প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বৃদ্ধি
সিঙ্গাপুর ২০২৫ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। বছরের প্রথমার্ধে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের ফলে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় (এমটিআই) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০ থেকে ২ শতাংশের পরিবর্তে ১.৫ থেকে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। প্রথম প্রান্তিকে ৪.১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি মিলিয়ে বছরের প্রথম ছয় মাসে গড় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪.৩ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধির মূল কারণ
দ্বিতীয় প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রথম প্রান্তিকের ০.৫ শতাংশ সংকোচন থেকে পুনরুদ্ধার। মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বিশ্বব্যাপী রপ্তানিমুখী পণ্যের ‘ফ্রন্ট-লোডিং’ বা আগাম রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এতে উৎপাদন ও রপ্তানি খাত উত্সাহিত হয়েছে—বিশেষ করে পাইকারি বাণিজ্য, উৎপাদন, অর্থ ও বীমা, এবং পরিবহন ও সংরক্ষণ খাত।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত “রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ” নীতিতে প্রাথমিকভাবে বড় শুল্কের আশঙ্কা থাকলেও পরে অনেক ক্ষেত্রে তা কম হারে নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া, ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি শুল্কের চাপ হ্রাস করেছে। মার্কিন-চীন আলোচনাও ৩ মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধে চ্যালেঞ্জ
এমটিআই সতর্ক করেছে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে। ফ্রন্ট-লোডিং প্রভাব কমে আসা, মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়া এবং প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের কারণে রপ্তানিমুখী খাতের গতি কমতে পারে। যদিও সিঙ্গাপুরের শুল্কহার তুলনামূলক কম (১০ শতাংশ), তবুও ফার্মাসিউটিক্যালস ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঝুঁকি রয়েছে।
ঝুঁকি ও সম্ভাবনা
নতুন শুল্ক ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, আর্থিক বাজারে অস্থিরতা আনতে পারে এবং জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকও রয়েছে—যেমন পরিবহন প্রকৌশল খাতে উচ্চমূল্য সংযোজনযুক্ত বিমান রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও পুনর্নির্মাণ কাজের প্রবৃদ্ধি এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সম্পর্কিত চিপ উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

বিশেষজ্ঞদের মত
কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এমটিআই এখনো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে এবং প্রকৃত প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি হতে পারে। ব্যাংক অব আমেরিকার আসিয়ান অর্থনীতিবিদ অ্যাং কাই ওয়েই মনে করেন, প্রবৃদ্ধি ২ থেকে ২.৫ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। তবে আরএইচবি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বার্নাবাস গান সতর্কতা বজায় রাখার পক্ষে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন ও ভারতের শুল্ক চুক্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত।
মুদ্রানীতি পরিস্থিতি
বছরের প্রথমার্ধের ভালো ফলাফলের পর সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (এমএএস) জুলাই বৈঠকে নীতি পরিবর্তন করেনি। এমএএসের প্রধান অর্থনীতিবিদ এডওয়ার্ড রবিনসন বলেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে ধীরে ধীরে নীতি সামঞ্জস্য করাই যৌক্তিক। পরবর্তী নীতি হালনাগাদ হবে অক্টোবর মাসে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















