০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী গ্লোবাল কনটেন্টে ঝুঁকছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তীব্র তাপে বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে চাপ বিআরটিএতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলা ও পাসপোর্ট দপ্তরও শীর্ষে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে বোমা নিক্ষেপ, নিহত এক পথচারী অসম ভিআইপি সুবিধা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন: নির্বাচন কমিশনকে জানাল জামায়াত বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটিতে টানা তিন দিন বন্ধ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার বৃহস্পতিবার দেশে পালিত হবে বড়দিন, উৎসব ঘিরে শুভেচ্ছা ও বাড়তি নিরাপত্তা উপেক্ষিত রুমিন ফারহানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ তরুণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানে বিশ্বব্যাংকের নতুন অর্থায়ন, বাংলাদেশে অনুমোদন ১৫০ কোটি ডলার

সরকারি ইন্টার্নশিপে নতুন যোগ্যতার নিয়মে শিক্ষার্থীদের ভিন্নমত

কর্মজীবী শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ

ব্রিটিশ সরকার তাদের জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সিভিল সার্ভিস ইন্টার্নশিপ কর্মসূচিতে বড় ধরনের সংস্কার এনেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই ইন্টার্নশিপে আবেদন করতে পারবে কেবলমাত্র নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমির শিক্ষার্থীরা। সরকারের দাবি, এর ফলে সিভিল সার্ভিস সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈচিত্র্য ও বাস্তব অভিজ্ঞতা যুক্ত হবে।

আগামী বছর এই সংশোধিত কর্মসূচিতে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। এর আগে ২০২৪ সালে প্রায় ৪৫০ জন ইন্টার্নের মধ্যে ১২৫ জন ছিলেন নিম্ন আয়ের পরিবারের, যেখানে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪,২০০। ইন্টার্নরা মন্ত্রীদের জন্য ব্রিফিং তৈরি, নীতি-সংক্রান্ত গবেষণা, ইভেন্ট পরিকল্পনা এবং জ্যেষ্ঠ সিভিল সার্ভেন্টদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

অ্যাডামের নতুন করে আবেদন করার আগ্রহ

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা ও অপরাধবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অ্যাডাম অ্যালেন আগে এই কর্মসূচিকে ‘অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক’ মনে করে আবেদন করতে চাননি। পরিবারের আর্থিক অস্থিরতা ও শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি তিনটি এ-লেভেলে সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন করেছেন। তিনি মনে করেন, নতুন নিয়ম তাকে সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ দিচ্ছে—এখন মনে হচ্ছে আমাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, কেবল আনুষ্ঠানিক আবেদনকারী হিসেবে নয়।

নেলের হতাশা: ‘আমরা কি যথেষ্ট কর্মজীবী শ্রেণি নই?’

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নেল অ্যাশওয়ার্থ ছোটবেলা থেকে সরকারি সেবার প্রতি আগ্রহী। তিনি জানেন, এই গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশিপ সফলভাবে শেষ করলে সিভিল সার্ভিসের ‘ফাস্ট স্ট্রিম’ প্রোগ্রামে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায়। তবে নতুন নিয়মে আবেদনকারীর যোগ্যতা নির্ধারণ হয় তাদের ১৪ বছর বয়সে বাবা-মায়ের পেশার ভিত্তিতে। নেলের মা ছিলেন নার্স এবং বাবা টাউন প্ল্যানার—যা কর্মজীবী শ্রেণির তালিকার বাইরে। ফলে তিনি আবেদন করতে পারবেন না।

তিনি মনে করেন, এই নীতি মাঝামাঝি অবস্থার শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করছে—যারা ধনীও নয়, আবার সরকারি সংজ্ঞায় ‘কর্মজীবী শ্রেণি’ও নয়। এতে তারা সরকারি চাকরির প্রতি অনুপ্রেরণা হারাতে পারে।

হান্নার সমর্থন: সুযোগের দরজা খুলবে

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হান্না বেগম মনে করেন, নতুন নিয়ম লন্ডনের বাইরে বা নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেবে। তার বাবা ছিলেন স্বনিয়োজিত মিস্ত্রি এবং মা খণ্ডকালীন কমিউনিটি কর্মী। তিনি বলেন, “সরকারে এমন মানুষ থাকা দরকার যারা দেশের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত করবে। এজন্য প্রবেশের ধাপ তৈরি করতে হবে।”

হান্না মনে করেন, এই সংস্কার মানে কম মেধাবী শিক্ষার্থী সুযোগ পাবে—এমন নয়, বরং সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পিটারের ক্ষোভ: ‘আমার দেশ আমাকে চায় না’

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী পিটার মারফি সিভিল সার্ভিসে যোগদানকে দেশসেবার সুযোগ হিসেবে দেখেন। আইরিশ অভিবাসী পরিবারের সন্তান পিটার মনে করেন, এই পরিবর্তন তাকে হঠাৎ বাইরে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার কাছে এটি সামাজিকভাবে ধ্বংসাত্মক মনে হয়—যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচার না করে নির্দিষ্ট শ্রেণিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”

বিতর্ক ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

সরকার বলছে, নতুন নিয়ম কেবল সেই শিক্ষার্থীদের জন্য যাদের বাবা-মায়ের পেশা ‘কর্মজীবী শ্রেণি’ হিসেবে সামাজিক গতিশীলতা কমিশনের তালিকায় রয়েছে—যেমন মেকানিক, দোকানকর্মী, শ্রমিক, ওয়েটার ইত্যাদি। নার্স, শিক্ষক বা অফিস সহকারী এর বাইরে পড়ে।

সমর্থকরা বলছেন, এর ফলে সিভিল সার্ভিসে বৈচিত্র্য আসবে। সমালোচকরা মনে করছেন, এটি মাঝারি আয়ের পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে। এই পরিবর্তন বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা আগামী বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখলেই বোঝা যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নগরজীবনে মানিয়ে নিচ্ছে বন্যপ্রাণী

সরকারি ইন্টার্নশিপে নতুন যোগ্যতার নিয়মে শিক্ষার্থীদের ভিন্নমত

১২:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

কর্মজীবী শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্যোগ

ব্রিটিশ সরকার তাদের জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সিভিল সার্ভিস ইন্টার্নশিপ কর্মসূচিতে বড় ধরনের সংস্কার এনেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই ইন্টার্নশিপে আবেদন করতে পারবে কেবলমাত্র নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমির শিক্ষার্থীরা। সরকারের দাবি, এর ফলে সিভিল সার্ভিস সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈচিত্র্য ও বাস্তব অভিজ্ঞতা যুক্ত হবে।

আগামী বছর এই সংশোধিত কর্মসূচিতে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী নেওয়া হবে। এর আগে ২০২৪ সালে প্রায় ৪৫০ জন ইন্টার্নের মধ্যে ১২৫ জন ছিলেন নিম্ন আয়ের পরিবারের, যেখানে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪,২০০। ইন্টার্নরা মন্ত্রীদের জন্য ব্রিফিং তৈরি, নীতি-সংক্রান্ত গবেষণা, ইভেন্ট পরিকল্পনা এবং জ্যেষ্ঠ সিভিল সার্ভেন্টদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

অ্যাডামের নতুন করে আবেদন করার আগ্রহ

ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা ও অপরাধবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী অ্যাডাম অ্যালেন আগে এই কর্মসূচিকে ‘অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক’ মনে করে আবেদন করতে চাননি। পরিবারের আর্থিক অস্থিরতা ও শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও তিনি তিনটি এ-লেভেলে সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন করেছেন। তিনি মনে করেন, নতুন নিয়ম তাকে সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ দিচ্ছে—এখন মনে হচ্ছে আমাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, কেবল আনুষ্ঠানিক আবেদনকারী হিসেবে নয়।

নেলের হতাশা: ‘আমরা কি যথেষ্ট কর্মজীবী শ্রেণি নই?’

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নেল অ্যাশওয়ার্থ ছোটবেলা থেকে সরকারি সেবার প্রতি আগ্রহী। তিনি জানেন, এই গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্নশিপ সফলভাবে শেষ করলে সিভিল সার্ভিসের ‘ফাস্ট স্ট্রিম’ প্রোগ্রামে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যায়। তবে নতুন নিয়মে আবেদনকারীর যোগ্যতা নির্ধারণ হয় তাদের ১৪ বছর বয়সে বাবা-মায়ের পেশার ভিত্তিতে। নেলের মা ছিলেন নার্স এবং বাবা টাউন প্ল্যানার—যা কর্মজীবী শ্রেণির তালিকার বাইরে। ফলে তিনি আবেদন করতে পারবেন না।

তিনি মনে করেন, এই নীতি মাঝামাঝি অবস্থার শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করছে—যারা ধনীও নয়, আবার সরকারি সংজ্ঞায় ‘কর্মজীবী শ্রেণি’ও নয়। এতে তারা সরকারি চাকরির প্রতি অনুপ্রেরণা হারাতে পারে।

হান্নার সমর্থন: সুযোগের দরজা খুলবে

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হান্না বেগম মনে করেন, নতুন নিয়ম লন্ডনের বাইরে বা নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেবে। তার বাবা ছিলেন স্বনিয়োজিত মিস্ত্রি এবং মা খণ্ডকালীন কমিউনিটি কর্মী। তিনি বলেন, “সরকারে এমন মানুষ থাকা দরকার যারা দেশের সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত করবে। এজন্য প্রবেশের ধাপ তৈরি করতে হবে।”

হান্না মনে করেন, এই সংস্কার মানে কম মেধাবী শিক্ষার্থী সুযোগ পাবে—এমন নয়, বরং সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পিটারের ক্ষোভ: ‘আমার দেশ আমাকে চায় না’

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী পিটার মারফি সিভিল সার্ভিসে যোগদানকে দেশসেবার সুযোগ হিসেবে দেখেন। আইরিশ অভিবাসী পরিবারের সন্তান পিটার মনে করেন, এই পরিবর্তন তাকে হঠাৎ বাইরে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমার কাছে এটি সামাজিকভাবে ধ্বংসাত্মক মনে হয়—যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচার না করে নির্দিষ্ট শ্রেণিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।”

বিতর্ক ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

সরকার বলছে, নতুন নিয়ম কেবল সেই শিক্ষার্থীদের জন্য যাদের বাবা-মায়ের পেশা ‘কর্মজীবী শ্রেণি’ হিসেবে সামাজিক গতিশীলতা কমিশনের তালিকায় রয়েছে—যেমন মেকানিক, দোকানকর্মী, শ্রমিক, ওয়েটার ইত্যাদি। নার্স, শিক্ষক বা অফিস সহকারী এর বাইরে পড়ে।

সমর্থকরা বলছেন, এর ফলে সিভিল সার্ভিসে বৈচিত্র্য আসবে। সমালোচকরা মনে করছেন, এটি মাঝারি আয়ের পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করবে। এই পরিবর্তন বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা আগামী বছরের নিয়োগ প্রক্রিয়া দেখলেই বোঝা যাবে।