০৯:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৮) আমেরিকার রাজনৈতিক সংকট ও বিভ্রমের দীর্ঘ ছায়া কঠোর আশ্রয়(অ্যাসাইলাম) নীতি নিয়ে লেবার দলে বিদ্রোহের সুর ফিলিপাইনে পরপর দুই টাইফুনে মৃত্যু, নিখোঁজ ও ঘরবাড়ি হারানোর বেদনায় ডুবল দেশ ব্রাজিলে কোপ৩০ আলোচনার শেষ সপ্তাহে তীব্র টানাপোড়েন বিশ্বজুড়ে জেনারেশন জেড-এর বিক্ষোভ কি সত্যিই পরিবর্তন আনতে পারবে? বেইজিং-এর পালটা আঘাত: আমেরিকান চিপের বিকল্প খুঁজে নিজস্ব পথ গড়ছে চিন বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষুধা সংকটের সতর্কতা, তহবিল ঘাটতিতে বিপদে ডব্লিউএফপি” লরা লুমারের গোপন ক্ষমতার নেটওয়ার্ক—হোয়াইট হাউস কাঁপছে এক ইনফ্লুয়েন্সারের হাতেও ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৯২০

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও চাঁদাবাজি: সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে

নিরাপত্তার প্রশ্নে বাড়ছে উদ্বেগ

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। অপরাধের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু প্রতিদিনকার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে এমন কিছু অপরাধ—যেমন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্য এবং দলীয় প্রভাবশালী চক্রের দাপট—আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। শহর থেকে গ্রাম — সবখানেই যেন আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ।

চাঁদাবাজির শিকার সাধারণ ব্যবসায়ী

ঢাকার কাঁচাবাজারে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন,

“প্রতিদিনই কেউ না কেউ এসে টাকা চায়। না দিলে দোকানে বসতে পারি না। পুলিশকে বললেও ব্যবস্থা নেয় না, বরং উল্টো হুমকি আসে।”

শুধু রাজধানী নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ অন্যান্য বড় শহরেও একই পরিস্থিতি। পরিবহন খাত থেকে শুরু করে নির্মাণ সাইট, এমনকি স্কুলের সামনেও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এর পেছনে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া বা প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

পরিবহন খাতে সন্ত্রাস ও নীরব চাঁদাবাজি

বাংলাদেশের পরিবহন খাত চাঁদাবাজির অন্যতম বড় শিকার। একজন বাসচালক আবুল কালাম বলেন,

“একটা গাড়ি রাস্তায় বের হলে থানা, পুলিশ, ইউনিয়ন, নব গঠিত কিছু রাজনৈতিক দল, সমন্বয়ক এবং বড় দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন—সব জায়গায় টাকা দিতে হয়। না দিলে গাড়ি চলবে না।”

সাধারণ যাত্রীরা এর চাপ অনুভব করেন ভাড়ার ওপর। অর্থাৎ চাঁদাবাজির সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ব্যয়ের ওপর।

পুলিশের ভূমিকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অনেক জায়গায় পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে চুপ থাকে, কিংবা উল্টো হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও অনেকে জানান।

গোপালগঞ্জের এক স্কুলশিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন,

“আমাদের এলাকায় পুলিশ কিছুটা সক্রিয়, তবে অপরাধীদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে পুলিশ কিছুই করতে পারে না।”

মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের উদ্বেগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছেন। রাজধানীর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল রানা বলেন,

“রাতে একটু দেরি হলে আতঙ্ক লাগে। বাসায় ফিরতে গাড়ি পেলে ভরসা নইলে চিন্তায় পড়ে যাই। ছিনতাই, চুরি, এমনকি রাস্তায় টার্গেট করে টাকা কেড়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে।”

গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: প্রভাবশালীদের রাজত্ব

গ্রামাঞ্চলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার এক কৃষক আবদুল লতিফ বলেন,
“আমাদের এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধে মামলা করলে রাতে ঘরে আগুন, হুমকি, মিথ্যা মামলা — সবই হয়। থানা কিছুই করে না, কারণ অন্য পক্ষের চেয়ারম্যানের হাত আছে।”

চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস রাজনৈতিক ছায়ায়

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং দলীয় ক্ষমতার দাপটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন,

“আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দলের অনুপ্রবেশ প্রশাসনে প্রতিফলিত হচ্ছে। ফলে সাধারণ জনগণ বিচার পাচ্ছে না, অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।”

আইনি কাঠামো ও করণীয়

বাংলাদেশে আইন রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, চুরি—এসবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় আরও বাড়বে। স্বচ্ছ প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নাগরিকদের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের মানুষ এখন নিরাপত্তা চায়। তারা চায় ভয়ে নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাস্তায় চলতে, বাজারে ব্যবসা চালাতে, জমিতে চাষ করতে, সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ঘটাতে।

যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে এসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন না করবে, ততদিন পর্যন্ত চাঁদাবাজি, ভীতি ও অনিরাপত্তার মধ্যেই চলতে থাকবে বাংলাদেশ।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৮)

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও চাঁদাবাজি: সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে

০৩:৫৯:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

নিরাপত্তার প্রশ্নে বাড়ছে উদ্বেগ

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। অপরাধের ধরন পাল্টেছে, কিন্তু প্রতিদিনকার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে এমন কিছু অপরাধ—যেমন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী দৌরাত্ম্য এবং দলীয় প্রভাবশালী চক্রের দাপট—আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। শহর থেকে গ্রাম — সবখানেই যেন আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ।

চাঁদাবাজির শিকার সাধারণ ব্যবসায়ী

ঢাকার কাঁচাবাজারে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন,

“প্রতিদিনই কেউ না কেউ এসে টাকা চায়। না দিলে দোকানে বসতে পারি না। পুলিশকে বললেও ব্যবস্থা নেয় না, বরং উল্টো হুমকি আসে।”

শুধু রাজধানী নয়, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ অন্যান্য বড় শহরেও একই পরিস্থিতি। পরিবহন খাত থেকে শুরু করে নির্মাণ সাইট, এমনকি স্কুলের সামনেও চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই এর পেছনে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া বা প্রভাবশালী মহলের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

পরিবহন খাতে সন্ত্রাস ও নীরব চাঁদাবাজি

বাংলাদেশের পরিবহন খাত চাঁদাবাজির অন্যতম বড় শিকার। একজন বাসচালক আবুল কালাম বলেন,

“একটা গাড়ি রাস্তায় বের হলে থানা, পুলিশ, ইউনিয়ন, নব গঠিত কিছু রাজনৈতিক দল, সমন্বয়ক এবং বড় দল বিএনপির অঙ্গ সংগঠন—সব জায়গায় টাকা দিতে হয়। না দিলে গাড়ি চলবে না।”

সাধারণ যাত্রীরা এর চাপ অনুভব করেন ভাড়ার ওপর। অর্থাৎ চাঁদাবাজির সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ব্যয়ের ওপর।

পুলিশের ভূমিকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

অনেক জায়গায় পুলিশ চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে চুপ থাকে, কিংবা উল্টো হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও অনেকে জানান।

গোপালগঞ্জের এক স্কুলশিক্ষক শামীমা আক্তার বলেন,

“আমাদের এলাকায় পুলিশ কিছুটা সক্রিয়, তবে অপরাধীদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয় থাকলে পুলিশ কিছুই করতে পারে না।”

মধ্যবিত্ত ও চাকরিজীবীদের উদ্বেগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছেন। রাজধানীর এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল রানা বলেন,

“রাতে একটু দেরি হলে আতঙ্ক লাগে। বাসায় ফিরতে গাড়ি পেলে ভরসা নইলে চিন্তায় পড়ে যাই। ছিনতাই, চুরি, এমনকি রাস্তায় টার্গেট করে টাকা কেড়ে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে।”

গ্রামে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: প্রভাবশালীদের রাজত্ব

গ্রামাঞ্চলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ। মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার এক কৃষক আবদুল লতিফ বলেন,
“আমাদের এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধে মামলা করলে রাতে ঘরে আগুন, হুমকি, মিথ্যা মামলা — সবই হয়। থানা কিছুই করে না, কারণ অন্য পক্ষের চেয়ারম্যানের হাত আছে।”

চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস রাজনৈতিক ছায়ায়

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং দলীয় ক্ষমতার দাপটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অনেক সময় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন,

“আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক দলের অনুপ্রবেশ প্রশাসনে প্রতিফলিত হচ্ছে। ফলে সাধারণ জনগণ বিচার পাচ্ছে না, অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে।”

আইনি কাঠামো ও করণীয়

বাংলাদেশে আইন রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, চুরি—এসবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় আরও বাড়বে। স্বচ্ছ প্রশাসন, পুলিশ বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নাগরিকদের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের মানুষ এখন নিরাপত্তা চায়। তারা চায় ভয়ে নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাস্তায় চলতে, বাজারে ব্যবসা চালাতে, জমিতে চাষ করতে, সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ঘটাতে।

যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে এসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন না করবে, ততদিন পর্যন্ত চাঁদাবাজি, ভীতি ও অনিরাপত্তার মধ্যেই চলতে থাকবে বাংলাদেশ।