০৮:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে সরকার: বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টারের নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরওয়ার ঢাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান চীনের গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ও অ্যান্টিমনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত, নিয়ন্ত্রণ বহাল গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান সাময়িক বরখাস্ত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিল্পকলা জালিয়াতি ধরতে নতুন প্রযুক্তি

কানাডার স্বনামধন্য আদিবাসী শিল্পী নরভাল মরিসোর চিত্রকর্ম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। কিন্তু তাঁর খ্যাতির পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে বিশাল আকারের জালিয়াতিএখন পর্যন্ত কমপক্ষে ছয় হাজার ভুয়া পেইন্টিং ধরা পড়েছেযার আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ১০ কোটি ডলার। পুলিশের ভাষ্যে এটি বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্ট জালিয়াতি মামলা। মরিসো সম্পত্তি তহবিলের সংরক্ষক কোরি ডিঙ্গল এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভরসা রাখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্সের ওপর।

জালিয়াতির ব্যাপ্তি ও সনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ

মরিসো ২০০৭ সালে মারা গেলেও তাঁর কাজের জনপ্রিয়তা অব্যাহত। ফলে গ্যালারি ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সহযোগিতায় প্রতিটি সন্দেহজনক চিত্রকর্ম খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নরভাল এআই

তিন বছর আগে মরিসো সম্পত্তি তহবিল দুই গবেষকের সঙ্গে নরভাল এআই’ নামের সফটওয়্যার তৈরি করে। ছবির রঙের ঘনত্বতুলির চালস্ট্রোকের গতিসহস্রাধিক সূক্ষ্ম ধরন বিশ্লেষণ করে এটি আসল হওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করে। শুরুতে নিম্নমানের জাল চিত্র অনায়াসে ধরা পড়লেও আদালতে প্রকাশিত তথ্য দেখে জালিয়াতরাও কৌশল বদলাতে শুরু করেফলে সনাক্তকরণ আরও কঠিন হয়ে ওঠে।

রোবটিক্সের ভূমিকা ও অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স

মন্ট্রিয়লের তরুণ প্রকৌশলী ক্লোয়ে রায়ান নিজের আঁকা বিমূর্ত চিত্র দ্রুত পুনরুত্পাদনের উপায় খুঁজতে গিয়ে অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পী ট্যাবলেটে স্টাইলাস দিয়ে আঁকলে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সফটওয়্যার প্রতিটি স্ট্রোকচাপ ও রঙের তথ্য সংগ্রহ করেতারপর রোবটিক বাহু অবিকল রঙতুলি চালিয়ে আসল ছবির জমিন ও টেক্সচারসহ নিখুঁত কপি তৈরি করে।

মরিসো পুনর্নির্মাণে যৌথ পরীক্ষা

২০২৪ সালের আগস্টে কোরি ডিঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগের পর থেকে রায়ান ও তাঁর রোবট (ডোডো নামে পরিচিত) মরিসোর উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে লম্বা স্ট্রোকের মাঝে রোবটের বিরতি নেওয়াঅতিরিক্ত রঙ তোলা ইত্যাদি ত্রুটি সহজেই ধরা পড়ত। এক বছরের মধ্যে নির্ভুলতার হার ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছেতবে ডিঙ্গল ইচ্ছাকৃতভাবে শতভাগে যেতে দেরি করছেননিরাপদ চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক ছাড়া একেবারে নিখুঁত কপি আত্মসাৎ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দলটি এখন প্রতিটি কপিতে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য চিহ্ন বসানোর উপায় খুঁজছেযাতে এগুলো কখনোই আসল বলে বিক্রি না হয়। পদ্ধতি চূড়ান্ত হলে মরিসোর শিল্পকর্মের উন্নত মানের পুনর্নির্মাণ সহজে বিতরণ করা যাবেউত্তরাঞ্চলের আদিবাসী বিদ্যালয়চিকিৎসা ও শিক্ষা‑প্রতিষ্ঠানযাদের পক্ষে মূল চিত্রকর্ম কেনা সম্ভব নয়তারাও মরিসোর শিল্প থেকে উপকার পাবে।

জাল চিত্র

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স শিল্পকলা জালিয়াতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ঢাল হয়ে উঠছে। নরভাল এআই’ জাল চিত্র সনাক্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছেআর অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স দিচ্ছে উচ্চমানের পুনর্নির্মাণের সুযোগ। প্রযুক্তি ও শিল্প‑ঐতিহ্যের এই সমন্বয় হয়তো ভবিষ্যতে অন্যান্য শিল্পীর ক্ষেত্রেও নকল নির্মূল ও প্রকৃত শিল্পসংগ্রহ‑সুরক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শিল্পকলা জালিয়াতি ধরতে নতুন প্রযুক্তি

০২:৩০:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

কানাডার স্বনামধন্য আদিবাসী শিল্পী নরভাল মরিসোর চিত্রকর্ম বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। কিন্তু তাঁর খ্যাতির পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে বিশাল আকারের জালিয়াতিএখন পর্যন্ত কমপক্ষে ছয় হাজার ভুয়া পেইন্টিং ধরা পড়েছেযার আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ১০ কোটি ডলার। পুলিশের ভাষ্যে এটি বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্ট জালিয়াতি মামলা। মরিসো সম্পত্তি তহবিলের সংরক্ষক কোরি ডিঙ্গল এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভরসা রাখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্সের ওপর।

জালিয়াতির ব্যাপ্তি ও সনাক্তকরণের চ্যালেঞ্জ

মরিসো ২০০৭ সালে মারা গেলেও তাঁর কাজের জনপ্রিয়তা অব্যাহত। ফলে গ্যালারি ও ব্যক্তিগত সংগ্রাহকদের সহযোগিতায় প্রতিটি সন্দেহজনক চিত্রকর্ম খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নরভাল এআই

তিন বছর আগে মরিসো সম্পত্তি তহবিল দুই গবেষকের সঙ্গে নরভাল এআই’ নামের সফটওয়্যার তৈরি করে। ছবির রঙের ঘনত্বতুলির চালস্ট্রোকের গতিসহস্রাধিক সূক্ষ্ম ধরন বিশ্লেষণ করে এটি আসল হওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় করে। শুরুতে নিম্নমানের জাল চিত্র অনায়াসে ধরা পড়লেও আদালতে প্রকাশিত তথ্য দেখে জালিয়াতরাও কৌশল বদলাতে শুরু করেফলে সনাক্তকরণ আরও কঠিন হয়ে ওঠে।

রোবটিক্সের ভূমিকা ও অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স

মন্ট্রিয়লের তরুণ প্রকৌশলী ক্লোয়ে রায়ান নিজের আঁকা বিমূর্ত চিত্র দ্রুত পুনরুত্পাদনের উপায় খুঁজতে গিয়ে অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পী ট্যাবলেটে স্টাইলাস দিয়ে আঁকলে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের সফটওয়্যার প্রতিটি স্ট্রোকচাপ ও রঙের তথ্য সংগ্রহ করেতারপর রোবটিক বাহু অবিকল রঙতুলি চালিয়ে আসল ছবির জমিন ও টেক্সচারসহ নিখুঁত কপি তৈরি করে।

মরিসো পুনর্নির্মাণে যৌথ পরীক্ষা

২০২৪ সালের আগস্টে কোরি ডিঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগের পর থেকে রায়ান ও তাঁর রোবট (ডোডো নামে পরিচিত) মরিসোর উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে লম্বা স্ট্রোকের মাঝে রোবটের বিরতি নেওয়াঅতিরিক্ত রঙ তোলা ইত্যাদি ত্রুটি সহজেই ধরা পড়ত। এক বছরের মধ্যে নির্ভুলতার হার ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছেতবে ডিঙ্গল ইচ্ছাকৃতভাবে শতভাগে যেতে দেরি করছেননিরাপদ চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক ছাড়া একেবারে নিখুঁত কপি আত্মসাৎ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দলটি এখন প্রতিটি কপিতে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য চিহ্ন বসানোর উপায় খুঁজছেযাতে এগুলো কখনোই আসল বলে বিক্রি না হয়। পদ্ধতি চূড়ান্ত হলে মরিসোর শিল্পকর্মের উন্নত মানের পুনর্নির্মাণ সহজে বিতরণ করা যাবেউত্তরাঞ্চলের আদিবাসী বিদ্যালয়চিকিৎসা ও শিক্ষা‑প্রতিষ্ঠানযাদের পক্ষে মূল চিত্রকর্ম কেনা সম্ভব নয়তারাও মরিসোর শিল্প থেকে উপকার পাবে।

জাল চিত্র

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক্স শিল্পকলা জালিয়াতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ঢাল হয়ে উঠছে। নরভাল এআই’ জাল চিত্র সনাক্তে নতুন মাত্রা যোগ করেছেআর অ্যাক্রিলিক রোবটিক্স দিচ্ছে উচ্চমানের পুনর্নির্মাণের সুযোগ। প্রযুক্তি ও শিল্প‑ঐতিহ্যের এই সমন্বয় হয়তো ভবিষ্যতে অন্যান্য শিল্পীর ক্ষেত্রেও নকল নির্মূল ও প্রকৃত শিল্পসংগ্রহ‑সুরক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।