পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির যুক্তরাষ্ট্র সফরে একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে যদি পাকিস্তানের অস্তিত্ব সংকট তৈরি হয়, তবে “অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে ধ্বংস” করবেন। পাশাপাশি তিনি ইন্দুস পানি চুক্তি, কাশ্মীর পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়েও বক্তব্য দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু হুমকি
ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় পাকিস্তানের মানদূত ও ব্যবসায়ী আদনান আসাদের সম্মানে আয়োজিত এক ব্ল্যাক-টাই ডিনারে মুনির বলেন,
“আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। যদি মনে করি আমরা ধ্বংসের মুখে, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়েই ধ্বংস হব।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইন্দাসের পানি চুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন এবং ভারতের এই চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে ২৫ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। মুনির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভারত যখন বাঁধ নির্মাণ করবে, আমরা তা ১০টি ক্ষেপণাস্ত্রে উড়িয়ে দেব।”

ভারতের বিরুদ্ধে কড়া ভাষা
মুনির বলেন, “ইন্দাস নদী ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই , আলহামদুলিল্লাহ।”
তিনি আরও দাবি করেন, অতীতে তিনি সূরা ফিলের আয়াত ও শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির ছবি ব্যবহার করে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যাতে ভারতকে সতর্ক করা যায়। সূরা ফিল-এ বর্ণিত আছে কিভাবে আল্লাহ শত্রুর হাতি-সেনাদের উপর পাথর নিক্ষেপকারী পাখি প্রেরণ করেছিলেন, যা তাদের ধ্বংস করে দেয়।
আঘাতের পরিকল্পনা ও প্রতীকী তুলনা
ভারতের ওপর আঘাতের কৌশল নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভারতের পূর্ব দিক থেকে শুরু করব, যেখানে তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, তারপর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হব।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “ভারত হচ্ছে হাইওয়েতে ছুটে চলা ঝকঝকে মার্সিডিজ, আর আমরা কঙ্করে ভরা একটি ডাম্প ট্রাক। যখন ট্রাকটি মার্সিডিজকে আঘাত করবে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে?”

কূটনৈতিক প্রসঙ্গ ও কটাক্ষ
মুনির ভারতের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন, পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা কৃপণ নই, কেউ ভালো কাজ করলে প্রশংসা করি। তাই আমরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলাম।”
যুক্তরাষ্ট্র সফরের আনুষ্ঠানিকতা
আসিম মুনির ট্যাম্পায় যান যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) বিদায়ী কমান্ডার জেনারেল মাইকেল ই. কুরিলার অবসর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এবং নতুন কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপারের দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে।
এটি ছিল ভারতের সঙ্গে ‘অপারেশন সিন্ধুর’ সংঘর্ষের পর মুনিরের দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর।
বৈঠক ও প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মুনির সফরকালে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এবং প্রবাসী পাকিস্তানিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জেনারেল ড্যান কেইনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাকে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান।
প্রবাসীদের উদ্দেশে মুনির বলেন, পাকিস্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা রাখুন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিন। প্রবাসীরাও পাকিস্তানের উন্নয়নে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক
এর আগে জুন মাসে পাঁচ দিনের সফরে মুনির যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একান্ত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সাধারণত এ ধরনের সম্মান রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
সেই বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াবে, যার মধ্যে তেল চুক্তিও অন্তর্ভুক্ত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















