স্বপ্নের যাত্রা শুরু
তানভীর রহমান, এক তরুণ পর্যটক। ঢাকার ব্যস্ততা আর কর্পোরেট জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন একটি ভিন্নধর্মী ভ্রমণের — সুন্দরবন অভিমুখে। বহুদিন ধরেই তাঁর ইচ্ছে ছিল প্রকৃতির কোলে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে গিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাক্ষাৎ লাভ করার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি খুলনা থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। সঙ্গে ছিলেন একজন অভিজ্ঞ গাইড, দুজন বন কর্মকর্তা এবং আরও কয়েকজন ভ্রমণপিপাসু সহযাত্রী।
বনভূমির রহস্য
সকালবেলায় সূর্যের কাঁচা আলো পড়ছিল ঘন জঙ্গলের পাতার ফাঁকে ফাঁকে। কাঁকড়া, চিতল হরিণ, বানর — এমনকি একটি বিশালাকৃতির কুমিরও চোখে পড়ল নদীর পাশে। কিন্তু তানভীরের মন পড়ে ছিল শুধুই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দিকে। গাইড বলছিলেন, “ভাগ্য ভালো হলে দেখতে পাবেন। এই বনের রাজা লাজুক, কিন্তু খুবই সচেতন।”

তানভীর অপেক্ষা করছিলেন নিঃশব্দে। ক্যামেরা প্রস্তুত, চোখে সতর্ক দৃষ্টি। প্রতিটি হরিণের ছুটোছুটি, প্রতিটি পাখির ডাক — সব কিছুতেই তাঁর মনে হচ্ছিল যেন বাঘ আসছে!
অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ
হঠাৎ দুপুরবেলা, এক সুনসান মুহূর্তে, নৌকা যখন একটি সরু খালে ঢুকছিল, তখন গাইড হাত ইশারায় থামার সংকেত দিলেন। দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল কিছু চঞ্চলতা। সবাই নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল।
কয়েক মিনিট পর, গহীন বনের ছায়া ভেদ করে বিশাল এক ছায়ামূর্তি এগিয়ে এলো নদীর কিনারার দিকে। তানভীর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলেন — এটা কি সত্যি?
হ্যাঁ, সে-ই! একজন পরিণত, সুঠামদেহী রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হলুদ-কালো ডোরাকাটা গায়ে, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হেঁটে এল জলের ধারে। মাথা নিচু করে কয়েক মুহূর্ত জল খেলো, তারপর আবার অরণ্যের দিকে পা বাড়াল।
মাত্র কয়েক মিনিটের উপস্থিতি, কিন্তু সেই মুহূর্ত যেন চিরকালীন স্মৃতিতে পরিণত হলো।

বিস্ময় ও কৃতজ্ঞতা
তানভীর চোখে জল নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, “এটা স্বপ্ন না তো?” গাইড হেসে বললেন, “এই মুহূর্তের জন্যই তো আমরা সুন্দরবনে আসি, ভাই।”
ফেরার পথে কেউ তেমন কিছু বলছিল না। যেন সবাই নিজের ভেতরে সেই বিরল দৃশ্যটিকে রক্ষা করে রাখছিল। তানভীরের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল দু-একটা ঝাপসা ছবি, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গেঁথে গিয়েছিল হৃদয়ের ভেতর।
সুন্দরবনের সেই ভ্রমণ তানভীরের জীবনে শুধু একটি ভ্রমণ ছিল না, ছিল এক পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। একদিকে প্রকৃতির বিশালতা, অন্যদিকে বাঘের গর্বিত অথচ শান্ত উপস্থিতি — সব মিলিয়ে তিনি অনুভব করলেন, মানুষ কত ক্ষুদ্র আর প্রকৃতি কত বিশাল।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে কাছ থেকে দেখা শুধুই ভাগ্যের ব্যাপার নয়, এটা একটা শিক্ষাও — প্রকৃতি আমাদের যা দেয়, তাকে সম্মান করতে শিখতে হবে।
সুন্দরবনের গভীরতা ও সৌন্দর্য, আর বনের রাজার এক ঝলক দর্শন — এই স্মৃতি তিনি সারাজীবন বহন করবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















