গত এক বছরে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মব ভায়োলেন্স বা গণ-আক্রমণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের একজন পরামর্শক সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, এখনও গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সহিংসতা অব্যাহত আছে। এই পরিস্থিতি শুধু সামাজিক নিরাপত্তার জন্য নয়, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন মব ভায়োলেন্স বাড়ছে
বাংলাদেশে মব ভায়োলেন্সের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে।
আইনের শাসনের দুর্বলতা
অনেক ক্ষেত্রে মানুষ বিশ্বাস করেন, থানায় অভিযোগ করলে দ্রুত বিচার হবে না বা অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাবে। ফলে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ বা বিচার করার জন্য জনতা নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে।

সামাজিক আস্থা ও নিরাপত্তাহীনতা
স্থানীয় বিরোধ, চুরি-ডাকাতি, জমি-সম্পত্তির দ্বন্দ্ব কিংবা নারী নির্যাতনের মতো ঘটনায় গ্রামবাসী দ্রুত উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। আস্থা হারানো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ জনসমষ্টির ওপর নির্ভর করছে।
গুজব ও ভুল তথ্য
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া গুজব অনেক সময় ভিড়কে সহিংস করে তুলছে। যেমন, শিশু চোর কিংবা ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়লেই মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে।
রাজনৈতিক প্রভাব

অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার জন্য গ্রামে উস্কানি দেওয়া হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে এ ধরনের সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রভাব গ্রামীণ সমাজে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ, স্থানীয় বাজারে দলীয় আধিপত্যের লড়াই, এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব মব ভায়োলেন্সে রূপ নিচ্ছে। গত এক বছরে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অন্তত কয়েক ডজন মানুষ এ ধরনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সমাজে মব ভায়োলেন্স একটি ভয়াবহ সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি কেবল ব্যক্তির জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, বরং গ্রামীণ সমাজে আইন, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করছে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দ্রুত বিচার, সামাজিক সচেতনতা এবং প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















