১২:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড মার্থা ওয়াশিংটন থেকে মেলানিয়া ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডিদের পোশাকে ইতিহাস, রাজনীতি ও শক্তির প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলির ঘটনায় কী জানা যাচ্ছে; দলগুলো কেন ক্যাডার রাখে? ট্রাম্প যখন যুদ্ধ শেষের দম্ভ দেখাচ্ছেন, চীন তখন নীরবে শান্তির পথে কাজ করছে অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা

হাঁসের মাংস খাওয়ার কথা বলে সমালোচনার মুখে আসিফ মাহমুদ

  • Sarakhon Report
  • ০৪:০৬:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
  • 86

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া

সম্প্রতি একটি বক্তব্য ঘিরে আবারো সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস, আলোচনা, সমালোচনা কিংবা ট্রলের ঘটনা ঘটে চলেছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায়আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

সেই অভিযোগের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

যেখানে রাতের খাবার খেতে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় পূর্বাচলের তিনশ ফিট সংলগ্ন নীলা মার্কেটে অথবা গুলশান এলাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন মি. ভুঁইয়া।

তার এই বক্তব্য সামনে আসতেই নানা মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমও এ নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশ করে।

সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যে বেতন-ভাতা তিনি পান, তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে খাওয়া কিংবা শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে তার বিলাসী জীবন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সমালোচকদের অনেকে।

অতীতেও দামি জুতা কিংবা হযরাত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনায়ও সমালোচিত হয়েছিলেন উপদেষ্টা আসিফ।

নানা আলোচনা-সমালোচনার ব্যাপারে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে তিনি তার প্রতিক্রিয়া জানান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি। ফলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভণিতা না করে সত্য ঘটনাই বলেছি। এখানে অবৈধ বা অনৈতিক তো কিছু হয়নি যা নিয়ে সমালোচনা হবে!”

আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে নানা সমালোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে

উপদেষ্টার বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে চাঁদাবাজির ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন মি. ভূঁইয়া।

বক্তব্যে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ভোররাতে পূর্বাচলে হাঁসের মাংস খেতে যাওয়া অথবা ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার প্রসঙ্গটি আনেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “রাতে যখন কাজ শেষ হয় কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় আসলে খাওয়া দাওয়া দেয়ার মতো কেউ থাকেনা। আমি মাঝে-মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই যাই তিনশ ফিটের নীলা মার্কেটে। ওইখানে হাসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায় ওইখানে হয়তো যায় চার-পাঁচজন মিলে আবার মাঝেমধ্যে ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে, তখন ওইদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়।”

তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। সমালোচকদের অনেকে সামাজিক মাধ্যমে ট্রলও করেন আসিফ মাহমুদকে নিয়ে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে তার এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। সমালোচনা হওয়া তার অতীতের নানা ঘটনাও টেনে আনেন কেউ কেউ।

সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে তার বেতন-ভাতার সঙ্গে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয়টি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন তুলতেও দেখা গেছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ছবির সঙ্গে হাঁসের ছবি জুড়ে দিয়ে কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি নানা বক্তব্য প্রচার করে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দেন অনেকে। রাতে পূর্বাচলের ওই এলাকায় গিয়ে অনেককে হাঁসের মাংস খাওয়ার ছবিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন রাজনৈতিক নেতাদেরও কেউ কেউ। তার অতীত জীবনাচরণের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পরের পরিবর্তন নিয়েও সমালোচনা হয়।

এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ লিখেছেন, “এক সময় ভাত খুঁজতো ক্যান্টিনে, এখন হাঁস খুঁজে ওয়েস্টিনে।”

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন

আসিফ মাহমুদের প্রতিক্রিয়া

“অবৈধ বা অনৈতিক তো কিছু হয়নি যা নিয়ে সমালোচনা হবে” এমন মন্তব্য করে বিবিসি বাংলাকে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমাদের জেনারেশনের এমনিতেই রাত জাগার অভ্যাস আছে। কাজ করতে করতে অনেক সময়ই মধ্যরাত বা প্রায় ভোর হয়ে যায়। সেসময় ফ্যামিলির কেউ সজাগ থাকে না। ফলে বাইরে থেকে খাবার এনে কিংবা বাইরে গিয়ে খেতে হয়। তাছাড়াও সবারই কিছু পছন্দের খাবার থাকে, জায়গা থাকে।”

উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকবার খেতে গিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৫ই অগাস্টের পরেও আমি অন্তত ২০ বারের মতো ঢাবির শ্যাডোর লুচি খেতে গিয়েছি, জিয়া হলের দোকানের ৪০ টাকার নুডলস খেতে গিয়েছি। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই খাওয়া হতো। এখন এরকম সিলি বিষয়ও যে এতবড় আলোচনার বস্তু হয়ে উঠবে এটা ভাবিনি।”

“নীলা মার্কেটেই বেশি যাওয়া হতো, বন্ধ হয়ে গেলে উপায়ান্তর না পেয়ে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়েছে গুটিকয়েক বার। এছাড়াও সেখানে খাবারের যা দাম তাতে কালেভদ্রে ছাড়া যাওয়াও সম্ভব না।”

“সমালোচনাটা একপ্রকার শ্রেণিঘৃণা থেকে আছে”––এই মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “যেমন ব্রিটিশদের ক্লাবগুলোতে লেখা থাকতো ‘এখানে কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। এখনো এমন কলোনিয়াল মানসিকতার মানুষজন আমাদের সমাজে বিরাজ করেন যারা নিজেদের বলয় বা নির্দিষ্ট শাসকগোষ্ঠী ছাড়া বাকিদের অচ্ছুৎ জ্ঞান করেন। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের মানুষ জ্ঞান করেন না।”

“আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করি এবং সমাজের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষদেরই রিপ্রেজেন্ট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরও নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। যেহেতু এখানে অবৈধ বা অনৈতিক কিছু করিনি ফলে সমালোচনা নিয়ে বিপাকে পড়ার মতো কিছু নেই,” জানান তিনি।

উপদেষ্টাদের বেতন কত?

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে সরকারের উপদেষ্টারা কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পান বা তাদের বেতন ভাতা কত, আর তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টাদের বেতন- ভাতা কেমন, এর বাইরে তারা সুযোগ- সুবিধা কী পান?

সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী সমমর্যাদা হওয়ায় তাদের বেতন ভাতাও এর সমপরিমাণ, যা ২০১৬ সালের মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল অনুযায়ীই নির্ধারিত।

এই আইন অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা মন্ত্রীর সমপরিমাণ বেতনই পেয়ে থাকেন যার পরিমাণ মাসিক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান।

নিয়ম অনুযায়ী একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা।

এর পাশাপাশি মোবাইল ফোন কেনার জন্যও ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।

এছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচও বহন করে সরকার। মন্ত্রী পদমর্যাদা হওয়ায় বর্তমান উপদেষ্টারাও এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।

একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান।

এছাড়া আরও একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন পেয়ে থাকেন। এসব সুবিধাও দেওয়া হয় সরকারিভাবে।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও লাভে এগিয়ে টয়োটা, ট্রাম্পের শুল্কের মাঝেও বিক্রিতে রেকর্ড

হাঁসের মাংস খাওয়ার কথা বলে সমালোচনার মুখে আসিফ মাহমুদ

০৪:০৬:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

সম্প্রতি একটি বক্তব্য ঘিরে আবারো সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস, আলোচনা, সমালোচনা কিংবা ট্রলের ঘটনা ঘটে চলেছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জানে আলম অপু সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায়আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

সেই অভিযোগের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

যেখানে রাতের খাবার খেতে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় পূর্বাচলের তিনশ ফিট সংলগ্ন নীলা মার্কেটে অথবা গুলশান এলাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন মি. ভুঁইয়া।

তার এই বক্তব্য সামনে আসতেই নানা মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমও এ নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশ করে।

সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যে বেতন-ভাতা তিনি পান, তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে খাওয়া কিংবা শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে তার বিলাসী জীবন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সমালোচকদের অনেকে।

অতীতেও দামি জুতা কিংবা হযরাত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনায়ও সমালোচিত হয়েছিলেন উপদেষ্টা আসিফ।

নানা আলোচনা-সমালোচনার ব্যাপারে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে তিনি তার প্রতিক্রিয়া জানান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, “আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি। ফলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভণিতা না করে সত্য ঘটনাই বলেছি। এখানে অবৈধ বা অনৈতিক তো কিছু হয়নি যা নিয়ে সমালোচনা হবে!”

আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে নানা সমালোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে

উপদেষ্টার বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা

বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে চাঁদাবাজির ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন মি. ভূঁইয়া।

বক্তব্যে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ভোররাতে পূর্বাচলে হাঁসের মাংস খেতে যাওয়া অথবা ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার প্রসঙ্গটি আনেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “রাতে যখন কাজ শেষ হয় কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় আসলে খাওয়া দাওয়া দেয়ার মতো কেউ থাকেনা। আমি মাঝে-মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই যাই তিনশ ফিটের নীলা মার্কেটে। ওইখানে হাসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায় ওইখানে হয়তো যায় চার-পাঁচজন মিলে আবার মাঝেমধ্যে ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে, তখন ওইদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়।”

তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। সমালোচকদের অনেকে সামাজিক মাধ্যমে ট্রলও করেন আসিফ মাহমুদকে নিয়ে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে তার এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। সমালোচনা হওয়া তার অতীতের নানা ঘটনাও টেনে আনেন কেউ কেউ।

সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে তার বেতন-ভাতার সঙ্গে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয়টি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন তুলতেও দেখা গেছে।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ছবির সঙ্গে হাঁসের ছবি জুড়ে দিয়ে কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি নানা বক্তব্য প্রচার করে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দেন অনেকে। রাতে পূর্বাচলের ওই এলাকায় গিয়ে অনেককে হাঁসের মাংস খাওয়ার ছবিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন রাজনৈতিক নেতাদেরও কেউ কেউ। তার অতীত জীবনাচরণের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পরের পরিবর্তন নিয়েও সমালোচনা হয়।

এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ লিখেছেন, “এক সময় ভাত খুঁজতো ক্যান্টিনে, এখন হাঁস খুঁজে ওয়েস্টিনে।”

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন

আসিফ মাহমুদের প্রতিক্রিয়া

“অবৈধ বা অনৈতিক তো কিছু হয়নি যা নিয়ে সমালোচনা হবে” এমন মন্তব্য করে বিবিসি বাংলাকে আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমাদের জেনারেশনের এমনিতেই রাত জাগার অভ্যাস আছে। কাজ করতে করতে অনেক সময়ই মধ্যরাত বা প্রায় ভোর হয়ে যায়। সেসময় ফ্যামিলির কেউ সজাগ থাকে না। ফলে বাইরে থেকে খাবার এনে কিংবা বাইরে গিয়ে খেতে হয়। তাছাড়াও সবারই কিছু পছন্দের খাবার থাকে, জায়গা থাকে।”

উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকবার খেতে গিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৫ই অগাস্টের পরেও আমি অন্তত ২০ বারের মতো ঢাবির শ্যাডোর লুচি খেতে গিয়েছি, জিয়া হলের দোকানের ৪০ টাকার নুডলস খেতে গিয়েছি। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই খাওয়া হতো। এখন এরকম সিলি বিষয়ও যে এতবড় আলোচনার বস্তু হয়ে উঠবে এটা ভাবিনি।”

“নীলা মার্কেটেই বেশি যাওয়া হতো, বন্ধ হয়ে গেলে উপায়ান্তর না পেয়ে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়েছে গুটিকয়েক বার। এছাড়াও সেখানে খাবারের যা দাম তাতে কালেভদ্রে ছাড়া যাওয়াও সম্ভব না।”

“সমালোচনাটা একপ্রকার শ্রেণিঘৃণা থেকে আছে”––এই মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, “যেমন ব্রিটিশদের ক্লাবগুলোতে লেখা থাকতো ‘এখানে কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। এখনো এমন কলোনিয়াল মানসিকতার মানুষজন আমাদের সমাজে বিরাজ করেন যারা নিজেদের বলয় বা নির্দিষ্ট শাসকগোষ্ঠী ছাড়া বাকিদের অচ্ছুৎ জ্ঞান করেন। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের মানুষ জ্ঞান করেন না।”

“আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করি এবং সমাজের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষদেরই রিপ্রেজেন্ট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেরও নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। যেহেতু এখানে অবৈধ বা অনৈতিক কিছু করিনি ফলে সমালোচনা নিয়ে বিপাকে পড়ার মতো কিছু নেই,” জানান তিনি।

উপদেষ্টাদের বেতন কত?

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে সরকারের উপদেষ্টারা কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পান বা তাদের বেতন ভাতা কত, আর তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টাদের বেতন- ভাতা কেমন, এর বাইরে তারা সুযোগ- সুবিধা কী পান?

সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী সমমর্যাদা হওয়ায় তাদের বেতন ভাতাও এর সমপরিমাণ, যা ২০১৬ সালের মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল অনুযায়ীই নির্ধারিত।

এই আইন অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা মন্ত্রীর সমপরিমাণ বেতনই পেয়ে থাকেন যার পরিমাণ মাসিক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান।

নিয়ম অনুযায়ী একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান দুই হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা।

এর পাশাপাশি মোবাইল ফোন কেনার জন্যও ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।

এছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচও বহন করে সরকার। মন্ত্রী পদমর্যাদা হওয়ায় বর্তমান উপদেষ্টারাও এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।

একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান।

এছাড়া আরও একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন পেয়ে থাকেন। এসব সুবিধাও দেওয়া হয় সরকারিভাবে।

বিবিসি নিউজ বাংলা