০৭:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান নাইজেরিয়া বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আইন পাস করল মাইক্রোসফট ও জি৪২ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ডেটা-সেন্টার বিস্তার ঘোষণা বড় টেকের চাপের মুখে ইইউ এইআই আইন বাস্তবায়ন বিলম্বে বিবেচনায় বাংলাদেশ আমেরিকা থেকে গম কিনছে, বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে বড় পদক্ষেপ ব্লেক লাইভলির মামলায় সাক্ষী টেইলর সুইফট ও হিউ জ্যাকম্যান; ক্ষতিপূরণের দাবি ১৬১ মিলিয়ন ডলার ডাক রাশ্মিকার ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’ প্রথম দিনেই ব্যর্থতার মুখে ৩ দফা দাবি: শহীদ মিনারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি গাজীপুরে তুলার গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণে

টিকটকে দীর্ঘ সময়: তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য ও সময়ের অপচয়

অনলাইন বিনোদনের নতুন যুগ

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে টিকটক বিশেষভাবে জনপ্রিয়—সংক্ষিপ্ত ভিডিও, সৃজনশীল কন্টেন্ট ও ভাইরাল চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি তরুণকে আকৃষ্ট করছে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তবে দিনে দীর্ঘ সময় টিকটক ব্যবহারের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব, যা অনেক তরুণ ও তাদের পরিবার বুঝতেই পারছেন না।

ব্যবহারের চিত্র: বাংলাদেশ ও বিশ্ব

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের শুরুতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী টিকটক ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ৩ কোটি ৭৩ লাখ। ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখে পৌঁছেছে—যা বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে রেখেছে। বিশ্বব্যাপী গড়ে প্রতিদিন ৫৫–৫৮ মিনিট টিকটক ব্যবহারে ব্যয় হয়—এ প্রবণতা প্রতি বছরই বাড়ছে।

মস্তিষ্ক ও মনোযোগের উপর প্রভাব

টিকটকের ভিডিও সাধারণত ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। এই দ্রুত বিনোদনের ধারা মস্তিষ্কে ক্রমাগত উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ‘ডোপামিন রাশ’ তৈরি করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের কন্টেন্ট দেখলে মনোযোগের ক্ষমতা হ্রাস পায়। পড়াশোনা, বই পড়া বা কোনো বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার ধৈর্য কমে যায়। ফলে তরুণরা একটানা কোনো কাজ শেষ করতে পারছে না, যা শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

stress | What are the symptoms of stress dgtl - Anandabazar

মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি

ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকটক স্ক্রল করার অভ্যাস সহজেই আসক্তিতে পরিণত হয়। এই আসক্তি ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ও একাকিত্ব বাড়ায়। অন্যের সাজানো জীবন দেখে নিজের জীবনের প্রতি অসন্তুষ্টি তৈরি হয়, যা আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক চিন্তায় ভুগে পড়াশোনা ও সামাজিকতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

তরুণদের অভিজ্ঞতা

  • • রিদ্মি (১৭,কলেজছাত্রীঢাকা): “রাতে ঘুমোতে যাওয়ার কথা, কিন্তু ‘ফর ইউ’ পেজে ভিডিও দেখতে দেখতে দেখি দেড়–দুই ঘণ্টা কেটে গেছে। পরের দিন ক্লাসে মনোযোগ থাকে না।”
  • • ইমন (১৯,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীচট্টগ্রাম): “রিল বানাতে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট পিছিয়ে যায়। ডেডলাইন এলেই প্রচণ্ড চাপ লাগে।”
  • • সায়েম (১৫,স্কুলশিক্ষার্থীময়মনসিংহ): “ফলোয়ার বাড়াতে চাই। ভিউ কম হলে মন খারাপ হয়ে যায়, পড়াশোনায় মন বসে না।”

অভিভাবকদের উদ্বেগ

  • • শায়লা (মা,ঢাকা): “ছেলের হাতে রাতে ফোন না দিলে রাগ করে। তাই ‘ঘুমের এক ঘণ্টা আগে ফোন নয়’ নিয়ম করেছি।”
  • • মোস্তাফিজ (বাবা,রাজশাহী): “পরীক্ষার বছরে টাইমার সেট করেছি—৩০ মিনিট বাজলেই বিরতি। নজরদারি না করলে আবার বেড়ে যায়।”

Maintaining Healthy Vision in the Digital Age

শারীরিক ক্ষতি

দীর্ঘ সময় মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে চোখে চাপ, ঝাপসা দেখা ও মাথাব্যথা হতে পারে। ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা, ঘুমের অভাব এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে স্থূলতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। রাত জেগে টিকটক ব্যবহার করলে ঘুমের ছন্দ নষ্ট হয়, যা পরদিনের কাজ ও পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।

সামাজিক জীবনে প্রভাব

অতিরিক্ত টিকটক ব্যবহার বাস্তব জীবনের সম্পর্ক কমিয়ে দেয়। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটানোয় সামাজিক দক্ষতা ও বাস্তব সমস্যার মোকাবিলা করার ক্ষমতা কমে যায়।

অশালীন ও বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট

সব ভিডিও ইতিবাচক বা শিক্ষামূলক নয়। অনেক সময় অশালীন, সহিংস বা বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট ভাইরাল হয়। তরুণরা এগুলো অনুকরণ করতে পারে, যা তাদের আচরণ ও মূল্যবোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুয়া খবরও দ্রুত ছড়ায়, যা বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা নষ্ট করে।

The Psychology of Short-Form Content: Why We Love Bite-Sized Videos

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শর্ট–ফর্ম ভিডিওর অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোরদের মধ্যে দৈনিক ৪ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম থাকলে ঘুমের সমস্যা, কম শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক চাপ বাড়ে। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স বলছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার চেয়ে পরিবারিক মিডিয়া পরিকল্পনা ও কন্টেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সময় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কৌশল

আগে ঘুম, পড়াশোনা, ব্যায়াম ও সামাজিক সময় ঠিক করুন—বাকি সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া।

ফোনে অ্যাপ–লিমিট ব্যবহার করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।

শোবার এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ রাখুন।

ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক কন্টেন্টে মনোযোগ দিন।

সপ্তাহে অন্তত এক–দুই দিন অফলাইনে কাটান।

পরিবারে সবাই মিলে মিডিয়া পরিকল্পনা তৈরি করুন।

A lack of sleep affects our emotions, we become less positive and more anxious | Health | EL PAÍS English

ঝুঁকির লক্ষণ ও করণীয়

যদি দেখা যায় ঘুম কমে যাচ্ছে, ফল খারাপ হচ্ছে, মেজাজ বদলে যাচ্ছে, খাওয়া–দাওয়ায় অনিয়ম হচ্ছে, বন্ধু–পরিবার এড়িয়ে চলা শুরু হয়েছে—তাহলে ব্যবহারের সময় কমানোর পরিকল্পনা নিন।
৩ ধাপ কৌশল কার্যকর হতে পারে—

  • • ট্র্যাকিং:গত ৭ দিনে টিকটকে কত সময় ব্যয় হয়েছে তা নথিভুক্ত করুন।
  • • কাটডাউন:প্রতি সপ্তাহে ১৫–২০% কমিয়ে আনুন।
  • • রিপ্লেস:সেই সময়ে অফলাইন বিকল্প (ব্যায়াম, বই পড়া, ক্লাব) বেছে নিন।

প্রয়োজনে স্কুল কাউন্সেলর বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে পারেন।

টিকটক বিনোদন ও সৃজনশীলতার বড় ক্ষেত্র হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে তরুণদের মনোযোগ,ঘুম, আত্মমর্যাদা, পড়াশোনা ও সামাজিক দক্ষতায় গভীর ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রযুক্তি যেন হাতিয়ার হয়, প্রতিবন্ধক নয়—এজন্য সচেতনতা, সময় ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত কন্টেন্ট বেছে নেওয়া অপরিহার্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

কিছু রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ জনগণের অধিকার বিপন্ন করতে পারে: তারেক রহমান

টিকটকে দীর্ঘ সময়: তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য ও সময়ের অপচয়

০৩:২৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

অনলাইন বিনোদনের নতুন যুগ

বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া তরুণদের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে টিকটক বিশেষভাবে জনপ্রিয়—সংক্ষিপ্ত ভিডিও, সৃজনশীল কন্টেন্ট ও ভাইরাল চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে এটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি তরুণকে আকৃষ্ট করছে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তবে দিনে দীর্ঘ সময় টিকটক ব্যবহারের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু গুরুতর ক্ষতিকর প্রভাব, যা অনেক তরুণ ও তাদের পরিবার বুঝতেই পারছেন না।

ব্যবহারের চিত্র: বাংলাদেশ ও বিশ্ব

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের শুরুতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী টিকটক ব্যবহারকারী ছিল প্রায় ৩ কোটি ৭৩ লাখ। ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লাখে পৌঁছেছে—যা বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে রেখেছে। বিশ্বব্যাপী গড়ে প্রতিদিন ৫৫–৫৮ মিনিট টিকটক ব্যবহারে ব্যয় হয়—এ প্রবণতা প্রতি বছরই বাড়ছে।

মস্তিষ্ক ও মনোযোগের উপর প্রভাব

টিকটকের ভিডিও সাধারণত ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। এই দ্রুত বিনোদনের ধারা মস্তিষ্কে ক্রমাগত উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং ‘ডোপামিন রাশ’ তৈরি করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এ ধরনের কন্টেন্ট দেখলে মনোযোগের ক্ষমতা হ্রাস পায়। পড়াশোনা, বই পড়া বা কোনো বিষয় গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার ধৈর্য কমে যায়। ফলে তরুণরা একটানা কোনো কাজ শেষ করতে পারছে না, যা শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

stress | What are the symptoms of stress dgtl - Anandabazar

মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি

ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকটক স্ক্রল করার অভ্যাস সহজেই আসক্তিতে পরিণত হয়। এই আসক্তি ডিপ্রেশন, উদ্বেগ ও একাকিত্ব বাড়ায়। অন্যের সাজানো জীবন দেখে নিজের জীবনের প্রতি অসন্তুষ্টি তৈরি হয়, যা আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক চিন্তায় ভুগে পড়াশোনা ও সামাজিকতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।

তরুণদের অভিজ্ঞতা

  • • রিদ্মি (১৭,কলেজছাত্রীঢাকা): “রাতে ঘুমোতে যাওয়ার কথা, কিন্তু ‘ফর ইউ’ পেজে ভিডিও দেখতে দেখতে দেখি দেড়–দুই ঘণ্টা কেটে গেছে। পরের দিন ক্লাসে মনোযোগ থাকে না।”
  • • ইমন (১৯,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীচট্টগ্রাম): “রিল বানাতে গিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট পিছিয়ে যায়। ডেডলাইন এলেই প্রচণ্ড চাপ লাগে।”
  • • সায়েম (১৫,স্কুলশিক্ষার্থীময়মনসিংহ): “ফলোয়ার বাড়াতে চাই। ভিউ কম হলে মন খারাপ হয়ে যায়, পড়াশোনায় মন বসে না।”

অভিভাবকদের উদ্বেগ

  • • শায়লা (মা,ঢাকা): “ছেলের হাতে রাতে ফোন না দিলে রাগ করে। তাই ‘ঘুমের এক ঘণ্টা আগে ফোন নয়’ নিয়ম করেছি।”
  • • মোস্তাফিজ (বাবা,রাজশাহী): “পরীক্ষার বছরে টাইমার সেট করেছি—৩০ মিনিট বাজলেই বিরতি। নজরদারি না করলে আবার বেড়ে যায়।”

Maintaining Healthy Vision in the Digital Age

শারীরিক ক্ষতি

দীর্ঘ সময় মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে চোখে চাপ, ঝাপসা দেখা ও মাথাব্যথা হতে পারে। ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা, ঘুমের অভাব এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে স্থূলতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। রাত জেগে টিকটক ব্যবহার করলে ঘুমের ছন্দ নষ্ট হয়, যা পরদিনের কাজ ও পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।

সামাজিক জীবনে প্রভাব

অতিরিক্ত টিকটক ব্যবহার বাস্তব জীবনের সম্পর্ক কমিয়ে দেয়। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর বদলে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় কাটানোয় সামাজিক দক্ষতা ও বাস্তব সমস্যার মোকাবিলা করার ক্ষমতা কমে যায়।

অশালীন ও বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট

সব ভিডিও ইতিবাচক বা শিক্ষামূলক নয়। অনেক সময় অশালীন, সহিংস বা বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট ভাইরাল হয়। তরুণরা এগুলো অনুকরণ করতে পারে, যা তাদের আচরণ ও মূল্যবোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুয়া খবরও দ্রুত ছড়ায়, যা বাস্তবতা বোঝার ক্ষমতা নষ্ট করে।

The Psychology of Short-Form Content: Why We Love Bite-Sized Videos

বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শর্ট–ফর্ম ভিডিওর অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোরদের মধ্যে দৈনিক ৪ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম থাকলে ঘুমের সমস্যা, কম শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক চাপ বাড়ে। আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স বলছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার চেয়ে পরিবারিক মিডিয়া পরিকল্পনা ও কন্টেন্টের মান নিয়ন্ত্রণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সময় নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কৌশল

আগে ঘুম, পড়াশোনা, ব্যায়াম ও সামাজিক সময় ঠিক করুন—বাকি সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া।

ফোনে অ্যাপ–লিমিট ব্যবহার করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন।

শোবার এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ রাখুন।

ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক কন্টেন্টে মনোযোগ দিন।

সপ্তাহে অন্তত এক–দুই দিন অফলাইনে কাটান।

পরিবারে সবাই মিলে মিডিয়া পরিকল্পনা তৈরি করুন।

A lack of sleep affects our emotions, we become less positive and more anxious | Health | EL PAÍS English

ঝুঁকির লক্ষণ ও করণীয়

যদি দেখা যায় ঘুম কমে যাচ্ছে, ফল খারাপ হচ্ছে, মেজাজ বদলে যাচ্ছে, খাওয়া–দাওয়ায় অনিয়ম হচ্ছে, বন্ধু–পরিবার এড়িয়ে চলা শুরু হয়েছে—তাহলে ব্যবহারের সময় কমানোর পরিকল্পনা নিন।
৩ ধাপ কৌশল কার্যকর হতে পারে—

  • • ট্র্যাকিং:গত ৭ দিনে টিকটকে কত সময় ব্যয় হয়েছে তা নথিভুক্ত করুন।
  • • কাটডাউন:প্রতি সপ্তাহে ১৫–২০% কমিয়ে আনুন।
  • • রিপ্লেস:সেই সময়ে অফলাইন বিকল্প (ব্যায়াম, বই পড়া, ক্লাব) বেছে নিন।

প্রয়োজনে স্কুল কাউন্সেলর বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে পারেন।

টিকটক বিনোদন ও সৃজনশীলতার বড় ক্ষেত্র হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে তরুণদের মনোযোগ,ঘুম, আত্মমর্যাদা, পড়াশোনা ও সামাজিক দক্ষতায় গভীর ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রযুক্তি যেন হাতিয়ার হয়, প্রতিবন্ধক নয়—এজন্য সচেতনতা, সময় ব্যবস্থাপনা ও মানসম্মত কন্টেন্ট বেছে নেওয়া অপরিহার্য।