিযান সফল করতে সমন্বিত কমান্ড, আন্তঃপরিচালন ক্ষমতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। কিন্তু শুদ্ধি‑পরবর্তী আতঙ্কে সিনিয়র‑জুনিয়র সবাই ঝুঁকি এড়াতে চাইছে; রাজনৈতিক শিক্ষা সেশনে বাড়তি সময় খরচ হচ্ছে; ফলে প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবন পিছিয়ে পড়ছে।

ইতিহাসের শিক্ষা : অপ্রস্তুত অবস্থায়ও যুদ্ধ

  • ১৯৫০ — কোরিয়ান যুদ্ধ: দেশ গৃহযুদ্ধশেষ ধ্বংসস্তুপে, তবুও যুক্তরাষ্ট্রকে সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলতে হস্তক্ষেপ।
  • ১৯৬২ — ভারত‑চীন সীমান্ত: গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতা ও পেং দেহুয়াইয়ের শুদ্ধির পরও তিব্বতে ভারতীয় চাপ ভাঙতে হামলা।
  • ১৯৭৯ — ভিয়েতনাম আক্রমণ: সাংস্কৃতিক বিপ্লবোত্তর অগোছালো বাহিনী, তবু সোভিয়েত ঘেরাও রুখতে ‘শিক্ষামূলক’ যুদ্ধ।

এই তিন উদাহরণেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যুদ্ধ‑প্রস্তুতির ঘাটতি ছাপিয়ে গেছে।

তাইওয়ান ইস্যু : সুযোগ নয়, প্রয়োজন হলে ঝুঁকি নেবে বেইজিং

শুদ্ধি অভিযান পিএলএ‑কে অস্থির ও কম প্রস্তুত করলেও, যদি শি মনে করেন তাইওয়ান প্রশ্নে যুদ্ধ অপরিহার্য, তবে অতীতের মতোই তিনি বাহিনীকে মাঠে নামাতে পারেন। বিপরীতে, অনুকূল সুযোগসন্ধানী হামলা (যেমন হঠাৎ অবরোধ) অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা কম সম্ভাব্য, কারণ প্রস্তুতি ক্ষয়প্রাপ্ত।

শুদ্ধি অভিযান চীনের সামরিক শক্তিকে সাময়িকভাবে দুর্বল করেছে; সেই সূত্রে তাইওয়ান‑সম্পর্কিত বড় অভিযান বিলম্বিত বা জটিল হতে পারে। তবু চীনের নেতৃত্ব অতীতে বারবার দেখিয়েছে — রাজনীতি যখন ‘আবশ্যক’ মনে করে, তখন প্রস্তুতির ঘাটতিও বাধা নয়। সুতরাং পিএলএ‑র তাৎক্ষণিক সক্ষমতা কমে গেলেও, আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে — এমন ধরে নেওয়া বোকামি হবে।

চীনের সেনাবাহিনী কি সত্যিই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত?

০৫:১৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
২০২২ সালের অক্টোবরের ২০তম দলীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)‑এর শীর্ষ সারিতে নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযান চলছে। সেনাবাহিনীর চারটি শাখা — স্থল, নৌ, বিমান ও রকেট — মিলিয়ে ২০‑এর বেশি জেনারেল হঠাৎ নিখোঁজ অথবা বরখাস্ত হয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনে অর্ধেক পদ ফাঁকা

২০২৩‑এর শেষ দিক থেকে ছয় সদস্যের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) তিনজন ইউনিফর্মধারী নেতা পদচ্যুত হয়েছেন — সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু, রাজনৈতিক কাজ বিভাগের প্রধান মিয়াও হুয়া ও দ্বিতীয় ভাইস‑চেয়ার হে ওয়েইডং। এত অল্প সময়ে সিএমসি‑র অর্ধেক সদস্য অপসারণ চীনের সামরিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা।

২০২৭ : শি‑এর টাইমলাইন ও শুদ্ধির ধাক্কা

পিএলএ‑র শতবর্ষ (২০২৭) সামনে রেখে শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে “আধুনিকায়নের বড় ফল” দেখাতে বলেছেন এবং সাবেক সিআইএ পরিচালক বিল বার্নসের ভাষ্য অনুযায়ী, তাইওয়ান দখলের সফল সক্ষমতা অর্জনের নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু ধারাবাহিক শুদ্ধি অভিযান অস্ত্র‑উন্নয়ন, শৃঙ্খলা, সিদ্ধান্ত‑গ্রহণ ও মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সামগ্রিক যুদ্ধ‑প্রস্তুতি শ্লথ করছে।

কেন এই শুদ্ধি — দুর্নীতি, গ্রুপিং ও অক্ষমতা

সততা নিয়ে প্রশ্ন, পদোন্নতিতে ঘুষ, নিজস্ব “পাহাড়” গড়ে তোলা এবং অস্ত্র‑ক্রয়ে সিলো নির্মাণে ত্রুটি — এসবই তদন্তে উঠে এসেছে। রকেট ফোর্সের নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের কিছুতে জ্বালানির বদলে পানি, সিলোর দরজা ভাঙা — এসব দৃষ্টান্ত পিএলএ‑র কারিগরি নির্ভরতার ওপর আস্থায় ঘাটতি তৈরি করেছে।

‘অনিরাপত্তা সংকট’ ও যৌথ যুদ্ধ‑পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ

যৌথ অভিযান সফল করতে সমন্বিত কমান্ড, আন্তঃপরিচালন ক্ষমতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। কিন্তু শুদ্ধি‑পরবর্তী আতঙ্কে সিনিয়র‑জুনিয়র সবাই ঝুঁকি এড়াতে চাইছে; রাজনৈতিক শিক্ষা সেশনে বাড়তি সময় খরচ হচ্ছে; ফলে প্রশিক্ষণ ও উদ্ভাবন পিছিয়ে পড়ছে।

ইতিহাসের শিক্ষা : অপ্রস্তুত অবস্থায়ও যুদ্ধ

  • ১৯৫০ — কোরিয়ান যুদ্ধ: দেশ গৃহযুদ্ধশেষ ধ্বংসস্তুপে, তবুও যুক্তরাষ্ট্রকে সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলতে হস্তক্ষেপ।
  • ১৯৬২ — ভারত‑চীন সীমান্ত: গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতা ও পেং দেহুয়াইয়ের শুদ্ধির পরও তিব্বতে ভারতীয় চাপ ভাঙতে হামলা।
  • ১৯৭৯ — ভিয়েতনাম আক্রমণ: সাংস্কৃতিক বিপ্লবোত্তর অগোছালো বাহিনী, তবু সোভিয়েত ঘেরাও রুখতে ‘শিক্ষামূলক’ যুদ্ধ।

এই তিন উদাহরণেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা যুদ্ধ‑প্রস্তুতির ঘাটতি ছাপিয়ে গেছে।

তাইওয়ান ইস্যু : সুযোগ নয়, প্রয়োজন হলে ঝুঁকি নেবে বেইজিং

শুদ্ধি অভিযান পিএলএ‑কে অস্থির ও কম প্রস্তুত করলেও, যদি শি মনে করেন তাইওয়ান প্রশ্নে যুদ্ধ অপরিহার্য, তবে অতীতের মতোই তিনি বাহিনীকে মাঠে নামাতে পারেন। বিপরীতে, অনুকূল সুযোগসন্ধানী হামলা (যেমন হঠাৎ অবরোধ) অদূর ভবিষ্যতে কিছুটা কম সম্ভাব্য, কারণ প্রস্তুতি ক্ষয়প্রাপ্ত।

শুদ্ধি অভিযান চীনের সামরিক শক্তিকে সাময়িকভাবে দুর্বল করেছে; সেই সূত্রে তাইওয়ান‑সম্পর্কিত বড় অভিযান বিলম্বিত বা জটিল হতে পারে। তবু চীনের নেতৃত্ব অতীতে বারবার দেখিয়েছে — রাজনীতি যখন ‘আবশ্যক’ মনে করে, তখন প্রস্তুতির ঘাটতিও বাধা নয়। সুতরাং পিএলএ‑র তাৎক্ষণিক সক্ষমতা কমে গেলেও, আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে — এমন ধরে নেওয়া বোকামি হবে।