সিনেমা ও সাহিত্যে পুলের নাটকীয়তা
রালফ ফিয়েনস অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আ বিগার স্প্ল্যাশ’-এ গল্পের শুরু এক পরিচিত প্রশ্ন দিয়ে—“এখানে কি পুল আছে?” ইতালির এক দ্বীপে প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে চরিত্রটি তার চালাক-চতুর মেয়েকে নিয়ে আসে, আর সেই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় নানা ঘটনার জট।
বৃষ্টিবহুল দেশ, বিশেষ করে ব্রিটেনে, গ্রীষ্মের ছুটি আর সুইমিং পুল যেন অবিচ্ছেদ্য। গরম দিনে ঠান্ডা স্বস্তি, ব্যস্ত জীবনে অলস আনন্দ—পুল মানেই যেন ছুটির স্বর্গ। কিন্তু কল্পনার জগতে পা দিলেই পুল হয়ে ওঠে জটিল প্রতীক—একই সঙ্গে স্বপ্ন ও ভাঙনের, জীবন ও মৃত্যুর, সরলতা ও কামনার প্রতীক।
সাফল্য ও সামাজিক অবস্থানের প্রতীক
বাস্তবে যেমন শিশুদের উচ্ছ্বাসে পুল ভরে ওঠে, তেমনই সিনেমায় পুল অনেক সময় সামাজিক সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে। ডাকাতি-ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পুলের ধারে বসা মানে অপরাধী তার লক্ষ্য হাসিল করেছে—যেমন দেখা যায় ‘সেক্সি বিস্ট’ বা ‘দ্য গোল্ড’-এ।

হতাশা ও ভ্রান্তির আয়না
জন চিভারের বিখ্যাত গল্প ‘দ্য সুইমার’-এ এক ব্যক্তি প্রতিবেশীদের ব্যাকইয়ার্ড পুল পেরিয়ে নিজের বাড়ি ফেরার পথে নিজের সামাজিক পতন টের পায়, যদিও সে নিজেই ভ্রান্তিতে আবদ্ধ।
প্রলোভন, দৃষ্টি ও বিপদ
জেন অস্টেনের নাচঘরের মতোই পুলও মানুষকে একত্র করে, তবে এখানে বিপদের আভাস ও পোশাকের অভাব থাকে বেশি। সিরিজ ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’-এ পুল হয়ে ওঠে দৃষ্টি বিনিময় ও ফ্লার্টেশনের কেন্দ্র। কিশোর চলচ্চিত্রে পুল পার্টি এক ধ্রুপদি উপাদান।

শৈশবের আনন্দ ও প্রজন্মের মিলনস্থল
পুল শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নয়, শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয়—কখনও কখনও এটি একপ্রকার ‘জঙ্গল ওয়াটারিং-হোল’-এর মতো, যেখানে প্রজন্ম ও অপরিচিতরা মিলে মিশে যায়। সিনেমা ‘রাশমোর’-এ বিল মারে’র চরিত্র পুলে গলফ বল ছুড়ে এবং সিগারেট হাতে ঝাঁপ দেয়—যা এক ধরনের ভেঙে পড়া জীবনের প্রতীক।
সৌন্দর্যের আড়ালে দূষণ ও বিপর্যয়
ডেভিড হকনির বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘আ বিগার স্প্ল্যাশ’-এ পুলের জাঁকজমক দেখা গেলেও, কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়—সানস্ক্রিনের আস্তরণ বা মৃত পতঙ্গ পুলের ফিল্টারে জমে আছে। কল্পনায় পুলে দূষণ মানে বিপদের পূর্বাভাস—‘দ্য সুইমারস’-এ সেটি বোমা, ‘দ্য সোপ্রানোস’-এ হাঁসের পরিবার, আর ‘সানসেট বুলেভার্ড’-এ তা এক মৃতদেহ।

আমেরিকান স্বপ্নের ডুবে যাওয়া
‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’-তে গ্যাটসবি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজের মার্বেল পুলে ভাসতে থাকে—যা এক অর্থে অপূর্ণ আমেরিকান স্বপ্নের প্রতীক। কখনও পুল নতুন জীবনের প্রতীক, আবার কখনও এটি হয়ে ওঠে অপরাধের স্থান বা কবর।
একাকিত্বের আয়না
যে পুলেই নামুন না কেন, শেষ পর্যন্ত মানুষ একাই সাঁতার কাটে। ঠান্ডা পানিতে প্রথম ডুব, চোখে ক্লোরিনের জ্বালা—সেই মুহূর্তে আপনি কেবল নিজের সঙ্গেই থাকেন। সিনেমা ‘দ্য গ্র্যাজুয়েট’-এ ডাস্টিন হফম্যানের চরিত্র পুলে বসে প্রাপ্তবয়স্ক জীবন ও অবৈধ সম্পর্কের চাপ থেকে পালাতে চাইলেও, পানির উপর বা নিচে কোথাও নিজের চিন্তা থেকে মুক্তি পায় না।
পুলের জলে যতক্ষণ ভাসবেন, শেষ পর্যন্ত সেটিই আপনাকে আপনার নিজের প্রতিবিম্ব ফিরিয়ে দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















