অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পটভূমি
২০২৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে। শহরের নাকা ওয়ার্ডে অবস্থিত হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ এবং রেকর্ডসংখ্যক ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধি অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বোমা হামলার জীবিত বেঁচে থাকা ব্যক্তি (হিবাকুশা), নিহতদের স্বজনদের প্রতিনিধি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।
বর্তমানে হিবাকুশাদের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ৮৬ দশমিক ১৩ বছর। অর্থাৎ খুব শিগগিরই পৃথিবীতে আর কোনো প্রত্যক্ষ জীবিত সাক্ষী থাকবে না। তাই জীবিতদের অভিজ্ঞতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া এখন জরুরি কাজ।
বিশেষ অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাপানস্থ রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ পারমাণবিক অস্ত্রধারী কিছু দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। চলমান সংঘাতে জড়িয়ে থাকা ইউক্রেন ও ইসরায়েলের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন ও তাইওয়ানের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

নীরবতা পালন ও শান্তির বার্তা
সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে—যে সময় বোমাটি ফেলা হয়েছিল—নিহতদের স্বজনরা শান্তির ঘণ্টা বাজান এবং সবাই নীরবতা পালন করেন। হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই তার ‘শান্তি ঘোষণা’তে হিবাকুশাদের অবিচল মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপের জন্য নাগরিক সমাজে ঐকমত্য গড়ে তুলতে আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।”
নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠন ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
এটি ছিল প্রথম অনুষ্ঠান যেটি অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় সংগঠন ‘নিহন হিদানকিও’ (জাপান কনফেডারেশন অব এ-অ্যান্ড-এইচ-বোম্ব সাফারার্স অর্গানাইজেশন) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর।

প্রধানমন্ত্রী ইশিবা সংগঠনটির সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, “জাপান ‘তিনটি অ-পরমাণু নীতি’ দৃঢ়ভাবে মেনে চলবে এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেবে। যুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার দেশ হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব।”
নিহতদের হালনাগাদ তালিকা
পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহতদের জন্য নির্মিত স্মৃতিসৌধে হালনাগাদ তালিকা উপস্থাপন করা হয়। গত এক বছরে আরও ৪ হাজার ৯৪০ জনের মৃত্যুর তথ্য যুক্ত হওয়ায় মোট তালিকাভুক্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৬ জন।
জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে সারা দেশে সরকারি স্বীকৃত পারমাণবিক বোমা হামলার জীবিত ভুক্তভোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ১৩০ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৬৯৫ জন কম। ১৯৫৭ সালে প্রথম সনদ প্রদানের পর এবারই প্রথম এই সংখ্যা এক লাখের নিচে নেমে এসেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















