০৫:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

যুদ্ধ আর নয়: গাজায় চলমান সংঘাত ইসরায়েলের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে উঠছে

ছোট ও সফল ইরান যুদ্ধঅথচ গাজায় অবিরাম বিপর্যয়

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ ছিল সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল ও কৌশলগতভাবে সফল। কিন্তু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন আর সেই পথে নেই। এটি এক অবসানহীন, নির্বিচার ও অর্থহীন সহিংসতায় পরিণত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলকে একঘরে করে ফেলছে।

২০২৪ সাল থেকেই একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল এই পত্রিকা। দীর্ঘ আলোচনার পর এখন সময় হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রকে তার সব শক্তি প্রয়োগ করে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এটি এখন আর শুধু রাজনৈতিক নয়, একটি মানবিক সংকট।

গাজার করুণ অবস্থা: ধ্বংসদুর্ভিক্ষ ও বাস্তুচ্যুতি

গাজার অন্তত ৬০ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়েছে, বিশ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যারা এখন একটি ছোট কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গাদাগাদি করে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও ২০২৪ সালে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দুর্ভিক্ষের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়নি, এবার পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কাজনক।

ইসরায়েল জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অন্য পথ চালু করার চেষ্টা করলেও, খাদ্যের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। যুদ্ধবিরতি ছাড়া এই খাদ্যও পৌঁছাবে না। কারণ সন্ত্রাসী হামলা, গ্যাংদের দৌরাত্ম্য ও ইসরায়েলি সেনাদের তাণ্ডবে রাস্তায় বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আর কোনো সামরিক যুক্তি নেইহামাস পরাজিত

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। হামাস কার্যত পরাজিত। নেতৃত্ব ধ্বংস হয়েছে, সামরিক শক্তি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের তুলনায় ক্ষীণ, এবং যোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে ১০-২০ শতাংশ এলাকায় ছড়িয়ে আছে। হামাসের প্রধান মিত্র ইরানও এখন নিঃশব্দ।

এই প্রেক্ষাপটে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো সামরিক কারণ নেই। মানবিক সহায়তার অভাব দখলকৃত অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এর মধ্যেই ইসরায়েলের উগ্রপন্থীদের একটি পরিকল্পনা গাজাবাসীদের একটি স্থায়ী ‘মানবিক শহরে’ ঠেলে দেওয়ার প্রস্তাব করছে—যা কার্যত জাতিগত নিধনের সামিল।

ইসরায়েলের ভেতরেই যুদ্ধবিরতির পক্ষে স্রোত

ইসরায়েলিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ যুদ্ধ শেষ করতে চায়, যদিও মাত্র ২১ শতাংশ দুটি রাষ্ট্রের সমাধানে বিশ্বাসী। সেনাবাহিনীর জেনারেলরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং ‘মানবিক শহর’ পরিকল্পনাকে অবৈধ মনে করেন।

বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে থাকা জোট এখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এবং আগামী ১৫ মাসের মধ্যে নির্বাচনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই কৌশল আর কার্যকর নয়।

এখন দরকার দুই পক্ষের সমঝোতা ও চূড়ান্ত চাপ

গণতান্ত্রিক আলোচনায় হামাস দুর্বল হয়েছে এবং কিছু ছাড় দিয়েছে। বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো: যুদ্ধবিরতির প্রথম ৬০ দিনের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি সেনা থাকবে কিনা। এই সমস্যা সমাধানযোগ্য।

এই ৬০ দিনকে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে একটি নতুন প্রশাসন গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা ও আরব দেশের সমর্থন থাকলে গাজার ভবিষ্যৎকে নতুন পথে নেওয়া সম্ভব। হামাসের স্বার্থান্বেষী, অমানবিক আচরণে অনেক গাজাবাসী তার বিকল্পকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে

এই মুহূর্তে দুটি বিষয় জরুরি। প্রথমত, কাতারকে গাজায় বসবাসরত হামাস নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করাতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের কাতার থেকে বহিষ্কারের হুমকি ও অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রভাব প্রয়োগ করতে হবে। ১৯৪৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েলের বহু যুদ্ধ থেমেছে। এবারও তাই হতে হবে। জুন মাসে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপেই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থেমেছিল। এখন তাঁর একই রকম তৎপরতা গাজার জন্যও জরুরি।

যুদ্ধ আর নয়: গাজায় চলমান সংঘাত ইসরায়েলের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে উঠছে

০১:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

ছোট ও সফল ইরান যুদ্ধঅথচ গাজায় অবিরাম বিপর্যয়

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ ছিল সংক্ষিপ্ত, নির্ভুল ও কৌশলগতভাবে সফল। কিন্তু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন আর সেই পথে নেই। এটি এক অবসানহীন, নির্বিচার ও অর্থহীন সহিংসতায় পরিণত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসরায়েলকে একঘরে করে ফেলছে।

২০২৪ সাল থেকেই একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল এই পত্রিকা। দীর্ঘ আলোচনার পর এখন সময় হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রকে তার সব শক্তি প্রয়োগ করে যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এটি এখন আর শুধু রাজনৈতিক নয়, একটি মানবিক সংকট।

গাজার করুণ অবস্থা: ধ্বংসদুর্ভিক্ষ ও বাস্তুচ্যুতি

গাজার অন্তত ৬০ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়েছে, বিশ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যারা এখন একটি ছোট কেন্দ্রীয় অঞ্চলে গাদাগাদি করে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও ২০২৪ সালে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দুর্ভিক্ষের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়নি, এবার পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কাজনক।

ইসরায়েল জাতিসংঘ-নিয়ন্ত্রিত ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থাকে এড়িয়ে অন্য পথ চালু করার চেষ্টা করলেও, খাদ্যের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল। যুদ্ধবিরতি ছাড়া এই খাদ্যও পৌঁছাবে না। কারণ সন্ত্রাসী হামলা, গ্যাংদের দৌরাত্ম্য ও ইসরায়েলি সেনাদের তাণ্ডবে রাস্তায় বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আর কোনো সামরিক যুক্তি নেইহামাস পরাজিত

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) গাজার প্রায় ৭০ শতাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। হামাস কার্যত পরাজিত। নেতৃত্ব ধ্বংস হয়েছে, সামরিক শক্তি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের তুলনায় ক্ষীণ, এবং যোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে ১০-২০ শতাংশ এলাকায় ছড়িয়ে আছে। হামাসের প্রধান মিত্র ইরানও এখন নিঃশব্দ।

এই প্রেক্ষাপটে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো সামরিক কারণ নেই। মানবিক সহায়তার অভাব দখলকৃত অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এর মধ্যেই ইসরায়েলের উগ্রপন্থীদের একটি পরিকল্পনা গাজাবাসীদের একটি স্থায়ী ‘মানবিক শহরে’ ঠেলে দেওয়ার প্রস্তাব করছে—যা কার্যত জাতিগত নিধনের সামিল।

ইসরায়েলের ভেতরেই যুদ্ধবিরতির পক্ষে স্রোত

ইসরায়েলিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ যুদ্ধ শেষ করতে চায়, যদিও মাত্র ২১ শতাংশ দুটি রাষ্ট্রের সমাধানে বিশ্বাসী। সেনাবাহিনীর জেনারেলরাও যুদ্ধবিরতির পক্ষে এবং ‘মানবিক শহর’ পরিকল্পনাকে অবৈধ মনে করেন।

বিনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে থাকা জোট এখন সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এবং আগামী ১৫ মাসের মধ্যে নির্বাচনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই কৌশল আর কার্যকর নয়।

এখন দরকার দুই পক্ষের সমঝোতা ও চূড়ান্ত চাপ

গণতান্ত্রিক আলোচনায় হামাস দুর্বল হয়েছে এবং কিছু ছাড় দিয়েছে। বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো: যুদ্ধবিরতির প্রথম ৬০ দিনের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি সেনা থাকবে কিনা। এই সমস্যা সমাধানযোগ্য।

এই ৬০ দিনকে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে একটি নতুন প্রশাসন গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা ও আরব দেশের সমর্থন থাকলে গাজার ভবিষ্যৎকে নতুন পথে নেওয়া সম্ভব। হামাসের স্বার্থান্বেষী, অমানবিক আচরণে অনেক গাজাবাসী তার বিকল্পকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত।

কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে

এই মুহূর্তে দুটি বিষয় জরুরি। প্রথমত, কাতারকে গাজায় বসবাসরত হামাস নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করাতে হবে। প্রয়োজনে তাঁদের কাতার থেকে বহিষ্কারের হুমকি ও অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরায়েলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রভাব প্রয়োগ করতে হবে। ১৯৪৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েলের বহু যুদ্ধ থেমেছে। এবারও তাই হতে হবে। জুন মাসে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপেই ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থেমেছিল। এখন তাঁর একই রকম তৎপরতা গাজার জন্যও জরুরি।