০৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তবতা: জনভিত্তি নেই, নতুন ধারণাও নেই, তবুও সক্রিয় কেন? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও চাঁদাবাজি: সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে বানিয়াচংয়ে বাছাই করে ‘পুলিশ হত্যা’, কী ঘটেছিল? ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম ২০২৫: জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে তৃণমূলে কার্যকর বার্তা গাজীপুরে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, সাংবাদিকসহ আহত ১০ প্রতিদিন একটি রুমাল (পর্ব-৪৩) ফ্রান্স কেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৪৭) চীনকে কেন্দ্র করে কোয়াডের আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ

ফ্রান্স কেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিবেচনা, যা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিই নয়, ইউরোপীয় অভ্যন্তরীণ সমাজনীতির প্রতিফলনও।

এই সিদ্ধান্তের পটভূমিতে রয়েছে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক, যেখানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগেই ফ্রান্স আরও একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে এই সংকট নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

মাখোঁর ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির পাশাপাশি যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে পরিস্থিতি দ্রুত একটি দুর্ভিক্ষের দিকে গড়াচ্ছে। এই বাস্তবতা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ফ্রান্সের সাবেক ইসরায়েল রাষ্ট্রদূত জেরার্দ আরো মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতির তাৎক্ষণিকতা ও গুরুত্ব প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে এককভাবে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। শুধু মানবিক সংকটই নয়, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে। দেশটিতে ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি—এই দুই মেরুর উত্তেজনাও ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরেই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মাখোঁর পরিকল্পনা ছিল, সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে, তখন ফ্রান্স ও তার মিত্ররা পাল্টা ভারসাম্য বজায় রাখতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় গতি না আসায়, জাতিসংঘ অধিবেশনের আগেই তিনি নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাজ্য ও কানাডাও ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করতে পারে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যসহ ২৫টি দেশ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়েছে।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নিজ দলের অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছেন। তিনি চাইছেন আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত একটি পদক্ষেপ নিতে, যাতে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি যুদ্ধবিরতির প্রয়াস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরসূচির কারণে এই সময়ে কূটনৈতিক তৎপরতা কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে।

প্যারিস এই সংকটে একটি দ্বিস্তরীয় কৌশল নিয়েছে: প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির নেতৃত্ব নেবে; দ্বিতীয়ত, সৌদি আরবের সহায়তায় ফ্রান্স পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শান্তি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর হামাসকে নিরস্ত্র ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে একটি নির্বাচিত টেকনোক্র্যাটিক সরকার গঠনের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া মিশরীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে একটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন গঠনের প্রস্তাবও বিবেচনাধীন।

তবে এসব কৌশল কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ইসরায়েলের বর্তমান ডানপন্থী সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার বিরোধী এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখের বেশি ইসরায়েলি সেখানে বসবাস করছে, যেখানে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

সৌদি আরবও নেতানিয়াহুর শাসনামলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী নয়। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন।

ফ্রান্সের স্বীকৃতি সিদ্ধান্ত তাই কেবল প্রতীকী নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক বার্তা। এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো অতিক্রম করতে হবে।

এএফপি অবলম্বনে অনুবাদ

 

বাংলাদেশের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর বাস্তবতা: জনভিত্তি নেই, নতুন ধারণাও নেই, তবুও সক্রিয় কেন?

ফ্রান্স কেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

১১:৫৩:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিবেচনা, যা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিই নয়, ইউরোপীয় অভ্যন্তরীণ সমাজনীতির প্রতিফলনও।

এই সিদ্ধান্তের পটভূমিতে রয়েছে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় একটি আন্তর্জাতিক বৈঠক, যেখানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগেই ফ্রান্স আরও একটি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে এই সংকট নিরসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।

মাখোঁর ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির পাশাপাশি যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে পরিস্থিতি দ্রুত একটি দুর্ভিক্ষের দিকে গড়াচ্ছে। এই বাস্তবতা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ফ্রান্সের সাবেক ইসরায়েল রাষ্ট্রদূত জেরার্দ আরো মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতির তাৎক্ষণিকতা ও গুরুত্ব প্রেসিডেন্ট মাখোঁকে এককভাবে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। শুধু মানবিক সংকটই নয়, ইসরায়েলি মন্ত্রীদের কিছু বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপও এই সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে। দেশটিতে ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ইহুদি জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি—এই দুই মেরুর উত্তেজনাও ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরেই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মাখোঁর পরিকল্পনা ছিল, সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ যখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছে, তখন ফ্রান্স ও তার মিত্ররা পাল্টা ভারসাম্য বজায় রাখতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু সেই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় গতি না আসায়, জাতিসংঘ অধিবেশনের আগেই তিনি নিজ উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুক্তরাজ্য ও কানাডাও ফ্রান্সের পথ অনুসরণ করতে পারে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যসহ ২৫টি দেশ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি চেয়েছে।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নিজ দলের অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছেন। তিনি চাইছেন আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত একটি পদক্ষেপ নিতে, যাতে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি যুদ্ধবিরতির প্রয়াস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরসূচির কারণে এই সময়ে কূটনৈতিক তৎপরতা কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে।

প্যারিস এই সংকটে একটি দ্বিস্তরীয় কৌশল নিয়েছে: প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির নেতৃত্ব নেবে; দ্বিতীয়ত, সৌদি আরবের সহায়তায় ফ্রান্স পরবর্তী রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও শান্তি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পর হামাসকে নিরস্ত্র ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে একটি নির্বাচিত টেকনোক্র্যাটিক সরকার গঠনের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া মিশরীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে একটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন গঠনের প্রস্তাবও বিবেচনাধীন।

তবে এসব কৌশল কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, সে নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ইসরায়েলের বর্তমান ডানপন্থী সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনার বিরোধী এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইতিমধ্যে পাঁচ লাখের বেশি ইসরায়েলি সেখানে বসবাস করছে, যেখানে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।

সৌদি আরবও নেতানিয়াহুর শাসনামলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী নয়। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে গাজা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন।

ফ্রান্সের স্বীকৃতি সিদ্ধান্ত তাই কেবল প্রতীকী নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক বার্তা। এই উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এখনো অতিক্রম করতে হবে।

এএফপি অবলম্বনে অনুবাদ