০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী গ্লোবাল কনটেন্টে ঝুঁকছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে ফিজির উপকূলীয় গ্রামগুলো পাহাড়ে দিকে সরে যাচ্ছে

সমুদ্রের চাপ ও ব্যর্থ প্রতিরোধ

ফিজির উপকূলীয় গ্রাম ভুনিসাভিসাভি বহু বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করেছে। প্রথমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সী-ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এরপরও পানি ঢুকতে থাকায় নালা কেটে, পাথর ও বালি এনে ভরাট করা হয়। কিন্তু এখন ঢেউ সী-ওয়াল পেরিয়ে যায়, নালা ভরে ফেলে, পাথর ও বালি সরিয়ে নেয়।

এ অবস্থায় মুয়ানি গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামটি ধাপে ধাপে কাঠের বাড়িগুলো পাহাড়ের ওপর সরিয়ে নেওয়ার। গ্রামের ৯২ বছর বয়সী প্রধান আলিভেরেতি তাইতো বলেন, “এটা কঠিন হবে, কিন্তু আমি গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।” এখন প্রশ্ন—তারা কি সরকারের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করবে, নাকি নিজেরাই উদ্যোগ নেবে?

ফিজির অভিজ্ঞতা: জলবায়ুজনিত স্থানান্তর

গত এক দশকে ফিজি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্থানান্তরের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে ভুনিডোগোলুয়া গ্রামকে দ্বীপের উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল—এটি ছিল বিশ্বের প্রথমদিককার আনুষ্ঠানিক জলবায়ু স্থানান্তরের ঘটনা। বর্তমানে ৪০টির বেশি গ্রাম, যার মধ্যে মুয়ানিও আছে, স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সব গ্রামকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিদেশি সহায়তা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন

ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহায়তা দাবি করে আসছে। ২০২৩ সালে “ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল” চালু হয়, যেখানে বাইডেন সরকার ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার দেয়। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) বিলুপ্ত, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া, ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বাতিল এবং তহবিল থেকে সরে দাঁড়ায়। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

চীনের সুযোগ বৃদ্ধি

সহায়তার শূন্যতা কাজে লাগাতে চীন এগিয়ে এসেছে। তারা ১১টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে জলবায়ু সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ১০০টি “ছোট কিন্তু সুন্দর” জলবায়ু প্রকল্পের ঘোষণা করেছে, যদিও গ্রাম স্থানান্তর এতে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

নিজেদের উদ্যোগে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা

সরকারি সহায়তার ধীরগতিতে অনেক গ্রাম নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছে। মুয়ানি তাদের জমি থেকে পাইন গাছ কাটার অনুমতি দিয়ে অর্থ জোগাড় করছে—যা মৎস্য আহরণ কঠিন করলেও স্থানান্তরের তহবিল বাড়াচ্ছে।

পূর্বের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

ভুনিডোগোলুয়া স্থানান্তরের পর দেখা গেছে—গ্রামবাসীকে মাছ ধরা ছেড়ে কৃষি ও গবাদিপশু পালনে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। পাঁচ বছরে সরকার বাড়ি বানালেও রান্নাঘর ছিল না, যা বাসিন্দাদের নিজ উদ্যোগে তৈরি করতে হয়েছে। তবে ঝড়ের সময় ভেলায় যাতায়াতের প্রয়োজন নেই, হাসপাতালে পৌঁছানো সহজ হয়েছে, এবং ঢেউয়ের ভয় কেটে গেছে।

কিছু ব্যর্থ প্রকল্প, যেমন ভুনিসাভিসাভিতে পাহাড়ের ঢালে বাড়ি নির্মাণ করে ভূমিধসের ঝুঁকি সৃষ্টি, ফিজি সরকারকে ২০১৯ সালে নতুন নীতি নিতে বাধ্য করেছে। এতে ক্ষতিকর পণ্য ও সেবার ওপর কর তুলে তহবিল গঠন এবং স্থানান্তর কার্যক্রমের জন্য মানসম্মত পদ্ধতি চালু করা হয়। কিন্তু এই তহবিল এখনো মাত্র ৩.৫ মিলিয়ন ডলার—একটি গ্রাম সরানোর জন্যই যা যথেষ্ট।

দুই গ্রামের অগ্রগতি ও সংকট

নাবাভাতু গ্রামে চার বছর আগে ভূমিধসের পর মানুষ তাঁবুতে ছিল। সম্প্রতি ৩৭টি বাড়ি নির্মাণের জন্য ২.৬ মিলিয়ন ডলারের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে কোগেয়া গ্রামে বেসরকারি সহায়তায় ৩০টি নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে আশাবাদ ফিরেছে।

মুয়ানির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

মুয়ানিতে শিশুদের স্কুলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শেখানো হচ্ছে। গ্রামের একটি গোষ্ঠী উঁচু জমি দিয়েছে, সরকারকে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে সরকার অনুমোদন দেবে কি না তা অনিশ্চিত। ফলে হয়তো গ্রামবাসীকেই নিজেদের তহবিল থেকে স্থানান্তর সম্পন্ন করতে হবে।

ভূগোলবিদ প্যাট্রিক নান মনে করেন, বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশগুলোকে নিজেদেরই স্থানান্তরের পথ খুঁজতে হবে। একভাবে হোক বা অন্যভাবে, মুয়ানিকে সরতেই হবে। তবে সবাই যাবে না—কিছু প্রবীণ এখানেই থেকে যাবেন, এমনকি ঢেউ সী-ওয়াল পেরিয়ে গেলেও।

জনপ্রিয় সংবাদ

নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে ফিজির উপকূলীয় গ্রামগুলো পাহাড়ে দিকে সরে যাচ্ছে

০১:৩০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

সমুদ্রের চাপ ও ব্যর্থ প্রতিরোধ

ফিজির উপকূলীয় গ্রাম ভুনিসাভিসাভি বহু বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করেছে। প্রথমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সী-ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এরপরও পানি ঢুকতে থাকায় নালা কেটে, পাথর ও বালি এনে ভরাট করা হয়। কিন্তু এখন ঢেউ সী-ওয়াল পেরিয়ে যায়, নালা ভরে ফেলে, পাথর ও বালি সরিয়ে নেয়।

এ অবস্থায় মুয়ানি গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামটি ধাপে ধাপে কাঠের বাড়িগুলো পাহাড়ের ওপর সরিয়ে নেওয়ার। গ্রামের ৯২ বছর বয়সী প্রধান আলিভেরেতি তাইতো বলেন, “এটা কঠিন হবে, কিন্তু আমি গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।” এখন প্রশ্ন—তারা কি সরকারের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করবে, নাকি নিজেরাই উদ্যোগ নেবে?

ফিজির অভিজ্ঞতা: জলবায়ুজনিত স্থানান্তর

গত এক দশকে ফিজি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্থানান্তরের একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালে ভুনিডোগোলুয়া গ্রামকে দ্বীপের উঁচু জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল—এটি ছিল বিশ্বের প্রথমদিককার আনুষ্ঠানিক জলবায়ু স্থানান্তরের ঘটনা। বর্তমানে ৪০টির বেশি গ্রাম, যার মধ্যে মুয়ানিও আছে, স্থানান্তরের ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু অর্থের অভাবে সব গ্রামকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিদেশি সহায়তা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন

ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহায়তা দাবি করে আসছে। ২০২৩ সালে “ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল” চালু হয়, যেখানে বাইডেন সরকার ১৭.৫ মিলিয়ন ডলার দেয়। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) বিলুপ্ত, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া, ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বাতিল এবং তহবিল থেকে সরে দাঁড়ায়। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলো অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

চীনের সুযোগ বৃদ্ধি

সহায়তার শূন্যতা কাজে লাগাতে চীন এগিয়ে এসেছে। তারা ১১টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে জলবায়ু সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ১০০টি “ছোট কিন্তু সুন্দর” জলবায়ু প্রকল্পের ঘোষণা করেছে, যদিও গ্রাম স্থানান্তর এতে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

নিজেদের উদ্যোগে স্থানান্তরের প্রচেষ্টা

সরকারি সহায়তার ধীরগতিতে অনেক গ্রাম নিজেরাই উদ্যোগ নিচ্ছে। মুয়ানি তাদের জমি থেকে পাইন গাছ কাটার অনুমতি দিয়ে অর্থ জোগাড় করছে—যা মৎস্য আহরণ কঠিন করলেও স্থানান্তরের তহবিল বাড়াচ্ছে।

পূর্বের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা

ভুনিডোগোলুয়া স্থানান্তরের পর দেখা গেছে—গ্রামবাসীকে মাছ ধরা ছেড়ে কৃষি ও গবাদিপশু পালনে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। পাঁচ বছরে সরকার বাড়ি বানালেও রান্নাঘর ছিল না, যা বাসিন্দাদের নিজ উদ্যোগে তৈরি করতে হয়েছে। তবে ঝড়ের সময় ভেলায় যাতায়াতের প্রয়োজন নেই, হাসপাতালে পৌঁছানো সহজ হয়েছে, এবং ঢেউয়ের ভয় কেটে গেছে।

কিছু ব্যর্থ প্রকল্প, যেমন ভুনিসাভিসাভিতে পাহাড়ের ঢালে বাড়ি নির্মাণ করে ভূমিধসের ঝুঁকি সৃষ্টি, ফিজি সরকারকে ২০১৯ সালে নতুন নীতি নিতে বাধ্য করেছে। এতে ক্ষতিকর পণ্য ও সেবার ওপর কর তুলে তহবিল গঠন এবং স্থানান্তর কার্যক্রমের জন্য মানসম্মত পদ্ধতি চালু করা হয়। কিন্তু এই তহবিল এখনো মাত্র ৩.৫ মিলিয়ন ডলার—একটি গ্রাম সরানোর জন্যই যা যথেষ্ট।

দুই গ্রামের অগ্রগতি ও সংকট

নাবাভাতু গ্রামে চার বছর আগে ভূমিধসের পর মানুষ তাঁবুতে ছিল। সম্প্রতি ৩৭টি বাড়ি নির্মাণের জন্য ২.৬ মিলিয়ন ডলারের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে কোগেয়া গ্রামে বেসরকারি সহায়তায় ৩০টি নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে আশাবাদ ফিরেছে।

মুয়ানির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

মুয়ানিতে শিশুদের স্কুলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শেখানো হচ্ছে। গ্রামের একটি গোষ্ঠী উঁচু জমি দিয়েছে, সরকারকে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগে সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে সরকার অনুমোদন দেবে কি না তা অনিশ্চিত। ফলে হয়তো গ্রামবাসীকেই নিজেদের তহবিল থেকে স্থানান্তর সম্পন্ন করতে হবে।

ভূগোলবিদ প্যাট্রিক নান মনে করেন, বিদেশি সহায়তা কমে যাওয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশগুলোকে নিজেদেরই স্থানান্তরের পথ খুঁজতে হবে। একভাবে হোক বা অন্যভাবে, মুয়ানিকে সরতেই হবে। তবে সবাই যাবে না—কিছু প্রবীণ এখানেই থেকে যাবেন, এমনকি ঢেউ সী-ওয়াল পেরিয়ে গেলেও।