০৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়া বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাস করল মাইক্রোসফট ও জি৪২ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডেটা-সেন্টার বিস্তার ঘোষণা বড় টেকের চাপের মুখে ইইউ এইআই আইন বাস্তবায়ন বিলম্বে বিবেচনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে গম কিনছে, বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে বড় পদক্ষেপ ব্লেক লাইভলির মামলায় সাক্ষী টেইলর সুইফট ও হিউ জ্যাকম্যান; ক্ষতিপূরণের দাবি ১৬১ মিলিয়ন ডলার ডাক রাশ্মিকার ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ প্রথম দিনেই ব্যর্থতার মুখে ৩ দফা দাবি: শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে সেন্ট মেরি ক্যাথেড্রাল চার্চে বিস্ফোরণ: তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ

জন্ম থেকে হারিয়ে যাওয়া জীবনের গল্প

রাজধানী ঢাকার ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও পার্কের চারপাশে প্রতিদিনই দেখা যায় হাজার হাজার পথশিশু বা টোকাই। তারা জন্ম থেকেই বা জীবনের কোনো এক পর্যায়ে পরিবার ও স্থায়ী আশ্রয় হারিয়ে রাস্তায় এসে পড়ে। বর্তমানে ঢাকায় আনুমানিক ১৪ লক্ষের মতো পথশিশু রয়েছে, যারা প্রতিদিনই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বড় অংশই ছেলে শিশু, তবে মেয়ের সংখ্যাও উপেক্ষা করার মতো নয়।

রাস্তায় বেড়ে ওঠা

পথশিশুদের শৈশব শুরু হয় অনিশ্চয়তার মাঝেই। রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল, সদরঘাট কিংবা ব্যস্ত বাজার—এসবই তাদের প্রথম আশ্রয়। খাবারের সন্ধানে তারা ভাঙারি কুড়ায়, বোতল বা কাগজ সংগ্রহ করে, গাড়ির কাচ মুছে, ফুল বা পত্রিকা বিক্রি করে কিংবা মাল বোঝাইয়ের কাজ করে। শিক্ষা থেকে তারা কার্যত বিচ্ছিন্ন—অধিকাংশই পড়তে–লিখতে পারে না। অসুস্থতা তাদের জীবনের স্থায়ী সঙ্গী; জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ কিংবা আঘাত প্রায় সবার জীবনে ঘনঘন ফিরে আসে।

ঢাকায় নতুন করে আসা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বস্তি ছাড়া কি উপায় নেই - BBC News বাংলা

বড় হলে তারা কোথায় যায়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক পথশিশু রাস্তা থেকে সরে যায়, তবে তাদের জীবন সহজ হয় না। কেউ বস্তি বা মেসে গাদাগাদি করে থাকতে শুরু করে,কেউ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত হয়—গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ, নির্মাণসাইট, ইটভাটা, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় কাজ করে। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বা অপরাধচক্রে জড়িয়ে যায়। কিছু শিশু অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে বা প্রবাসের নামে পাচারের শিকার হয়।

প্রতিদিনের সংগ্রাম

পথশিশুদের আয় খুবই অনিশ্চিত—কাজ থাকলে খাবার জোটে, না হলে অনাহার। জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অভাবে তারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রাপ্তযোগ্য, আর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের কাছে প্রায় অদৃশ্য। রাত কাটাতে হয় ফুটপাথ, গলিপথ, বাজারের ফাঁকা কোণা বা কোনো দোকানের সামনে।

জীবনের শেষ পরিণতি

ঢাকার পথশিশু: দূরাশা, সংগ্রাম আর মুক্তি আকাঙ্ক্ষার এক অজানা গল্প

পথশিশুদের জীবনের পরিণতি একেক জনের জন্য ভিন্ন হলেও কিছু মিল পাওয়া যায়। কেউ অনানুষ্ঠানিক শ্রমজীবী হয়ে পরিবার গড়ে তুললেও শিক্ষার অভাব ও স্বল্প আয়ের কারণে দারিদ্র্য চক্র থেকে বের হতে পারে না। কেউ পুনর্বাসন প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে, তবে এই সুযোগ খুবই সীমিত। অন্যদিকে, অনেকের জীবন শেষ হয় সড়ক দুর্ঘটনা, সহিংসতা, মাদকজনিত জটিলতা বা কারাগারে।

কি তাদের জন্য ভালো জীবনের সম্ভাবনা আছে?

ভালো জীবনের সম্ভাবনা আছে, তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত শনাক্তকরণ ও রেফারাল, অস্থায়ী আশ্রয়, শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুশ্রম আইন বাস্তবায়ন। রাস্তার শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা ও নিরাপদ আশ্রয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

ঢাকার জন্য চ্যালেঞ্জ

ঢাকার পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দারিদ্র্য, গ্রামীণ এলাকা থেকে অভিবাসন, পারিবারিক ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নতুন শিশু প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে। তাদের পুনর্বাসন ও সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নাইজেরিয়া বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাস করল

জন্ম থেকে হারিয়ে যাওয়া জীবনের গল্প

০৬:৫৩:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

রাজধানী ঢাকার ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও পার্কের চারপাশে প্রতিদিনই দেখা যায় হাজার হাজার পথশিশু বা টোকাই। তারা জন্ম থেকেই বা জীবনের কোনো এক পর্যায়ে পরিবার ও স্থায়ী আশ্রয় হারিয়ে রাস্তায় এসে পড়ে। বর্তমানে ঢাকায় আনুমানিক ১৪ লক্ষের মতো পথশিশু রয়েছে, যারা প্রতিদিনই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বড় অংশই ছেলে শিশু, তবে মেয়ের সংখ্যাও উপেক্ষা করার মতো নয়।

রাস্তায় বেড়ে ওঠা

পথশিশুদের শৈশব শুরু হয় অনিশ্চয়তার মাঝেই। রেলস্টেশন, বাসটার্মিনাল, সদরঘাট কিংবা ব্যস্ত বাজার—এসবই তাদের প্রথম আশ্রয়। খাবারের সন্ধানে তারা ভাঙারি কুড়ায়, বোতল বা কাগজ সংগ্রহ করে, গাড়ির কাচ মুছে, ফুল বা পত্রিকা বিক্রি করে কিংবা মাল বোঝাইয়ের কাজ করে। শিক্ষা থেকে তারা কার্যত বিচ্ছিন্ন—অধিকাংশই পড়তে–লিখতে পারে না। অসুস্থতা তাদের জীবনের স্থায়ী সঙ্গী; জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া, চর্মরোগ কিংবা আঘাত প্রায় সবার জীবনে ঘনঘন ফিরে আসে।

ঢাকায় নতুন করে আসা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বস্তি ছাড়া কি উপায় নেই - BBC News বাংলা

বড় হলে তারা কোথায় যায়

বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক পথশিশু রাস্তা থেকে সরে যায়, তবে তাদের জীবন সহজ হয় না। কেউ বস্তি বা মেসে গাদাগাদি করে থাকতে শুরু করে,কেউ ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত হয়—গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ, নির্মাণসাইট, ইটভাটা, হোটেল বা রেস্তোরাঁয় কাজ করে। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে বা অপরাধচক্রে জড়িয়ে যায়। কিছু শিশু অপ্রাপ্তবয়সে বিয়ে বা প্রবাসের নামে পাচারের শিকার হয়।

প্রতিদিনের সংগ্রাম

পথশিশুদের আয় খুবই অনিশ্চিত—কাজ থাকলে খাবার জোটে, না হলে অনাহার। জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অভাবে তারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা প্রায় অপ্রাপ্তযোগ্য, আর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের কাছে প্রায় অদৃশ্য। রাত কাটাতে হয় ফুটপাথ, গলিপথ, বাজারের ফাঁকা কোণা বা কোনো দোকানের সামনে।

জীবনের শেষ পরিণতি

ঢাকার পথশিশু: দূরাশা, সংগ্রাম আর মুক্তি আকাঙ্ক্ষার এক অজানা গল্প

পথশিশুদের জীবনের পরিণতি একেক জনের জন্য ভিন্ন হলেও কিছু মিল পাওয়া যায়। কেউ অনানুষ্ঠানিক শ্রমজীবী হয়ে পরিবার গড়ে তুললেও শিক্ষার অভাব ও স্বল্প আয়ের কারণে দারিদ্র্য চক্র থেকে বের হতে পারে না। কেউ পুনর্বাসন প্রোগ্রামে যোগ দিয়ে জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে, তবে এই সুযোগ খুবই সীমিত। অন্যদিকে, অনেকের জীবন শেষ হয় সড়ক দুর্ঘটনা, সহিংসতা, মাদকজনিত জটিলতা বা কারাগারে।

কি তাদের জন্য ভালো জীবনের সম্ভাবনা আছে?

ভালো জীবনের সম্ভাবনা আছে, তবে এর জন্য প্রয়োজন দ্রুত শনাক্তকরণ ও রেফারাল, অস্থায়ী আশ্রয়, শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুশ্রম আইন বাস্তবায়ন। রাস্তার শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা ও নিরাপদ আশ্রয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

ঢাকার জন্য চ্যালেঞ্জ

ঢাকার পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দারিদ্র্য, গ্রামীণ এলাকা থেকে অভিবাসন, পারিবারিক ভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নতুন শিশু প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে। তাদের পুনর্বাসন ও সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন হবে।