০৯:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫
মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৮৩৪ জন পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের বছর? প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রত্যাশীদের আমরণ অনশন ৬৫ ঘণ্টা অতিক্রম, সরকারের নীরবতা অব্যাহত গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই: বিএনপি নেতা আমীর খসরু শাহবাগে শিক্ষকদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গে পুলিশের পদক্ষেপের পক্ষে ডিএমপি গণভোটের জন্যে সাত দিনের আলটিমেটাম অগ্রহণযোগ্য: সরকারের সমালোচনায় সালাহউদ্দিন শাহবাগে শিক্ষক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ১২০ জন প্রবল বৃষ্টিতে গাবা ম্যাচ বাতিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজ জিতল ভারত চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে পাকিস্তানি নৌযান ‘পিএনএস সাইফ’

মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ড নিয়ে নাইজারের ক্ষোভ: নিলামে বিক্রি হওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন

দুই বছর আগে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের এক বিরল উল্কাপিণ্ড সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪৩ লাখ ডলারে। এটি পৃথিবীতে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় টুকরো। কিন্তু এই বিক্রয় নিয়ে নাইজার সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্ন উঠেছে—এটি কীভাবে দেশের বাইরে গেল এবং নিলামের অর্থের কোনো অংশ কি নাইজার পেয়েছে?

বিরল আবিষ্কার থেকে নিলামে বিক্রি

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নাইজারের আগাদেজ অঞ্চলের চিরফা মরূদ্যানের পশ্চিমে সাহারায় এটি খুঁজে পান এক অজ্ঞাত উল্কাপিণ্ড শিকারি। ওজন ২৪.৭ কেজি এই শিলা লক্ষ লক্ষ বছর আগে মঙ্গলগ্রহ থেকে ২২.৫ কোটি কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। প্রথমে এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়, পরে ইতালির আরেজো শহরের একটি ব্যক্তিগত গ্যালারিতে যায় এবং কিছু সময় রোমে ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সিতে প্রদর্শিত হয়।

গত মাসে নিউইয়র্কের সথেবি’স নিলামঘরে এটি প্রদর্শিত হয় এবং এক অজ্ঞাত ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়। বিক্রেতার নামও প্রকাশ করা হয়নি।

নাইজারের অভিযোগ ও তদন্ত

নাইজার সরকার এই রপ্তানির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং সম্ভাব্য অবৈধ আন্তর্জাতিক পাচারের আশঙ্কা জানিয়েছে। দেশটি ইতিমধ্যেই উল্কাপিণ্ডটির আবিষ্কার ও বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও সথেবি’স দাবি করেছে, সব আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে রপ্তানি ও পরিবহন করা হয়েছে এবং সব কাগজপত্র সঠিক ছিল।

নাইজারের ১৯৯৭ সালের ঐতিহ্য সুরক্ষা আইনে “খনিজ নমুনা” উল্লেখ থাকলেও “উল্কাপিণ্ড” নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এ সুযোগেই হয়তো এটি দেশের বাইরে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও ঐতিহ্য সুরক্ষা

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাইজার হেরিটেজ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পল সেরেনো মনে করেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনা অনুমতিতে বাইরে নেওয়া যায় না। তাঁর ভাষায়, “আমরা ঔপনিবেশিক সময় পেরিয়ে এসেছি, এখন এসব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” তিনি নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান, যেখানে দেশের সব প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে।

মরক্কোর অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

মরক্কোও বহু উল্কাপিণ্ড পাচারের সমস্যায় পড়েছে। ভূতত্ত্ববিদ হাসনা চেনাউই আওদজেহানে গত ২৫ বছর ধরে নিজের দেশে এসব মহাজাগতিক নিদর্শন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ২০১১ সালে মরক্কোতে পড়া মঙ্গলগ্রহের টিসিন্ট উল্কাপিণ্ডের মোট ওজন ছিল ৭ কেজি, কিন্তু এখন দেশে মাত্র ৩০ গ্রাম অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে চলে গেছে।

তাঁর মতে, “এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, আমাদের পরিচয়ের অংশ। এগুলো নিয়ে গর্ব করার অধিকার আমাদের আছে।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা

প্রফেসর সেরেনো আশা করছেন, সথেবি’সের এই নিলাম নাইজারকে ভবিষ্যতে কঠোর আইন প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করবে। আর যদি উল্কাপিণ্ডটি কোনো জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়, তবে সেখানেও নাইজারের দাবি উত্থাপিত হবে যে এটি তাদের বৈধ সম্পদ।

এই ঘটনা শুধু নাইজারের জন্য নয়, বরং এমন সব দেশের জন্য সতর্কবার্তা, যাদের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ অনিয়ন্ত্রিত বাজারে হারিয়ে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মংলায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ প্রবাসী নারী পর্যটক

মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ড নিয়ে নাইজারের ক্ষোভ: নিলামে বিক্রি হওয়া ঐতিহাসিক নিদর্শন

১০:০০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

দুই বছর আগে পশ্চিম আফ্রিকার নাইজারের সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের এক বিরল উল্কাপিণ্ড সম্প্রতি নিউইয়র্কে নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪৩ লাখ ডলারে। এটি পৃথিবীতে পাওয়া মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় টুকরো। কিন্তু এই বিক্রয় নিয়ে নাইজার সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলে তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্ন উঠেছে—এটি কীভাবে দেশের বাইরে গেল এবং নিলামের অর্থের কোনো অংশ কি নাইজার পেয়েছে?

বিরল আবিষ্কার থেকে নিলামে বিক্রি

২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নাইজারের আগাদেজ অঞ্চলের চিরফা মরূদ্যানের পশ্চিমে সাহারায় এটি খুঁজে পান এক অজ্ঞাত উল্কাপিণ্ড শিকারি। ওজন ২৪.৭ কেজি এই শিলা লক্ষ লক্ষ বছর আগে মঙ্গলগ্রহ থেকে ২২.৫ কোটি কিলোমিটার ভ্রমণ করে পৃথিবীতে এসে পড়েছিল। প্রথমে এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়, পরে ইতালির আরেজো শহরের একটি ব্যক্তিগত গ্যালারিতে যায় এবং কিছু সময় রোমে ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সিতে প্রদর্শিত হয়।

গত মাসে নিউইয়র্কের সথেবি’স নিলামঘরে এটি প্রদর্শিত হয় এবং এক অজ্ঞাত ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়। বিক্রেতার নামও প্রকাশ করা হয়নি।

নাইজারের অভিযোগ ও তদন্ত

নাইজার সরকার এই রপ্তানির বৈধতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং সম্ভাব্য অবৈধ আন্তর্জাতিক পাচারের আশঙ্কা জানিয়েছে। দেশটি ইতিমধ্যেই উল্কাপিণ্ডটির আবিষ্কার ও বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও সথেবি’স দাবি করেছে, সব আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে রপ্তানি ও পরিবহন করা হয়েছে এবং সব কাগজপত্র সঠিক ছিল।

নাইজারের ১৯৯৭ সালের ঐতিহ্য সুরক্ষা আইনে “খনিজ নমুনা” উল্লেখ থাকলেও “উল্কাপিণ্ড” নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। এ সুযোগেই হয়তো এটি দেশের বাইরে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও ঐতিহ্য সুরক্ষা

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাইজার হেরিটেজ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পল সেরেনো মনে করেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনা অনুমতিতে বাইরে নেওয়া যায় না। তাঁর ভাষায়, “আমরা ঔপনিবেশিক সময় পেরিয়ে এসেছি, এখন এসব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” তিনি নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান, যেখানে দেশের সব প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে।

মরক্কোর অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

মরক্কোও বহু উল্কাপিণ্ড পাচারের সমস্যায় পড়েছে। ভূতত্ত্ববিদ হাসনা চেনাউই আওদজেহানে গত ২৫ বছর ধরে নিজের দেশে এসব মহাজাগতিক নিদর্শন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ২০১১ সালে মরক্কোতে পড়া মঙ্গলগ্রহের টিসিন্ট উল্কাপিণ্ডের মোট ওজন ছিল ৭ কেজি, কিন্তু এখন দেশে মাত্র ৩০ গ্রাম অবশিষ্ট আছে। বাকিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে চলে গেছে।

তাঁর মতে, “এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, আমাদের পরিচয়ের অংশ। এগুলো নিয়ে গর্ব করার অধিকার আমাদের আছে।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা

প্রফেসর সেরেনো আশা করছেন, সথেবি’সের এই নিলাম নাইজারকে ভবিষ্যতে কঠোর আইন প্রণয়নে উদ্বুদ্ধ করবে। আর যদি উল্কাপিণ্ডটি কোনো জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়, তবে সেখানেও নাইজারের দাবি উত্থাপিত হবে যে এটি তাদের বৈধ সম্পদ।

এই ঘটনা শুধু নাইজারের জন্য নয়, বরং এমন সব দেশের জন্য সতর্কবার্তা, যাদের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ অনিয়ন্ত্রিত বাজারে হারিয়ে যাচ্ছে।