০৩:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
জেমস ক্যামেরনকে নিয়ে বিলি আইলিশের নতুন বাজি, আসছে ৩ডি কনসার্ট ফিল্ম দুই দশক পর আবার ভারত বাজারে ব্রিটিশ কসমেটিক ব্র্যান্ড লাশ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনার আশা, তেলের দামে নতুন পতন ব্ল্যাক ফ্রাইডে ২০২৫: টেক দুনিয়ার ডিসকাউন্ট দৌড়ে ক্রেতার বাস্তব পরীক্ষা পেশাওয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদরদপ্তরে আত্মঘাতী হামলা, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা অন্তত ৩ চীনের ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ গবেষণায় প্রথম উচ্চ-নির্ভুল ফলাফল রিমোর্সের রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তনে মেইদান রেসকোর্সে আলোড়ন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিকর সাইবার হামলার শিকার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২১ নিহত বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর চিফ অব স্টাফ নিহত

ফিলিপাইনের চাপ—চাঁদের দূর পার্শ্বে চাং’ই-৬ মিশনের পথ বদলালো চীন

সারসংক্ষেপ
চীনের মহাকাশ প্রকৌশলীরা ২০২৪ সালে চাঁদের দূর পার্শ্ব থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা আনার ঐতিহাসিক চাং’ই-৬ মিশনের কয়েকটি ধাপ সচেতনভাবে পরিবর্তন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এড়ানো এবং ফিলিপাইনের জলসীমা নিয়ে বিতর্কে নতুন উত্তেজনা না তৈরি করা। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা প্রবন্ধে এই পরিবর্তনগুলোর কারিগরি কারণ ও প্রভাব বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কেন পথ বদলানো হলো
চাং’ই-৬ মহাকাশযান ২০২৪ সালের মে মাসে হাইনান দ্বীপের ওয়েনচাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে লং মার্চ-৫ রকেটে উড়ে যায় এবং জুনে পৃথিবীতে ফিরে আসে। প্রবন্ধে জানানো হয়েছে, রকেটটি উৎক্ষেপণের পর পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে “কয়েক ডজন সেকেন্ড” দেরিতে নোজ কন (ফেয়ারিং) ছেড়েছিল। এতে রকেটের বিচ্ছিন্ন ধ্বংসাবশেষের পতনের এলাকা সামান্য সরে গিয়ে আরও দূরে, ফিলিপাইন সাগরের গভীরে পড়ে—যে জলসীমাকে ম্যানিলা নিজস্ব অধিক্ষেত্র হিসেবে দেখে, সেই “সংবেদনশীল” এলাকাগুলো এড়িয়ে।

গবেষণা দলে উপ-মুখ্য নকশাবিদ ওয়াং চিয়ং লেখেন, দেশের নতুন বিধি এবং বিদেশি ভূখণ্ডের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত পরিবর্তিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উৎক্ষেপণের সূক্ষ্ম সময়সূচি “ফাইন-টিউন” করা হয়েছিল। ফিলিপাইনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও লেখকেরা বলেন, এই দেরি ধ্বংসাবশেষকে “সংবেদনশীল সামুদ্রিক অঞ্চল” থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

ফিলিপাইনের অভিযোগের পটভূমি
বিগত কয়েক বছর ধরে ফিলিপাইন অভিযোগ করে আসছিল যে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ তাদের দ্বীপপুঞ্জের কাছে পড়ছে।
• ২০২২ সালে লং মার্চ-৫বি রকেটের টুকরো পালাওয়ান ও মিনদোরো উপকূলে ভেসে আসে—যা টিয়ানগং মহাকাশকেন্দ্রের মডিউল তুলতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এতে দেশটির মহাকাশ সংস্থা জাহাজ ও উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকির কথা সতর্ক করেছিল।
• চলতি আগস্টেও চীনের গুওওয়াং ইন্টারনেট স্যাটেলাইট বহনকারী লং মার্চ-১২ রকেটের ধ্বংসাবশেষ একই অঞ্চলের নিকটে পড়ে। যদিও কেউ আহত হয়নি, ম্যানিলা আবারও এ ঘটনাকে নিন্দা জানায় এবং মানুষের জীবন, জাহাজ ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা তোলে।

ব্যাকআপ থেকে ‘দূর পার্শ্ব’—নকশায় বড় রূপান্তর
চাং’ই-৬ মূলত চাং’ই-৫-এর ব্যাকআপ যান ছিল। ২০২০ সালের মিশন সফল হওয়ার পর ব্যাকআপ যানে ব্যাপক রূপান্তর এনে তাকে আরও জটিল লক্ষ্য—চাঁদের দূর পার্শ্বে অবতরণ ও নমুনা সংগ্রহ—এর উপযোগী করা হয়।
• প্রতিক্রম কক্ষপথ: অবতরণস্থলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে মহাকাশযানকে চাঁদের ঘূর্ণনের বিপরীতে প্রতিক্রম কক্ষপথে যেতে হয়। এতে যাত্রাপথ দীর্ঘ হয়ে ২৩ দিনের বদলে প্রায় ৫৩ দিন লাগে।
• একাধিক লঞ্চ উইন্ডো: এত দীর্ঘ যাত্রায় ক্ষুদ্রতম সময়গত ভুলও বড় বিচ্যুতি ডেকে আনতে পারে। তাই নির্দিষ্ট একটিমাত্র পথের ওপর নির্ভর না করে একাধিক উৎক্ষেপণ জানালা ও ট্রাজেক্টরি প্রস্তুত রাখা হয়, যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পথ সামান্য বদলানো যায়।
• ত্রুটির সামান্য সহনশীলতা: দূর পার্শ্বে যাওয়ার রুটে ভুলের সুযোগ অত্যন্ত কম। উৎক্ষেপণের শুরুতেই সামান্য ‘স্লিপ’ হলেও নির্দিষ্ট অবতরণস্থলে পৌঁছানো ব্যাহত হতে পারতো—তাই পথ-সময় মিলিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়।

পৃথিবীতে ফেরা—আরও এক সূক্ষ্ম সমন্বয়
ফেরার পথে আগের নির্ধারিত রি-এন্ট্রি ট্রাজেক্টরি বিশ্লেষণে দেখা যায়, তা পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশের আকাশসীমার গা ঘেঁষে যাবে। কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা এড়াতে রি-এন্ট্রি অ্যাঙ্গেল মাত্র ০.২ ডিগ্রি বদলে দেওয়া হয়—খুব ক্ষুদ্র এই পরিবর্তনই যানটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনে এবং সীমিত আকাশসীমা এড়াতে সহায়তা করে।

বৈজ্ঞানিক অর্জন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
চাং’ই-৬ মিশন চাঁদের দূর পার্শ্ব থেকে প্রায় ২ কেজি (৪ পাউন্ড ৬.৫ আউন্স) নমুনা সংগ্রহ করে এনেছে। এগুলো এখন চীনা বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করছেন। বেইজিং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও কিছু নমুনা ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যা ভবিষ্যতের চাঁদ-সংক্রান্ত গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।


দক্ষিণ চীন সাগরের কূটনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক আকাশ–সামুদ্রিক বিধি বিবেচনায় রেখে চাং’ই-৬ মিশনের সূক্ষ্ম কিন্তু অর্থবহ পথসংশোধন দেখায়—আধুনিক মহাকাশ অভিযানে শুধু প্রযুক্তি নয়, ভূ-রাজনীতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই সমন্বয়গুলোর কারণেই চীন ঐতিহাসিক নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন করেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়াতে পেরেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জেমস ক্যামেরনকে নিয়ে বিলি আইলিশের নতুন বাজি, আসছে ৩ডি কনসার্ট ফিল্ম

ফিলিপাইনের চাপ—চাঁদের দূর পার্শ্বে চাং’ই-৬ মিশনের পথ বদলালো চীন

১১:১৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

সারসংক্ষেপ
চীনের মহাকাশ প্রকৌশলীরা ২০২৪ সালে চাঁদের দূর পার্শ্ব থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা আনার ঐতিহাসিক চাং’ই-৬ মিশনের কয়েকটি ধাপ সচেতনভাবে পরিবর্তন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এড়ানো এবং ফিলিপাইনের জলসীমা নিয়ে বিতর্কে নতুন উত্তেজনা না তৈরি করা। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা প্রবন্ধে এই পরিবর্তনগুলোর কারিগরি কারণ ও প্রভাব বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

কেন পথ বদলানো হলো
চাং’ই-৬ মহাকাশযান ২০২৪ সালের মে মাসে হাইনান দ্বীপের ওয়েনচাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে লং মার্চ-৫ রকেটে উড়ে যায় এবং জুনে পৃথিবীতে ফিরে আসে। প্রবন্ধে জানানো হয়েছে, রকেটটি উৎক্ষেপণের পর পরিকল্পিত সময়ের চেয়ে “কয়েক ডজন সেকেন্ড” দেরিতে নোজ কন (ফেয়ারিং) ছেড়েছিল। এতে রকেটের বিচ্ছিন্ন ধ্বংসাবশেষের পতনের এলাকা সামান্য সরে গিয়ে আরও দূরে, ফিলিপাইন সাগরের গভীরে পড়ে—যে জলসীমাকে ম্যানিলা নিজস্ব অধিক্ষেত্র হিসেবে দেখে, সেই “সংবেদনশীল” এলাকাগুলো এড়িয়ে।

গবেষণা দলে উপ-মুখ্য নকশাবিদ ওয়াং চিয়ং লেখেন, দেশের নতুন বিধি এবং বিদেশি ভূখণ্ডের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত পরিবর্তিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উৎক্ষেপণের সূক্ষ্ম সময়সূচি “ফাইন-টিউন” করা হয়েছিল। ফিলিপাইনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও লেখকেরা বলেন, এই দেরি ধ্বংসাবশেষকে “সংবেদনশীল সামুদ্রিক অঞ্চল” থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

ফিলিপাইনের অভিযোগের পটভূমি
বিগত কয়েক বছর ধরে ফিলিপাইন অভিযোগ করে আসছিল যে চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ তাদের দ্বীপপুঞ্জের কাছে পড়ছে।
• ২০২২ সালে লং মার্চ-৫বি রকেটের টুকরো পালাওয়ান ও মিনদোরো উপকূলে ভেসে আসে—যা টিয়ানগং মহাকাশকেন্দ্রের মডিউল তুলতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এতে দেশটির মহাকাশ সংস্থা জাহাজ ও উড়োজাহাজ চলাচলে ঝুঁকির কথা সতর্ক করেছিল।
• চলতি আগস্টেও চীনের গুওওয়াং ইন্টারনেট স্যাটেলাইট বহনকারী লং মার্চ-১২ রকেটের ধ্বংসাবশেষ একই অঞ্চলের নিকটে পড়ে। যদিও কেউ আহত হয়নি, ম্যানিলা আবারও এ ঘটনাকে নিন্দা জানায় এবং মানুষের জীবন, জাহাজ ও উড়োজাহাজের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা তোলে।

ব্যাকআপ থেকে ‘দূর পার্শ্ব’—নকশায় বড় রূপান্তর
চাং’ই-৬ মূলত চাং’ই-৫-এর ব্যাকআপ যান ছিল। ২০২০ সালের মিশন সফল হওয়ার পর ব্যাকআপ যানে ব্যাপক রূপান্তর এনে তাকে আরও জটিল লক্ষ্য—চাঁদের দূর পার্শ্বে অবতরণ ও নমুনা সংগ্রহ—এর উপযোগী করা হয়।
• প্রতিক্রম কক্ষপথ: অবতরণস্থলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে মহাকাশযানকে চাঁদের ঘূর্ণনের বিপরীতে প্রতিক্রম কক্ষপথে যেতে হয়। এতে যাত্রাপথ দীর্ঘ হয়ে ২৩ দিনের বদলে প্রায় ৫৩ দিন লাগে।
• একাধিক লঞ্চ উইন্ডো: এত দীর্ঘ যাত্রায় ক্ষুদ্রতম সময়গত ভুলও বড় বিচ্যুতি ডেকে আনতে পারে। তাই নির্দিষ্ট একটিমাত্র পথের ওপর নির্ভর না করে একাধিক উৎক্ষেপণ জানালা ও ট্রাজেক্টরি প্রস্তুত রাখা হয়, যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী পথ সামান্য বদলানো যায়।
• ত্রুটির সামান্য সহনশীলতা: দূর পার্শ্বে যাওয়ার রুটে ভুলের সুযোগ অত্যন্ত কম। উৎক্ষেপণের শুরুতেই সামান্য ‘স্লিপ’ হলেও নির্দিষ্ট অবতরণস্থলে পৌঁছানো ব্যাহত হতে পারতো—তাই পথ-সময় মিলিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হয়।

পৃথিবীতে ফেরা—আরও এক সূক্ষ্ম সমন্বয়
ফেরার পথে আগের নির্ধারিত রি-এন্ট্রি ট্রাজেক্টরি বিশ্লেষণে দেখা যায়, তা পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশের আকাশসীমার গা ঘেঁষে যাবে। কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা এড়াতে রি-এন্ট্রি অ্যাঙ্গেল মাত্র ০.২ ডিগ্রি বদলে দেওয়া হয়—খুব ক্ষুদ্র এই পরিবর্তনই যানটিকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনে এবং সীমিত আকাশসীমা এড়াতে সহায়তা করে।

বৈজ্ঞানিক অর্জন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
চাং’ই-৬ মিশন চাঁদের দূর পার্শ্ব থেকে প্রায় ২ কেজি (৪ পাউন্ড ৬.৫ আউন্স) নমুনা সংগ্রহ করে এনেছে। এগুলো এখন চীনা বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করছেন। বেইজিং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও কিছু নমুনা ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—যা ভবিষ্যতের চাঁদ-সংক্রান্ত গবেষণায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।


দক্ষিণ চীন সাগরের কূটনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক আকাশ–সামুদ্রিক বিধি বিবেচনায় রেখে চাং’ই-৬ মিশনের সূক্ষ্ম কিন্তু অর্থবহ পথসংশোধন দেখায়—আধুনিক মহাকাশ অভিযানে শুধু প্রযুক্তি নয়, ভূ-রাজনীতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই সমন্বয়গুলোর কারণেই চীন ঐতিহাসিক নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন করেও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় সংঘাত এড়াতে পেরেছে।