সমকালের একটি শিরোনাম “সরকারকে কঠোর হতে বলল রাজনৈতিক দল”
ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও উত্তেজনার দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দলগুলো সরকারকে কঠোর হতে বলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তাও তদন্তের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ভালো নির্বাচনের জন্য ভালো পরিবেশ নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন তিনি।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। কোনো ঘটনায় আগাম গোয়েন্দা তথ্য না পাওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান। সমস্যা সমাধানে দ্রুত নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকারের কাজে সমন্বয়হীনতা এবং উপদেষ্টার কাজের সমালোচনা করেছে দলগুলো। সিদ্ধান্ত হয়, যেখানেই ফ্যাসিবাদ, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে বলে বৈঠক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।
উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আদিলুর রহমান খান, সি আর আবরার, মাহফুজ আলম, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। ডা. তাহের বলেন, বুধবার থেকে যেখানে ফ্যাসিবাদ, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছে প্রধান উপদেষ্টাকে।
আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম “পাইলটের শেষ বার্তা: বিমান ভাসছে না, নিচে পড়ছে”
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তেও কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। কন্ট্রোল রুমকে তিনি বলেছিলেন, ‘বিমান ভাসছে না…মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।’
রাজধানীর কুর্মিটোলা পুরাতন বিমানঘাঁটি থেকে গত সোমবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে একক উড্ডয়ন (সলো ফ্লাইট) করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। এটি ছিল তাঁর প্রথম সলো ফ্লাইট, যা বৈমানিক প্রশিক্ষণের সর্বশেষ ও সবচেয়ে জটিল ধাপ। এ পর্যায়ে পাইলটকে কোনো সহকারী, নেভিগেটর বা প্রশিক্ষক ছাড়াই একা বিমান পরিচালনা করতে হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। এর মধ্যে হঠাৎই বিমানটির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তখন পাইলট কন্ট্রোল রুমে জানান, ‘বিমান ভাসছে না…মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।’
তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল রুম থেকে ইজেক্ট (বিমান থেকে বের হয়ে যাওয়া) করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। সর্বোচ্চ গতিতে তিনি বিমানটি বেসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।
মানবজমিনের একটি শিরোনাম “৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ দুই উপদেষ্টা প্রেস সচিব, দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অবরোধ”
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুই দফা চেষ্টা করেও তারা সেখান থেকে বের হতে পারেননি। রাত সাড়ে সাতটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় তারা সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন। সকালে বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানাতে মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে যান আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমসহ প্রেস উইংয়ের সদস্যরা। তারা সেখানে যাওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তারা উপদেষ্টাদের কাছে ছয় দফা দাবি জানাতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন আইন উপদেষ্টা। সরকারের তরফেও দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় পৃথক বিবৃতিতে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নেয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ক্রমে তাদের সংখ্যা কমে আসে। এরপরই উপদেষ্টাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইলস্টোনের ক্ষতিগ্রস্ত হায়দার আলী ভবনটি পরিদর্শন করেন উপদেষ্টারা। পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে শিক্ষার্থীরা তাদের গতিরোধ করেন। প্রকৃত নিহতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ ও মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা কেন গভীর রাতে স্থগিত করা হলো তা জানতে চাওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। তারা সেখান থেকে ১১টার দিকে ৫ নং একাডেমিক ভবনে যান। শিক্ষার্থীরা ভবনটির চারপাশে শক্ত অবস্থান নেন। একই সময়ে ক্যাম্পাসের বাইরে গোলচত্বরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভে তারা বলেন, প্রকৃত লাশের সংখ্যা লুকানো হচ্ছে। প্রকৃত লাশের হিসাব এবং মৃতদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানানো হয়। রাতের আঁধারে লাশ সরিয়ে ফেলার দাবিও করা হয়। শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু সেনাসদস্য অসদাচরণ করেছেন উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা, বিমান দুর্ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে বিচার দাবি করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
এসময় ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে তারা বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করতে হবে এবং বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
বণিকবার্তার একটি শিরোনাম “নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১,আশঙ্কাজনক অনেকে”
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১-এ দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত ১৬৫ জন বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। আহতদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যে ৩০ জন এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ফলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
এদিকে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত ও দগ্ধ রোগীদের দেখতে গত সোমবার হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। রংপুর সদরের মমিনপুর স্কুলমাঠে গতকাল বিকালে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের ধারণা, শতাধিক লোক মারা গেছে।’
আইএসপিআরের দেয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মোট ১০টি হাসপাতালে আহত ১৬৫ জন ভর্তি রয়েছে। আর যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া সবাই স্কুলের খুদে শিক্ষার্থী।
নিহতদের জন্য উত্তরায় কবরস্থান ঠিক করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানায়, মাইলস্টোন স্কুলের অদূরে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে নিহতদের দাফন করা যাবে। পরে এ কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষায় সংরক্ষণ করা হবে।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশসহ ছয় দফা দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, হতাহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সিআর আবরারের পদত্যাগ, শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ, বিমান বাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরনো প্রশিক্ষণ বিমান বাতিল করে আধুনিক ও নিরাপদ বিমান চালু করা ইত্যাদি। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাকি দাবিগুলোও মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।